মার্চ ৯, ২০২৩, ১২:৪৫ এএম
- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ মডিউল তৈরি হয়েছে
- ১০ কোটি টাকার বাজেট না পাওয়ায় শুরু হয়নি কার্যক্রম
এ বছরের জুলাই থেকে প্রশিক্ষণ শুরু করতে পারব
—প্রফেসর দিল আফরোজ
ইউজিসি সদস্য
শিক্ষকদের মান ফেরাতে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই
—অধ্যাপক ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ
উচ্চ শিক্ষার মানের ওপর দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধি নির্ভরশীল। শিক্ষার উন্নয়নের জন্য দক্ষ শিক্ষকের প্রয়োজন। দক্ষ শিক্ষক তৈরির জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণ। কিন্তু দেশে এখনো পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য তৈরি হয়নি কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও নীতিমালা। যার ফলে, কিছু সংখ্যক শিক্ষকের দক্ষতায় ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। কারো কারো ক্ষেত্রে আচরণগত সমস্যাও দৃশ্যপটে চলে আসে। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে এ সমস্যার উত্তরণ ঘটানো সম্ভব। ইউজিসি বলছে, ইতোমধ্যে শিক্ষক প্রশিক্ষণের মডিউল (পরিকল্পনা ও নিয়ম-নীতি) তৈরি হয়েছে। আনুমানিক ১০ কোটি টাকা পেলেই সীমিত পরিসরে হলেও কার্যক্রম শুরু করতে পারবে তারা। ইউজিসি আশা করছে, চলতি বছরের জুলাই মাসের মধ্যে বরাদ্দ পাওয়া যাবে। শিক্ষাবিদরা মনে করেন, উচ্চ শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষকদের মান ফিরিয়ে আনতে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, সরকারের ‘স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ফর হায়ার এডুকেশন ইন বাংলাদেশ : ২০১৮-৩০-এর অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসি। এর সম্ভাব্যতা যাচাই ও উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়নের কাজ চলছে। এই একাডেমির অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এমনকি অধ্যাপকদেরকেও প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জন্যও প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন কলেজ ও মাদ্রাসার স্নাতক পর্যায়ের এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও এই প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মোটাদাগে পাঁচটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
এগুলো হলো— বাংলাদেশ স্টাডিজ, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আহমেদ আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকদের কয়েকজন ঠিকমতো ক্লাস নিতে পারেন না। তাদের একাডেমিক রেজাল্ট ভালো কিন্তু শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগে ও ক্লাস নেয়ার দক্ষতায় যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।’ সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কয়েকজন শিক্ষক আমার সংবাদকে বলেন, দীর্ঘ দিন ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী ছিলাম। ভালো রেজাল্টে কারণে শিক্ষক হয়েছি। কিন্তু শিক্ষকতার জন্য যে ধরনের দক্ষতা ও কৌশল প্রয়োজন সে বিষয়ে আমাদের কোনো ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়নি। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে শিক্ষার্থীদের আরো ভালো কিছু দেয়া সম্ভব হতো।
একই রকম কথা বলেছে ঢাকা ও জাহাঙ্গীর নগরসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকরা।’ এ ব্যাপারে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম আমার সংবাদ বলেন, উন্নত বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে আমাদের শিক্ষকদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের যিনি শিক্ষক হন , তার সব বিষয়ে ট্রেনিং এর প্রয়োজন নেই। আমাদের শিক্ষকদের আইসিটি দক্ষতা, শিক্ষকতার দক্ষতাসহ বিভিন্ন দিকে দুর্বলতা রয়েছে। এই শিক্ষকদের মান ফিরিয়ে আনতে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। শিক্ষা একটি দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। অথচ অল্প কিছু টাকার জন্য আমরা এখনো প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করতে পারিনি। আমাদের মতো শিক্ষায় এত কম বাজেট অন্য কোনো দেশে নেই।’ এ ব্যাপারে ইউজিসির সদস্য
প্রফেসর দিল আফরোজ আমার সংবাদকে বলেন, ‘শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য গত বছর থেকে আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছি। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক সংকটে আমরা এখনো অনুমোদন নিতে পারিনি। আশা করি, এ অর্থ বছরে না হলেও আগামী অর্থ বছরে জুলাই মাসের মধ্যে আমরা অনুমোদন নিতে পারব। তবে শিক্ষকদের চার মাসের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ থাকলেও এখন হয়তো সেটি সম্ভব হবে না। আপাতত সীমিত পরিসরে হলেও আয়োজনটা শুরু করতে চাই।’