Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

ভাসমান ব্যবসার আড়ালে মাদক বিক্রি

নুর মোহাম্মদ মিঠু

জানুয়ারি ২৫, ২০২৩, ০২:২৫ এএম


ভাসমান ব্যবসার আড়ালে মাদক বিক্রি
  • গাঁজা ও ইয়াবার বিক্রি বেশি, ক্রেতা রিকশা ও বাসচালক-হেলপার

নেপথ্যে অসাধু রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের প্রশ্রয় -বলছেন ব্যবসায়ীরা
পুলিশের ছত্রছায়ায় এমনটা হওয়ার সুযোগ নেই -ডিএমপি

মাদক কারবার যেন ঠেকানোই মুশকিল। দিন দিন নতুন কৌশল অবলম্বন করছেন মাদককারবারিরা। রাজধানী ঢাকায় এখন মাদক কারবার চলছে সড়ক কিংবা ফুটপাতে। প্রকাশ্যে দিবালোকে এ কারবার চললেও বুঝা মুশকিল। আবার যাদের বুঝার কথা তাদেরও ইন্ধন রয়েছে এ কারবারে- এমন অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে।

জানা গেছে, দৈনিক হারে চাঁদা দিয়েই ভাসমান ব্যবসার আড়ালে মাদক বেচাকেনার হাট বসেছে সড়ক-ফুটপাতে।

পুলিশ বলছে, মাদককারবারিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। ভাসমান ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে মাদক বিক্রির সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে তথ্যটি নতুন। এছাড়া পুলিশের ছত্রছায়ায় বা ইন্ধনে মাদক কারবারের সুযোগ নেই।

সম্প্রতি ঢাকার একাধিক এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাসমান ব্যবসায়ীরা গাঁজা, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক বিক্রি করছেন। তবে বাহ্যিকভাবে দেখে বুঝার উপায় নেই। আবার ভাসমান ব্যবসায়ীদের সবাই সরাসরি এই কারবারে জড়িত নন। অনেকেই কমিশনের বিনিময়ে মূল মাদককারবারিদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করছেন মূলহোতারা।

জানা গেছে, এসব ব্যবসায়ীদের কেউ ডিম বিক্রেতা, কেউ সবজি বিক্রেতা, কেউ ফল বিক্রেতা, কেউ কাপড় বিক্রেতা। কোথাও কোথাও চায়ের দোকান থেকেও চলছে এই কারবার।

ভাসমান ব্যবসায়ীদের দিয়ে মাদক বিক্রির কাজ করছে কারা- এমন প্রশ্নে একাধিক ভাসমান ব্যবসায়ী নাম- পরিচয় ও এলাকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমার সংবাদকে জানান, পুলিশকে ম্যানেজ করেই এ ব্যবসা চলছে। এর জন্য চাঁদা দিতে হয় তাদের। মূল ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী। তবে কারো নাম বলতে নারাজ ব্যবসায়ীরা। আবার কিছু কিছু ব্যবসায়ী নিজেই এ ব্যবসা করছেন।

জানতে চাইলে মতিঝিল সিটি সেন্টার এলাকার এক ডিম বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমার সংবাদকে বলেন, তিনি ডিম বিক্রি করে যা পান তাতে পরিবার চালানো কঠিন। তাই পুলিশি ভয় থাকলেও গোপনে মাদক বিক্রি করছেন তিনি। 

তবে তিনি গাঁজা ব্যতীত অন্য কোনো মাদক বিক্রি করেন না বলে জানান। তিনি বলেন, মতিঝিলে শুধু তিনি একাই নন, ভাসমান ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কেউ স্বেচ্ছায়, কেউ আবার পুলিশের অভয় এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের প্রশ্রয়ে করছেন।

মতিঝিল থানায় নতুন যোগদান করা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান, মাদককারবারিদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ সবসময়ই কাজ করছে। এটা নিয়মিত কার্যক্রমের মধ্যেই পড়ে।

তিনি বলেন, ভাসমান ব্যবসায়ীদের বিষয়ে যে তথ্য আপনি দিলেন সেটা নতুন। আমরা বিষয়টি দেখব। সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গুলিস্তানের অসংখ্য ভাসমান ব্যবসায়ীও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ভ্যানে করে পেয়ারা বিক্রি করেন চাঁদপুরের জসিম (ছদ্মনাম)। তিনিও পেয়ারার পাশাপাশি গাঁজা বিক্রি করেন।

তিনি জানান, প্রতিদিন কিছু রিকশাচালক, বাসের চালক-হেলপারদের কাছে তিনি গাঁজা বিক্রি করেন। তবে তিনি এ ব্যবসা আর করবেন না বলেও জানিয়েছেন। শুধু গাঁজাই নয়, ভাসমান ব্যবসায়ীদের অনেকে ইয়াবাও বিক্রি করেন। ভাসমান ব্যবসায়ীদের ইয়াবা বিক্রির স্পটগুলো রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, ধানমন্ডি, বাড্ডা নতুন বাজার, রামপুরা, ফার্মগেট, মিরপুর এলাকা। বিশেষ করে ঢাকার ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে গাঁজা ছাড়াও ইয়াবার ব্যবসা চলছে হরদমই।

এসব বিষয়ে জানে কি-না ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ— এমন প্রশ্নে ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) কে এন রায় নিয়তি আমার সংবাদকে বলেন, এমনটা হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ সবসময় সোচ্চার। এরপরও মাদকের এমন কারবার যদি ডিএমপির কোনো এলাকায় হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট থানাকে অবহিত করা যেতে পারে। 

তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পুলিশ। এছাড়া পুলিশের মদতে কিংবা ছত্রছায়ায় এমনটা হওয়ার সুযোগই নেই। এসব বিষয়ে সব থানাকেও ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেবে ডিএমপি।

Link copied!