মার্চ ১১, ২০২৩, ০১:২০ এএম
- চুক্তি সংস্কারের আলোচনার মধ্যেই এলো বিদ্যুৎ
- সিস্টেম লস হবে ১.১০ শতাংশ
- বছরে ৩৪ শতাংশ বিদ্যুৎ না কিনলে গুনতে হবে ক্ষতিপূরণ
- বিদ্যুৎ না কিনলেও বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ ৪০.৫ কোটি টাকা
চুক্তির দরকষাকষিতে বাংলাদেশ মোটেও লাভবান হয়নি
—এম শামসুল আলম, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ
অবশেষে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলো বহুল আলোচিত আদানির বিদ্যুৎ। তবে থেমে নেই আলোচনা-সমালোচনা। আদানির এই বিদ্যুতে অন্যায্যভাবে কয়লার উচ্চমূল্য ধরা হয়েছে দাবি বিশ্লেষকদের। আদানি চুক্তি বিরোধিতাকারীরা বলছেন, ২৫ বছর মেয়াদি এ চুক্তির মাধ্যমে মুনাফা বৃদ্ধির বিশেষ সুযোগ নিয়েছে ভারতীয় কোম্পানিটি। এই বিদ্যুৎ চুক্তিকে দেশের ‘স্বার্থবিরোধী’ হিসেবে উল্লেখ করে এটি সংশোধন, এমনকি বাতিলেরও দাবি তোলা হয়েছে। আদানির বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে কয়লার মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি নিয়ে একটি সমস্যা চিহ্নিত হলে আদানি বিতর্ক সামনে আসে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চুক্তি সংস্কারের আবেদনের পর প্রথামিক আলোচনাও করেছে। তবে দাম কিছুটা কমার আভাস পাওয়া গেছে। যদিও ক্যাপাসিটি চার্জ, কয়লার দামসহ অনেক বিষয়ের এখনো সমাধান হয়নি। বিদ্যুতের সম্ভাব্য দাম কী হবে তাও চূড়ান্ত হয়নি। এরই মধ্যে ভারত থেকে শুরু হলো আদানির বিদ্যুৎ আসা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি অর্থবছর কেন্দ্রটি থেকে সর্বোচ্চ ৭৪৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে বলে ধারণা করছেন ।
সূত্র বলছে, ভারতের আদানি বিদ্যুতে প্রতি ইউনিটে খরচ পড়বে প্রায় ২২ টাকা। তবে কয়লার দাম কমালে খরচ কমে ১৬ টাকা ৩১ পয়সা পড়বে। এদিকে পিডিবির সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে ব্যয় পড়বে গড়ে প্রতি ইউনিটে ছয় টাকা ৩৮ পয়সা। আদানির সাথে বিডিবির চুক্তি যেন মরণ ফাঁদ। পিডিবির এই অসম চুক্তির চুক্তির খেসারত বাংলাদেশকে দিতে হবে অন্তত ২৫ বছর। আড়াই দশক অতিক্রম করা ছাড়া চুক্তি থেকে বের হওয়ারও কোনো উপায় নেই পিডিবির। চুক্তিতে বলা হয়, পিডিবিকে চুক্তির প্রত্যেক বছর কেন্দ্রটির বিদ্যমান সক্ষমতার কমপক্ষে ৩৪ শতাংশ বিদ্যুৎ কিনতে হবে। যদি ৩৪ শতাংশ বিদ্যুৎ কেনার সক্ষমতা হারায়া বা যদি কোনো কারণে না কেনে তাহলে পিডিবির পক্ষ থেকে আদানি পাওয়ারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
এ ক্ষতিপূরণের মধ্যে থাকবে আদানির কয়লার দাম, কয়লা পরিবহন ব্যয় ও বন্দরে কয়লা খালাস ব্যয়, যা আদানি কয়লা সরবরাহ চুক্তি, কয়লা পরিবহন চুক্তি ও কয়লা হ্যান্ডলিং চুক্তির আওতায় বহন করবে। যদিও দেশীয় কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এ ধরনের ধরাবাধা জরিমানার বিধান নেই। এদিকে চুক্তিতে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লার সিস্টেম লস ধরা হয়েছে ১.১০ শতাংশ। তার মানে এক লাখ টন কয়লায় আদানি এক হাজার ১০০ টন কয়লা নষ্ট দাবি করে তার দাম নিতে পারবে। পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে সিস্টেম লসের বিধান রাখা হয়নি। এদিকে গত কয়েক মাস আগে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে ইনস্টিটিউট অব এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ) ও যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্ট পৃথক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
আদানির বিদ্যুৎ ‘অত্যন্ত ব্যয়বহুল’ প্রতিবেদনে তুলে ধরে সংস্থা দুটি। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ না কিনলেও বছরে আদানি ক্যাপাসিটি চার্জ পাবে ৪০ দশমিক ৫০ কোটি ডলার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরো সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ছিল। এ চুক্তি সম্পাদনে বাংলাদেশের দিক থেকে ‘অভিজ্ঞতার ঘাটতি’ এবং ‘এক ধরনের চাপ’ থাকতে পারে বলেও বলছেন কেউ কেউ। চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি হিসেবে আমদানি করা কয়লা ব্যবহার হবে। কিন্তু যে পদ্ধতিতে কয়লা আমদানি করা হবে, তাতে আমদানি খরচ বেশি দেখানোর সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের কোনো কনসার্ন দেখা যায়নি।
এই বিষয়গুলো ধামাচাপা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। শামসুল আলম বলেন, চুক্তির দর কষাকষিতে বাংলাদেশ মোটেও লাভবান হয়নি। পায়রা বা রামপালের চুক্তির চেয়েও আদানির চুক্তির শর্ত দেশের স্বার্থ পরিপন্থি।