মার্চ ৫, ২০২৩, ১১:৪৭ পিএম
- গভর্নিং বডির পরিবর্তে এনটিআরসিএর সরাসরি নিয়োগ
- অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়ায় মুক্ত হলো দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি
আগামীতে প্রতিষ্ঠানটি আরও স্বচ্ছ হবে
—মো. এনামুল কাদের খান চেয়ারম্যান, এনটিআরসিএ
দেশের ৭০ শতাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্বে রয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ-এনটিআরসিএ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষকদের তালিকা প্রণয়ন, নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন এবং নিয়োগের সুপারিশ দিতে করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি দূর করতে পেরেছে। ২০১৫ সালের আগে নিয়োগ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির ওপর নির্ভর করতে হয়েছে চাকরিপ্রার্থীদের। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে দেখা যেত দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি। স্থানীয়দের প্রভাবও এড়ানোর সুযোগ ছিল না। কিন্তু এখন চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। শূন্য আসন থাকা সাপেক্ষে গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়াও চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে আনা হয়েছে বেশ কিছু পরিবর্তন। এতে আরো ভোগান্তি কমেছে চাকরিপ্রার্থীদের। এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান বলেন, আগে চাকরিপ্রার্থীদের বিভিন্ন অভিযোগ ছিল। সেগুলোর আলোকেই আমরা কাজ করছি। আগামীতে প্রতিষ্ঠানটি আরো স্বচ্ছ হবে।’
যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষক নিয়োগের জন্য এনটিআরসিএর ১৬তম নিবন্ধন পরীক্ষা পর্যন্ত উত্তীর্ণ হয়েছে ছয় লাখ ৩৪ হাজার ১২৭ জন। বিগত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি পরিপত্রের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এন্ট্রি লেভেলের শূন্য পদে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগের জন্য এনটিআরসিএকে নির্বাচনের দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর থেকে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি পর্যন্ত নিয়োগ পেয়েছেন ৮৭ হাজারের বেশি প্রার্থী। সর্বশেষ চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে এমপিওভুক্ত পদে ৬৮ হাজার ৩৯০ জন শিক্ষকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে এনটিআরসিএ। এর মধ্যে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে ৩১ হাজার ৫০৮টি শূন্য পদ রয়েছে। মাদ্রাসা, কারিগরি ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্য পদ রয়েছে ৩৬ হাজার ৮৮২টি।
সব কটি বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের জন্য এর আগে যেসব গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল, সেগুলোর তুলনায় চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগের গণবিজ্ঞপ্তিগুলোয় একজন প্রার্থী যত খুশি তত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারতেন। কেউ কেউ ৫০০ থেকে এক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও আবেদন করতেন। এতে প্রার্থীদের আবেদন করতেই অনেক টাকা খরচ হতো। চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির নতুন শর্ত অনুসারে, ৪০টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ আবেদন করতে পারবেন না। এর আগে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদনের জন্য ১০০ টাকা করে ফি নেয়া হতো। অর্থাৎ কেউ ৫০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করলে তার ফি খরচ ৫০ হাজার টাকা।
কিন্তু এখন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদনের ফি এক হাজার টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদনের জন্য প্রার্থীকে একবারে এক হাজার টাকা দিতে হবে। তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে ২০১৮ সালের আগে যারা নিবন্ধন সনদ পেয়েছিলেন, তাদের জন্য বয়সসীমা শিথিল করা হয়েছিল। অর্থাৎ নিবন্ধন করা থাকলে ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সি প্রার্থীরাও আবেদন করতে পারতেন। কিন্তু চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে সবার জন্য বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৩৫ বছর করা হয়েছে। এর ফলে চাকরিতে দেখা মিলছে নতুনদের। চাকরিতে বয়স নির্ধারণকে ভালো চোখে দেখছে শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা। এনটিআরসিএর নিয়োগ আবেদন থেকে ভাইভা পরীক্ষার পর্যন্ত সম্পূর্ণ কার্যক্রমটি পরিচালিত হয় অনলাইনে। এখানে সম্পূর্ণ কার্যক্রম পরিচালিত হয় স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায়।
যার ফলে দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতির পরিবর্তে স্বচ্ছতা দেখা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান মো. এনামুল কাদের খান আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমরা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে কাজ করছি। আমাদের অফিসকে আমরা দুর্নীতিমুক্ত ঘোষণা করেছি। আগে চাকরিপ্রার্থীদের অনেক অভিযোগ ছিল। আমরা সেগুলোকে গুরুত্ব দিয়েছি। আগামীতে প্রতিষ্ঠানটি আরো স্বচ্ছ হবে। গত বছরের মাঝামাঝিতে এনটিআরসিএকে বাদ দিয়ে নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কথা গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। এ ব্যাপারে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান বলেন, এ ধরনের কোনো বিষয় আমরা জানি না। পিএসসির আদলে এনটিআরসিএ কেন হবে? এনটিআরসিএ তো নিজেদের নিয়মে ভালোই আছে।