Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

২০২২-২৩ অর্থবছরের আট মাস

রিজার্ভ কমেছে পৌনে ১১ বিলিয়ন ডলার

রেদওয়ানুল হক

মার্চ ৯, ২০২৩, ১০:২৭ পিএম


রিজার্ভ কমেছে পৌনে ১১ বিলিয়ন ডলার
  • আকু দায় পরিশোধ শেষে গ্রস রিজার্ভ ৩১.১৫ ও নিট রিজার্ভ ২২.৭৫ বিলিয়ন ডলার

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমেছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়েনের (আকু) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের দায় বাবদ ১ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর গ্রস রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে। আর আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী নিট রিজার্ভ নেমেছে ২২ বিলিয়নে। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের আট মাসে রিজার্ভ কমেছে প্রায় পৌনে ১১ বিলিয়ন ডলার। তবে একক মাস জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছে। যা আকু পেমেন্টের কারণে আবার কমে গেছে। 

এ বিষয়ে  বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মো. সারওয়ার হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে গত ডিসেম্বর থেকে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স পজিটিভ হচ্ছে। গত জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে রিজার্ভের স্থিতি বেড়েছে। তবে বরাবরের মতোই আকু পেমেন্টের পর রিজার্ভ কিছুটা কমে গেছে। অন্যদিকে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে আমদানির যে চাপ ছিল তা এখন আর নেই। এ ছাড়া ঈদ সামনে রেখে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এখন থেকে রিজার্ভ বাড়বে।’ বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার মার্কেট স্থিতিশীল করতে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে ইতোমধ্যে তার ফল আসতে শুরু করেছে বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সহকারী মুখপাত্র।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আকু দায় পরিশোধের পর গত মঙ্গলবার দিন শেষে রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। আগের দিন সোমবার ছিল ৩২ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরে আকু দায় পরিশোধের তথ্য বিশ্লেষণ করে  দেখা যায় গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ছিল ১ দশমিক ৩২ বিলিয়ন, মে-জুন সময়ে ছিল ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন এবং  জুলাই-আগস্টে ১ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছিল। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে রিজার্ভের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। 

অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সেটি কমে দাঁড়ায় ৩৯ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলারে। এর পর প্রতি মাসেই রিজার্ভ কমেছে। আগস্টে ছিল ৩৯ দশমিক শূন্য ৬, সেপ্টেম্বরে ৩৬ দশমিক ৪৭, অক্টোবরে ৩৫ দশমিক ৮০ নভেম্বরে ৩৩ দশমিক ৭৮, ডিসেম্বরে ৩৩ দশমিক ৭৪, জানুয়ারিতে ৩২ দশমিক ২২ এবং আকু দায় পরিশোধ শেষে গত ৭ মার্চ রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ গত আট মাসে রিজার্ভ কমেছে ১০ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার।

বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফেরাতে আমদানি দায় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে নতুন এলসি কমলেও আগের দায় পরিশোধের চাপের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমেনি। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারে। সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ৫ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। কোনো ব্যাংক যেন আমদানি দায় পরিশোধে ব্যর্থ না হয় সে জন্য চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ১০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর প্রভাবে রিজার্ভ কমছে। রিজার্ভের পতন ঠেকাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তহবিল থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন পেয়েছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ডলার চলে এসেছে। এতে রিজার্ভ কিছুটা বাড়লেও আগের ঋণ ও আমদানির চাপে এখনো কমতির দিকেই আছে রিজার্ভ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ইতিহাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে ২০২১ সালের আগস্টে। আর রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে ২০১৭ সালের ২২ জুন। এরপর থেকে করোনার প্রভাব শুরুর আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ৩২ থেকে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে ওঠানামার মধ্যে ছিল। তবে আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের সাত বিলিয়ন ডলারসহ বিভিন্ন তহবিলে দেয়া ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বাদ দিয়ে রিজার্ভের হিসাব করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এতে সম্মত হয়েছে। সে বিচেনায় ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ এখন ২২ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। করোনার প্রভাব শুরুর পর বিশ্ববাজারে সুদহার অনেক কমে আসে। তখন বিশ্বের অনেক দেশ বিদেশি ঋণ কমালেও বাংলাদেশে বেড়ে যায়। এখন সেই দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে। 

একই সঙ্গে বিশ্ববাজারে সব পণ্যের দাম বেড়েছে। ফলে পণ্যের বর্ধিত দামের পাশাপাশি আগের ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। প্রসঙ্গত, আকু হলো একটি আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তানের মধ্যেকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। দায় পরিশোধের মতো রিজার্ভ না থাকায় গত অক্টোবরে আকু থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করেছে শ্রীলঙ্কা।            

Link copied!