জানুয়ারি ২৪, ২০২৩, ০২:৩১ এএম
এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) শতভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একমাত্র ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। ১৯৬২ সালে সরকারি ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণাগার হিসেবে ইডিসিএলের যাত্রা। ফার্মাসিউটিক্যালস উৎপাদন ইউনিট নামকরণ করা হয় ১৯৭৯ সালে। কোম্পানি আইনের অধীনে ১৯৮৩ সালে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) নামে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়। মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদন করে তা সাশ্রয়ী মূল্যে সরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে গড়ে তোলা হয় ইডিসিএল।
শুরুতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি সরকারের ক্রয় ও বণ্টন সংস্থা হিসেবে কাজ করত। পরবর্তী সময়ে চিকিৎসাপণ্য উৎপাদন শুরু করে ইডিসিএল। বর্তমানে জনগণের চাহিদা অনুযায়ী সরকারকে ওষুধ সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি। ওষুধ রপ্তানি করছে বিদেশেও। শুরু থেকে অদ্যাবধি প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত ওষুধ সারা দেশের সরকারি হাসপাতাল, সিভিল সার্জন অফিস, সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ছাড়াও জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) মতো অলাভজনক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হচ্ছে।
৬০ বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠানটি হারায়নি তার জৌলুস। বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের হাত ধরে ইডিসিএল হয়ে উঠেছে। বিশ্বমানের বৃহত্তর উৎপাদন প্রতিষ্ঠানে। ইডিসিএল সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের চাহিদার ৮০ শতাংশ ও কমিউনিটি ক্লিনিকের চাহিদা শতভাগ ওষুধ সরবরাহ করছে। মোট উৎপাদনের ৭০ শতাংশ ওষুধ ইডিসিএল উৎপাদন করছে। অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ ওষুধ চাহিদা ও প্রয়োজন অনুসারে ইডিসিএলের কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স এবং উৎপাদন বিভাগের কারিগরি দক্ষ ব্যক্তিদের সরাসরি তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে সব ধরনের গুণগত মান বজায় রেখে টোল ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের মাধ্যমে উৎপাদন করা হয়।
এসেনসিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেডকে (ইডিসিএল) অযুত সম্ভাবনার প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করেছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির জগলুল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা আর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জাহিদ মালেকের তত্ত্বাবধায়নে কাজ করে যাচ্ছেন নিরবচ্ছিন্নভাবে। লসের প্রতিষ্ঠানে এখন আছে এফডিআর। শৃঙ্খলায় এনেছেন প্রতিষ্ঠানকে। অতিরিক্ত ব্যয় কমিয়ে এনেছেন। কাজের পরিধি বৃদ্ধিতে দিয়েছেন নজর। শ্রমিকদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষায় রেখেছেন অগ্রণী ভূমিকা। দাতা সংস্থার সঙ্গেও ইতিবাচক সম্পর্ক স্থাপনে ভূমিকা রেখেছেন। শ্রমিকদের জন্য ইডিসিএলে চিকিৎসক ও তার সহকারী নিয়োগ দিয়েছেন।
তার সম্পাদিত নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে এক আলাপচারিতায় তিনি আমার সংবাদকে জানিয়েছিলেন, আমার প্রথম কাজ ছিল প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা আনা। কারণ, বেশকিছু সেক্টরে শৃঙ্খলা ছিল না। সেসব সেক্টরকে শৃঙ্খলায় নিয়ে আসি এবং অহেতুক খরচ কমিয়ে আনি। কিছু টাকা প্রতিষ্ঠানের নামে এফডিআরও করেছি।
উদ্যোগ বাস্তবায়নে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলে কিভাবে সামলান? এমন এক সম্পূরক প্রশ্নে এই পরিবর্তনের কাণ্ডারি বলেন, ম্যানেজমেন্ট মানে ম্যানেজ করা। ম্যানেজমেন্ট ইজ নট অর্ডার। যদি কোনো কর্মকর্তার বেসিক চরিত্রই দেখা যায় অন্য রকম, সেটাকে অর্ডার দিয়ে ঠিক করা যাবে না। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে ঠিক করতে হবে। কারণ, এ ধরনের কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা সাধারণত উগ্র স্বভাবের হয়ে থাকেন। তাকে অর্ডার দিলে তিনি আরও উগ্র হয়ে যাবেন। তাকে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তার খারাপ কর্মগুলোর বিষয়ে বলতে হবে।
এদিকে ইডিসিএল সম্পর্কে সম্প্রতি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছিলেন, বেসরকারি ওষুধ কোম্পানিগুলো যাতে একচেটিয়া বা দাম বাড়িয়ে ওষুধ বিক্রি করতে না পারে, সেজন্য সরকার এসেনসিয়াল ড্রাগস প্রতিষ্ঠা করে। বিশেষ করে দেশের বাজারে বেসরকারি কোম্পানিগুলো ওষুধের দাম নিয়ে যেন কারসাজি করতে না পারে সেজন্য এ কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
ইডিসিএলের তথ্যমতে, বর্তমানে ঢাকাসহ সারা দেশে ইডিসিএলের ছয়টি প্লান্ট ও প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ও বগুড়ার প্লান্টে ওষুধ উৎপাদন করা হয়। ১৯৮৩ সালে ঢাকায়, ১৯৮৫ সালে বগুড়া, ২০১০ সালে খুলনা ও টাঙ্গাইলের মধুপুর, ২০১১ সালে গোপালগঞ্জ এবং সর্বশেষ ২০১৩ সালে বগুড়ায় আরও একটি প্রকল্প চালু করা হয়। ২০১৬ সালের বন্যার পর পানি বিশুদ্ধ করার ট্যাবলেট উৎপাদন শুরু করে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ৯৭ জেনেরিকের প্রায় ১৫০ ওষুধ উৎপাদন করছে।
ইডিসিএল জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি দেশীয় ও বৈদেশিক কাঁচামাল এবং মোড়কসামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদন করে। সরকারের চাহিদা অনুযায়ী অত্যাবশ্যকীয় ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরি করে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য রাজধানীর তেজগাঁওয়ের কারখানাটি মানিকগঞ্জে স্থানান্তর করার কাজ শুরু হয়েছে। ২০২৬ সাল নাগাদ এটির কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মানিকগঞ্জে পাঁচটি নতুন ইউনিট চালু করা হবে। এর মধ্যে ট্যাবলেট, লাইফিলাইজড পাউডার, লিকুইড, ক্যাপসুল ও ড্রাই সিরাপ এবং স্টেরাইল উৎপাদনকারী ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে নতুন প্রকল্পটিতে।
এছাড়া ইনজেকশন-জাতীয় ওষুধ প্রস্তুত করে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সরকারকে সহযোগিতা করা ও বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করা যাবে। দেশে ১৩টি রোগের জন্য বিভিন্ন বয়সি মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হয় ১১টি টিকা। ইউনিসেফ ও গ্যাভির মাধ্যমে এসব টিকা দেশে আমদানি করা হয়। তবে দেশেই সব ধরনের টিকা তৈরি করতে চায় সরকার। সে লক্ষ্যে গোপালগঞ্জে উন্নতমানের গবেষণাগার ও টিকা তৈরির কারখানা করা হচ্ছে। ইডিসিএলের অন্যতম ইউনিট হিসেবে খুলনা এসেনসিয়াল ল্যাটেক্স প্রকল্প (কেইএলপি) নামে খুলনায় একটি কনডম কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। খুলনার প্রকল্পের অধীনে টাঙ্গাইলের মধুপুরে একটি ল্যাটেক্স প্রসেসিং প্লান্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে উন্নতমানের রাবারের কষ সংগ্রহের পর তা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে খুলনা কেইএলপিতে সরবরাহ করা হয়। গোপালগঞ্জে ইডিসিএলের গোপালগঞ্জ প্লান্টে জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ি ও ইনজেকশন উৎপাদন করা হয়। এটির একটি ইউনিটে আইভি ফ্লুইডও উৎপাদন করা হয়। এ প্লান্টে সব ধরনের টিকা উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।