বেলাল হোসেন ও মেহেদী হাসান মাসুদ
ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৩, ০২:২৫ পিএম
বেলাল হোসেন ও মেহেদী হাসান মাসুদ
ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৩, ০২:২৫ পিএম
সরকার বারবার মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার কথা বললেও কাগজে-কলমেই থেকে যাচ্ছে এ নির্দেশনা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে মাঝে মাঝে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পরিপত্র, নির্দেশনা জারি করলেও বাস্তবে শিক্ষার মান তো দূরে থাক, বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক প্রধান শিক্ষকের পদই পূরণ করতে পারছে না। বদলি, অবসর, মৃত্যু, পদত্যাগ ও মামলার কারণে পদগুলো শূন্য হয়েছে। দেশের প্রায় অর্ধেক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে বছরের পর বছর। এতে শিশুদের শ্রেণি পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তবে অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, খুব শিগগিরই পদোন্নতির জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে।
প্রধান শিক্ষকের পদগুলোর ৬৫ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৩৫ ভাগ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণের বিধান রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সরাসরি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ হচ্ছে না। আবার সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেয়াও বন্ধ রয়েছে। বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের কাঁধেই ‘ভারপ্রাপ্তের’ ভার পড়ে। দায়িত্ব পালনকালে ভারপ্রাপ্তরা তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধাও পান না। বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অথবা চলতি দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষকদেরই দৌড়-ঝাঁপ করতে হয় উপজেলায়। সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে চাহিত তথ্য দিতে রীতিমতো ব্যস্ত থাকতে হয় তাদের। এছাড়াও উপবৃত্তি, শিশু জরিপসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহে বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষককেই সময় দিতে হয়। এতে করে বিদ্যালয়ে পাঠদানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। শিক্ষকদের অভিযোগ, শহরের বিদ্যালয়গুলোতে শূন্যপদ পূরণ হলেও গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোর পদগুলো শূন্যই থেকে যাচ্ছে। এতে শহরের তুলনায় গ্রামের শিশুরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন শিক্ষক নেতারা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ২৯ হাজার ৮৫৮টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। দেশের সর্বাধিকসংখ্যক প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে চট্টগ্রাম জেলায়। এ জেলায় দুই হাজার ২৬৯ জন
প্রধান শিক্ষক পদের বিপরীতে এক হাজার ৪৪ জন প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। সব থেকে কমসংখ্যক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে মেহেরপুর জেলায়। এ জেলায় ৩০৭ প্রধান শিক্ষক পদের বিপরীতে ১১৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই কোনো প্রধান শিক্ষক। সব থেকে বেশি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রয়েছেন মানিকগঞ্জ জেলায়। জেলাটিতে ৬৪৮ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কর্মরত মাত্র ২৮৫ জন প্রধান শিক্ষক। এর কাছাকাছি রয়েছে মুন্সীগঞ্জ জেলায়। এ জেলায় ৬১০ বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩১৫টি চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে। শুধু এ দুটি জেলায়ই নয়, অর্ধেকের বেশি পদ শূন্য রয়েছে মানিকগঞ্জ, লালমনিরহাট, বরগুনা, শরীয়তপুর, নারায়ণগঞ্জ, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, সুনামগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, শেরপুর, টাঙ্গাইল, বান্দরবান, নরসিংদী ও কুমিল্লা জেলায়। এর বিপরীত অবস্থা রাজধানীতে। এখানে ৯৫১ প্রতিষ্ঠানের ৬০৭টি বিদ্যালয়েই রয়েছেন প্রধান শিক্ষক। এছাড়াও রংপুর, সাতক্ষীরা, ঠাকুরাঁও, মাগুরা, মেহেরপুর, রাজবাড়ী, খুলনা, হবিগঞ্জ, রাজশাহী ও কুষ্টিয়া জেলায় ৬০ শতাংশ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক রয়েছেন। নাম না প্রকাশ করার শর্তে বালিয়াকান্দি উপজেলার একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, আমার ওপর অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ঠিকমতো বাচ্চাদের ক্লাস নিতে পারি না। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজ পরিপূর্ণভাবে করতে গেলে আমাদের শিক্ষকস্বল্পতায় ভুগতে হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত আমার সংবাদকে বলেন, আমরা প্রধান শিক্ষকের গ্রেডেশন তালিকা করছি। পদোন্নতির জন্য তালিকা এ সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো শুরু করব। প্রত্যেক জায়গায় তো চলতি দায়িত্ব আছে। কিছু মামলা আছে; সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। ডিজি বলেন, সরাসরি নিয়োগের জন্যও প্রস্তাব পাঠানো হবে। এটা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সারা দেশে বিশাল কার্যক্রম। এ জন্য একটু আস্তে আস্তে কাজ করা হচ্ছে যেন ভুল না হয়। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারব; এতে করে সমস্যারও সমাধান হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, আমরা মূলত পদোন্নতির বিষয়ে কাজ শুরু করেছি। ধাপে ধাপে এগুলো আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। নতুন নিয়োগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমরা আরও খোঁজ নিচ্ছি কোথায় কতটি পদ খালি আছে; তারপর নতুন নিয়োগের জন্য চিঠি পাঠাব।