Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪,

অস্থির চিনির বাজার

রেদওয়ানুল হক

জানুয়ারি ২৭, ২০২৩, ০১:৪৬ এএম


অস্থির চিনির বাজার

১ ফেব্রুয়ারির পর কার্যকর না হলে অভিযান -এ এইচ এম সফিকুজ্জামান ডিজি, ভোক্তা অধিকার

  • ছয় মাসে দাম বেড়েছে ৪৬ শতাংশ
  • খোলা চিনি ফের পাঁচ টাকা বেড়ে হলো ১০৭ টাকা
  • কাগুজে দাম বাজারে নেই বিক্রি ১২০ টাকায়
  • দাম না বাড়ালে বাজারে চিনি পাওয়া যাবে না –বাণিজ্যমন্ত্রী

চিনির দাম নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে যা চলছে তাতে দেশের বাজার ব্যবস্থার করুণ চিত্র স্পষ্ট। আমদানি পণ্যে হাহাকার চলছে এটি ঠিক তবে চিনির মতো এতটা অস্থিরতা অন্য পণ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনাই মানছেন না চিনি ব্যবসায়ীরা। এলসি জটিলতা, গ্যাস সমস্যা ও ভ্যাট ইস্যু— একটির পর একটি সমস্যা হাজির করে দাম বৃদ্ধি করে চলেছে। পুরোনো কৌশল সরবরাহ সংকট তৈরি করে কার্যসিদ্ধি করছে চক্রটি। সব সমস্যাই অনেকটা সমাধান হয়েছে, এখন অস্থিরতার অবসান হবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। ফের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে আসন্ন রমজানে চিনির দামে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ভোক্তা অধিকার বলছে, এবার দাম কার্যকর না হলেই চলবে অভিযান।

গতকাল খোলা চিনির দাম ফের পাঁচ টাকা ও প্যাকেটজাত কেজিতে চার টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করেছেন চিনি ব্যবসায়ীরা। নতুন দাম আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। সে হিসাবে বর্ধিত দামসহ এক কেজি খোলা চিনির দাম হওয়ার কথা ১০৭ টাকা। বর্তমানে নির্ধারিত দাম ১০২ টাকা। কিন্তু বাজারে এখনই ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য মতে, গত ২৬ জুন এক কেজি চিনির সর্বোচ্চ বাজার দর ছিল ৮২ টাকা। সংস্থাটির প্রকাশিত গতকালের বাজার দর অনুযায়ী এক কেজি চিনির সর্বোচ্চ দাম ১২০ টাকা। সে হিসাবে ছয় মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম বেড়েছে, কেজিতে ৩৮ টাকা বা ৪৬ শতাংশ।

বর্ধিত দামে চিনি বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আমার সংবাদকে বলেন, ‍‍`অনেক দিন ধরেই বাজারে ১০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে। কারণ, সরবরাহে সমস্যা ছিল। আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছি। প্রথমে গ্যাস সমস্যা ছিল, সেটি অনেকটা সমাধান হয়েছে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এলসি সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমাদের টার্গেট, রমজান সামনে রেখে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা। এতে দাম স্থিতিশীল থাকবে। ব্যবসায়ীরা যেহেতু নিজেরাই একটি দাম নির্ধারণ করেছে, তাই আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই নজরদারি বাড়ানো হবে। যদি এরপরও বেশি দামে বিক্রি হয় তখন অভিযান চালানো হবে।

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে পরিবহন খরচ বৃদ্ধি ও গ্যাস সংকটের কারণে গত কয়েক মাস ধরে অস্থির চিনির বাজার। তাই পবিত্র মাহে রমজানকে সামনে রেখে বাজার স্থিতিশীল রাখতেই চিনির দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এসেছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, দাম বাড়ানো না হলে বাজারে চিনি পাওয়া যাবে না। রাজধানীর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) এক অনুষ্ঠান শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, দাম তখনই বাড়ানো হয় যখন প্রয়োজন হয়। আমাদের ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড কমিশন আছে তারা এগুলো হিসাব করে করে। যদি এটি বাড়ানো না হতো তাহলে ফলাফল হবে কি? বাজারে চিনি পাওয়াই যাবে না। সে সব বিবেচনা করে তারা দাম বাড়িয়েছে।

বাংলাদেশের চিনির কলগুলো উৎপাদন বন্ধ করে দেয়ায় দামে প্রভাব পড়েছে কি-না, প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‍‍`আমাদের ২০ লাখ টন চিনি দরকার। সেখানে দেশে ৫০ হাজার টনও উৎপাদ হয় না। এটি আসলে কোনো প্রভাব বিস্তার করে না। আমাদের নির্ভর করতে হয় আমদানির ওপরে। বিশ্ববাজারে চিনির দাম বেড়েছে। তাই সমস্যা হয়েছে। পাশাপাশি আমরা চেষ্টা করছি যাতে শুল্ক কমিয়ে দেয়া হয়।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হঠাৎ করে চিনির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানায় পণ্যটির পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। তারা প্যাকেটজাত চিনি প্রতি কেজির দাম চার টাকা বাড়িয়ে ১১২ টাকা এবং খোলা চিনি প্রতি কেজির দাম পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ১০৭ টাকা নির্ধারণ করেছে। নতুন এই দাম ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। দাম বাড়ানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেন সংগঠনের নেতারা।

সর্বশেষ গত বছরের ১৭ নভেম্বর প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনির দাম ১৩ টাকা বাড়িয়ে ১০৮ টাকা করা হয়। আগে দাম ছিল ৯৫ টাকা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশে বছরে চিনির চাহিদা ১৮ থেকে ২০ লাখ টন। এর মধ্যে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত মিলগুলোতে ৩০ হাজার টন চিনি উৎপাদিত হয়। বাকি চিনি আমদানি করতে হয়।

Link copied!