Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫,

চলতি বছরই ব্যালটে ভোট

আবদুর রহিম

ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৩, ১০:৫২ এএম


চলতি বছরই ব্যালটে ভোট

ইভিএম চ্যালেঞ্জে ধাক্কা খেয়ে ব্যালটেই দ্বাদশ সংসদের ভোটের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন-ইসি। যেকোনো পরিস্থিতে সময়ক্ষেপণ করবে না স্বাধীন এ সংস্থাটি। চলতি বছরের নভেম্বরের শুরুতে তফসিল দিয়ে ডিসেম্বরের শেষ দিকে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ২৫০ আসনে ব্যালটেই ভোট হবে। বাকি আসনে মাঠে থাকা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম ব্যবহার করা হতে পারে। ব্যালটে ভোটের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে থাকা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স পরীক্ষা করা হয়েছে। ব্যালট বাক্সে ৩০০ আসনেই ভোটগ্রহণ সম্ভব সেই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এবার নতুন করে ব্যালট বাক্স কেনার প্রয়োজন হবে না। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আমার সংবাদকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র ধরা হয়েছে ৪৪ হাজার। ব্যালটে ভোট হলে বুথের সংখ্যা দাঁড়াবে দুই লাখ ২০ হাজার থেকে দুই লাখ ৩০ হাজার। প্রতিটি কক্ষে একটি করে এবং প্রতিটি কেন্দ্রে অতিরিক্ত একটি করে ব্যালট বাক্স দেয়া হবে। এ হিসাবে দুই লাখ ৭৫ হাজার স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের প্রয়োজন হবে। ইসির হাতে ওই সংখ্যার চেয়ে বেশি রয়েছে বলেও জানা গেছে। দেশের সব জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সমপ্রতি চিঠি দিয়ে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে তালিকাও নেয়া হয়েছে। কাগজের ব্যালটে ভোটের ক্ষেত্রে ৫০০-৬০০ জনের জন্য একটি কক্ষ ধরে পৃথক তালিকা তৈরিও সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনের ব্যালট পেপার, মনোনয়নসহ বিভিন্ন ধরনের ফরম ছাপানোর বিষয়ে সরকারি ছাপাখানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক ও পরিকল্পনা শেষ হয়েছে কয়েক মাস আগে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘসহ অনেকে কমিশনকে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে সহায়তা করতে আশ্বাস দিয়েছে। গেলো মঙ্গলবার জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সাথে বৈঠকে সুষ্ঠু নির্বাচনে যাবতীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

গেলো মাসে ১৫০ আসনে ইভিএমে বরাদ্দ বাতিল হয়ে যায়। এর মধ্যে পুরোনো দেড় লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন সংরক্ষণ নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ৪০ হাজার ইভিএমে ত্রুটি পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বছরের শুরুতে দ্বাদশ ভোটের সম্ভাবনা থাকলেও চলতি বছরেই সব কিছু শেষ করতে চায় ইসি। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান জানিয়েছেন, ব্যালটে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি অব্যাহত রয়েছে। এদিকে গত শনিবার শরীয়তপুর জেলা নির্বাচন অফিসের আয়োজনে একটি অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আনিছুর রহমান বলেছেন, বাজেট সংকটের কারণে আগামী সংসদ নির্বাচনের সব আসনে ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ অথবা আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। নভেম্বর মাসে তফসিল ঘোষণা করবে কমিশন। সরকারের কাছে বাজেট সংকটের কারণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব আসনে ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। আংশিকভাবে ইভিএমে ও বাকি আসনগুলোতে ব্যালটের মাধ্যমেই নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু নির্বাচন কমিশনে নয়, রাজনৈতিক মাঠেও ভোটের প্রস্তুতি

 

শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ একটু আগেভাগে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা জনসভায় গিয়ে প্রকাশ্যে নৌকায় ভোট দিতে নেতাকর্মীদের ওয়াদা করাচ্ছেন। বিষয়গুলো মাথায় রেখে বিএনপিও মাঠ ছেড়ে দিচ্ছেন না। ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের প্রার্থীর দক্ষতা ও যোগ্যতা যাচাই-বাছাই করে নিচ্ছে। জাতীয় ইস্যুগুলোর মাধ্যমে মাঠে থেকে কৌশলে ভোটের প্রস্তুতিও নিয়ে নিচ্ছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। ডিসেম্বরে নির্বাচনের আভাস দিয়েছে দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরাম। সেই অনুযায়ী এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতেও দলের সংসদ সদস্যদের দিকনির্দেশনা দেন দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা। এ নিয়ে সমপ্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ডিসেম্বরে নির্বাচনের আভাস পাচ্ছি।’ আগামী ডিসেম্বর মাসে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন হতে পারে এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করে নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেন তিনি। গত ১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গে যৌথসভায় তিনি বলেন, আমাদের পাঁচ বছর পূর্ণ হতে চলছে, হোপফুলি নির্বাচন কমিশনের আভাস অনুযায়ী আমাদের ডিসেম্বর মাসেই বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। নির্বাচনে সরকার কোনো পক্ষপাতিত্ব বা কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না বলেও নিশ্চয়তা দেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা করবে সরকার।

এদিকে বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে বললেও ভেতরে ভেতরে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ করে চলছে দলটি। দলের হাইকমান্ড তারেক রহমানের নির্দেশনায় রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, মাঠ থেকে প্রায় ১৩শ নেতার সিভি তারেক রহমানের দপ্তরে গেছে। এর মাধ্যমে ২৫০ আসনে প্রার্থী তালিকার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের আমলনামা বিশ্লেষণ করছেন তিনি। অতীতে ব্যবসায়ী ও সম্পদশালী ব্যক্তিরা নানা ফাঁকফোকরে দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়ে যেতেন। এবার আর সেই সুযোগ নেই। তারেক রহমানের নির্দেশে ইতোমধ্যে একটি টিম দেশের প্রায় সব জেলায় সফর করেছে। মাঠ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। প্রার্থীদের যোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে জেলায় জেলায় সুশীল ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকেও মতামত নেয়া হয়েছে। সব কিছু বিবেচনায় রেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি। দেশের প্রতিটি আসনে তিন থেকে ১০ জন পর্যন্ত প্রার্থী রয়েছেন যারা নির্বাচনে আগ্রহী। এদের মধ্যে যারা মাঠ পর্যায়ে ভূমিকা রাখতে পারবেন, আন্দোলনে  এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন তাদের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে।  জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যন অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ আমার সংবাদকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন অনেক কথা বলে সময় ব্যয় করে ফেলেছে। এখন তাদের কাজ করা উচিত। ইভিএম বা ব্যালট পেপার যেভাবেই নির্বাচন হোক, সেটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য যা করা দরকার, কমিশন এখনো তা করেনি। এখন তাদের এর জন্য জাম্প স্টার্ট করা উচিত।’ সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার আমার সংবাদকে বলেন, ‘ইভিএম আর কাগজের ব্যালট যে পদ্ধতিতেই ভোট নেয়া হোক না কেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তা সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে না। নির্বাচনকে বহুভাবে প্রভাবিত করা যায়। কারণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পক্ষপাতদুষ্ট, প্রশাসন পক্ষপাতদুষ্ট, নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট।’

Link copied!