ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩, ০১:৫৩ পিএম
- আওয়ামী লীগ ও জাপায় উচ্ছ্বাস কোনো আগ্রহ নেই বিএনপির
- এলডিপি বলছে আওয়ামী লীগে দলীয়করণ পরিপূর্ণ হয়েছে
- বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ভাষ্য ক্ষমতাসীন দলে গণতন্ত্র নেই
- বাম গণতান্ত্রিক জোট বলছে, সবকিছুই অস্পষ্ট ছিল
- নাগরিক ঐক্যের দাবি নির্বাচন ব্যবস্থা একেবারে উঠে গেছে
মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চমক। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাকেই বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলীয় নেত্রীর সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগ ও জোটসঙ্গীদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার। গতকাল মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। ছাত্রনেতা, বিচারক, দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান থেকে তিনি আজ দেশের প্রধান ব্যক্তি। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি আনন্দিত। বিএনপিতে এ নিয়ে আগ্রহ নেই, কোনো মন্তব্য করতেও চাচ্ছেন না দলটির শীর্ষ নেতারা। এলডিপি বলছে— রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মাধ্যমে দলীয়করণ পরিপূর্ণ হয়েছে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ভাষ্য— ক্ষমতাসীন দলে গণতন্ত্র একেবারে অনুপস্থিত হয়ে গেছে। বাম গণতান্ত্রিক জোট মনে করছে— আওয়ামী লীগ সব কিছু অস্পষ্ট রেখে একটি সিদ্ধান্ত নিলো, যেখানে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর এ বিষয়ে আগে জানার অধিকার ছিল। নাগরিক ঐক্যের দাবি— রাষ্ট্রপতি মনোনয়নের মধ্য দিয়ে সরকার দেশ থেকে নির্বাচন ব্যবস্থা উঠিয়ে দিয়েছে।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের আমার সংবাদকে বলেন, ‘সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর বিষয়ে আওয়ামী লীগ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে আমি ও জাতীয় পার্টি আনন্দিত। তিনি একজন ন্যায়পরায়ণ মানুষ। আর তার বিষয়ে যেসব রাজনৈতিক দল প্রশ্ন তুলছে তারা হয়তো সংবিধান দেখেনি। অবশ্যই সংবিধানে রয়েছে— সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া দল রাষ্ট্রপতি নির্বাচন
করতে পারে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত নেয়ার সব ধরনের রাইট রয়েছে।’ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ আমার সংবাদকে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ ছাত্রনেতা থেকে উঠে আসা পাকাপোক্ত এক ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতির জন্য নির্বাচন করেছে। এতে জনগণের কিছু আসে-যায় না। আওয়ামী লীগের সব কিছুই পূরণ হয়েছে। আর আমরা এত ইন্টারেস্টেড নই। এতে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। আওয়ামী লীগ সব ক্ষেত্রে দলীয়করণ পরিপূর্ণ করেছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মাধ্যমে সেটি একেবারে পরিপূর্ণতা পেয়েছে। আওয়ামী লীগের অধীনে কখনো অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না— সর্বশেষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মাধ্যমে সেটি আবার প্রমাণিত হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু আমার সংবাদকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তাদের নিজেদের ইচ্ছামতো রাষ্ট্রপতির নাম ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে আমি এখনো রাজনৈতিকভাবে মন্তব্য করতে পারব না। আমরা এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই আগ্রহী নই। আমার দল আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে খুব দ্রুতই মন্তব্য দেবে। আপাতত এ বিষয়ে এখনি আর বেশি কিছু বলার আগ্রহ নেই।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক আমার সংবাদকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমি মনে করি এটি দেউলিয়া সিদ্ধান্ত। কারণ তারা রাষ্ট্রপতি পদে অভিজ্ঞ ও রাজনীতিতে পোড় খাওয়া কাউকে মনোনীত করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যবাহী দল হিসেবে বিশেষত্ব হারিয়েছে এবার। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দলটির মন্ত্রী-এমপিদেরও মতামত দেয়ার সুযোগ নেই। সবাই প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের কাছে অসহায়। শেখ হাসিনার একক সিদ্ধান্তেই যদি রাষ্ট্রপতি মনোনীত হয়ে যায় তাহলে ক্ষমতাসীন দলে গণতন্ত্রের সুযোগ কোথায়? এ কারণে বলা চলে আওয়ামী লীগে গণতন্ত্র একেবারে অনুপস্থিত।’
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমরা অবশ্যই জানি রাষ্ট্রপতি দেশের প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। সেখানে দেশের জনগণ অবশ্যই জানার অধিকার রয়েছে, কে রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন। কিন্তু সে বিষয়টি একেবারে অনুপস্থিত ছিল। অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সাথেও আলোচনা করা দরকার ছিল। সব কিছু অস্পষ্ট রেখে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। যেখানে আওয়ামী লীগের মধ্যে পরিষ্কারভাবে দেখা গেছে গণতন্ত্র ছিল না।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না আমার সংবাদকে বলেন, ‘অদ্ভুত বিষয়, দেশের রাষ্ট্রপতির নাম ঘোষণা হয়ে গেল দেশের কোনো জনগণ কিংবা কোনো বিরোধী রাজনৈতিক দল বিষয়টি জানতে পারেনি। এটি খুবই দুঃখজনক। এক ব্যক্তির ক্ষমতা ও ইচ্ছাকে পাকাপোক্ত করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিষয়টি উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়ে গেছে— দেশে কোনো ধরনের নির্বাচন ব্যবস্থা এ সরকার আর রাখে না।’