জানুয়ারি ২৫, ২০২৩, ০২:১৩ এএম
- অর্থসংকটে ইভিএম বাতিলে আসবে বিরোধীদের বিশেষ বার্তা
- ঢাকায় তিন লাখ লোকের উপস্থিতির নির্দেশনা প্রস্তুতি বৈঠকে
- সাত স্পটে জোট ও সমমনাদের কর্মসূচি
- লন্ডন থেকে আসা ছকে ঢাকাসহ সারা দেশে অবস্থান
গণআন্দোলনে সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করা হবে —ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু
আজ রাজধানীতে আবারও বড় শোডাউনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিএনপিসহ ৫৫টি রাজনৈতিক দল। ঘোষণা করা হবে নতুন কর্মসূচি। অর্থ সংকটে ইভিএম বাতিলে সরকারের দুর্বলতায় আসবে বিরোধীদের বিশেষ বার্তা। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলা ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান অবস্থা ইভিএম বাতিলের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এ নিয়ে তারা খুশি নয়; এতে সরকারের কৌশলও দেখা হচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি ও জোট ভোটে যাবে না এবং সরকারের কোনো ফাঁদে পা দেবে না। এ নিয়ে আজ দল ও জোটের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়া হবে। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে সমাবেশে বড় শোডাউন হবে। তিন লাখ লোকের উপস্থিতিতির টার্গেট নেয়া হয়েছে আজ।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদ এবং ১০ দফা দাবি আদায়ে যুগপৎ কর্মসূচির এ সমাবেশে দলটির হাইকমান্ড ব্যাপক লোকসমাগমের নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে ১০ দফা দাবিতে সরকারবিরোধী দলগুলো গত ২৪ ডিসেম্বর ৯ বিভাগীয় শহরে, ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি গণমিছিল এবং ১১ জানুয়ারি অবস্থান কর্মসূচি, ১৬ জানুয়ারি মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করে। ধাপে ধাপে আসে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। আজ ছয়টি জোট ও দুটি দল মিলিয়ে ৫৫টি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন রাজধানীর আটটি স্থানে এ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে। এর মধ্যে বিএনপি ছাড়াও সাতদলীয় গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, ১২ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, চার দলের জোট গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণফোরামের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পিপলস পার্টি, ১৫ সংগঠন সমন্বয়ে পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট এবং এলডিপি নেতাকর্মীরা সমাবেশ পালনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে দলটির সূত্রের ভাষ্য।
নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, সমাবেশ সফলে গত কদিন ধরে ঘরোয়া বৈঠক ছাড়াও প্রস্তুতি সভা, কর্মিসভা করেছে বিএনপি। মহানগরের প্রত্যেক ওয়ার্ড, থানা অঙ্গসংগঠনের প্রত্যেক শাখা থেকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আজ সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বড় কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য দাবি আদায়ে কোথাও বসে পড়া, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে যাত্রা এবং অবরোধের চিন্তাও রাখা হয়েছে। এখন যত কর্মসূচিও পালন হচ্ছে, সবকিছু একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাটে হচ্ছে। তবে ভোটের সময় আরও কাছাকাছি এলে আন্দোলনের কৌশলে আসবে পরিবর্তন।
ঢাকাসহ সারা দেশে লন্ডন থেকে আসা ছকে অবস্থান:
লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেয়া নির্দেশিত ছকে কর্মসূচি সাজিয়েছে বিএনপি। রাজধানীসহ অন্যান্য মহানগর ও জেলায় তা পালিত হবে। `বাকশাল` প্রতিষ্ঠার দিনটিকে `গণতন্ত্র হত্যা দিবস` আখ্যা দিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের চতুর্থ এ কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সিরিজ বৈঠক শেষ করেছে বিএনপি। ঢাকায় বিএনপি ঘোষিত সমাবেশ নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আজ বেলা ২টায় শুরু হবে। এ সমাবেশে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি লোকসমাগমের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা প্রস্তুতি শেষ করেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। মহানগর ও বিভাগীয় সদরে সমাবেশ সফল করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস ও বেগম সেলিমা রহমান থাকবেন। বরিশালে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চট্টগ্রামে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রাজশাহীতে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, গাজীপুরে ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, কুমিল্লায় মোহাম্মদ শাহজাহান, সিলেটে ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ময়মনসিংহে শামসুজ্জামান দুদু, রংপুরে অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, ফরিদপুরে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, খুলনায় নিতাই রায় চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জে দলের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা সব কর্মসূচি সমন্বয় করবেন এবং সুবিধামতো ইউনিটের কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ঢাকার সাত স্পটে জোট ও সমমনাদের কর্মসূচি:
গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রত্যেক দলের নেতাকর্মীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ১২ দলীয় জোটের উদ্যোগে বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে আজ বেলা ৩টায় সমাবেশ হবে। ১২ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের উদ্যোগে পল্টনের আল-রাজী কমপ্লেক্সের সামনে বেলা ১১টায় এ সমাবেশ হবে। গণফোরামের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পিপলস পার্টির নতুন জোট রাজধানীর আরামবাগে নটর ডেম কলেজের সামনে সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে। বেলা ৩টায় এ সমাবেশ হবে। লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) উদ্যোগে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বেলা আড়াইটায় সমাবেশ হবে। চার দলীয় জোট গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বেলা ১১টায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এর বাইরে ১৫ সংগঠনের সমন্বয়ে পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে পল্টন মোড়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি স্থায়ী কমটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু আমার সংবাদকে বলেন, বিএনপির কর্মসূচি এখন আর বিএনপির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটা এখন দেশের সব মানুষের কর্মসূচিতে পরিণত হচ্ছে। সাধারণ মানুষের একটি বড় অংশ বিএনপির সমাবেশে উপস্থিত থেকে এই সরকারের প্রতি অনাস্থা জানাচ্ছে। আগের সব কর্মসূচিতে আমরা দেশের সাধারণ মানুষকে দেখেছি। আশা করছি আমাদের আজকের কিংবা আগামীতে সব কর্মসূচিতেও সাধারণ মানুষ থাকবে। এখন বলা যায়, এই সরকার আর বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। গণআন্দোলনে এ সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করা হবে।