Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪,

সংঘাতে বাড়ছে উদ্বেগ

মো. মাসুম বিল্লাহ

মার্চ ১১, ২০২৩, ১১:৫৮ পিএম


সংঘাতে বাড়ছে উদ্বেগ
  • সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ২৫ জন আহত
  •  নতুন কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

 

১০ দফা বাস্তবায়নে আন্দোলন আরও তীব্র হবে

—মির্জা ফখরুল

 

নির্বাচনে সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই

—কামরুল ইসলাম

কয়েক মাস ধরেই রাজপথে সক্রিয় দেশের প্রধান দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বিদ্যুতের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ এবং বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে মাঠে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি ও তার রাজনৈতিক মিত্ররা। অপরদিকে বিএনপিকে রাজপথ ছেড়ে না দেয়ার প্রত্যয় নিয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপি যে দিন বা যে তারিখে যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করবে, ওই একই দিন একই তারিখে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ‘শান্তি সমাবেশ’ করবে আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ, সরকারি দলের ভাবনা হচ্ছে নির্বাচনের বেশি বাকি নেই। 

আর এই শেষ সময়ে এসে রাজনীতির মাঠে বিএনপিকে এককভাবে বিচরণের সুযোগ দেয়া হবে বোকামি। সে কারণে ‘শান্তি সমাবেশ’সহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। থাকছে মাঠেও। কিন্তু একইদিন দেশের বৃহত্তম দুটি দল রাজপথে মুখোমুখি হলে এতে সংঘর্ষ ও সংঘাতের আশঙ্কা থাকে বলে শুরু থেকেই বলে আসছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। একইদিন কর্মসূচি থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থানে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মসূচি পালনকালে বেশ কিছু স্থানে সংঘর্ষ হয়। এতে অনেকে আহতও হন। একইভাবে গতকাল শনিবার দেশের সব মহানগর ও জেলায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বিএনপি ও তার রাজনৈতিক মিত্ররা। একইদিন আওয়ামী লীগ ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে ‘শান্তি সমাবেশ’ করে। এ দিনও সংঘর্ষ হয়। আহত হন বেশ কজন নাগরিক।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর থেকেই মাঠে বেশি সক্রিয় হয় বিএনপি। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা চালু ও জ্বালানি তেলসহ সব নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে দলটি কর্মসূচি পালনকালে ভোলায় গুলিতে বিএনপির অঙ্গসংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী এবং ছাত্রদলের নেতা প্রাণ হারান। এতে আন্দোলন আরও গতি পায়। বিএনপি দেশজুড়ে ধারাবাহিকভাবে বিভাগীয় গণসমাবেশ, গণবিক্ষোভ, অবস্থান কর্মসূচির পর টানা পদযাত্রা ও মানববন্ধন করে। এ কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় গতকাল সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি ও তার মিত্ররা। সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা  দাবি বাস্তবায়নে এ মানববন্ধন করছে তারা। দলটি গত বছরের মাঝামাঝি আন্দোলন শুরু করেছিল। মাঝে কিছুটা উত্তাপ ছড়িয়েছিল আলোচিত গত ১০ ডিসেম্বর।

 ঢাকায় সেদিন গণসমাবেশের আগে দলটির মহাসচিবসহ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে গতি বদলে দেয় সে আন্দোলনে। গণসমাবেশ থেকে গণবিক্ষোভের মতো কর্মসূচির ঘোষণা বাস্তবে আন্দোলনের রাশ টেনে ধরে। গতকাল সারা দেশের সব জেলা ও মহানগরে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা মানববন্ধন করছে দলটি। বিএনপির কৌশল হচ্ছে— বড় আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরির জন্য সারা দেশে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে তারা কর্মসূচি দিচ্ছে। কোনো না কোনো পর্যায়ে আন্দোলন দানা বাঁধবে— এটা বিএনপির আশা। 

এদিকে আওয়ামী লীগও চায় ক্ষমতার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে। তারা বিএনপির রাজনৈতিক সব কৌশলকে নজরে রাখছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে যখনই কোনো কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে, তখনই আওয়ামী লীগ জনগণের জীবন ও সম্পদ পাহারা দিচ্ছে মাঠে থেকে। শান্তি সমাবেশ ঘোষণা দিয়ে রাজপথে সক্রিয় থাকছে ক্ষমতাসীন দলটি। গতকালও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ঢাকায় পৃথক সমাবেশ করেছে। এছাড়াও ঢাকা জেলাসহ দেশের অধিকাংশ জেলায় সক্রিয় ভূমিকায় ছিল আওয়ামী লীগ। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। 

একইদিন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ বনানীতে শান্তি সমাবেশ করে। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগও পৃথকভাবে শান্তি সমাবেশ করে। ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাড. কামরুল ইসলাম, এমপি। তিনি বলেন, বিএনপি আসুক অথবা না আসুক, নির্বাচন নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। বিদেশিরা বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে— এমন দুঃস্বপ্ন দেখে কোনো লাভ নেই। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই বলেও সাফ জানিয়ে দেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

কামরুল ইসলাম আরও বলেন, বিএনপি বিভিন্ন দাবিতে ৫৪ দল নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। আগের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের জন্য এসে যদি তিন-চার বছর ক্ষমতা দখল করে রাখে, তবে এর দায় কে নেবে? তাহলে কেন এ দাবি করছে বিএনপি— প্রশ্ন তোলেন তিনি। গতকাল মৌলভীবাজারে বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে বলে অভিযোগ ওঠে। ওই হামলায় সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমানসহ উভয় পক্ষের ২৫ জন আহত হন। 

গতকাল দুপুর ১টার দিকে শুরু হওয়া বিএনপির মানববন্ধনের প্রস্তুতিকালে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে বলে অভিযোগে জানা যায়। এতে এম নাসের রহমান, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকিদুর রহমান সোহান, জেলা জাসাসের সদস্য সচিব জসিম তালুকদারসহ বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের প্রায় ২০ জন আহত হন। পরে উভয়পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এ সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের পাঁচজন আহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা করা হয়। আহতরা স্থানীয় বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন। মৌলভীবাজার সরকারি স্কুল মাঠের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মানববন্ধনে প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী।

এ ঘটনার পর সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, তার উপস্থিতিতে মানববন্ধনে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাকে তিনি ন্যক্কারজনক ঘটনা বলে উল্লেখ করেন। বিএনপির কর্মসূচির দিনে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির কারণে বিভিন্ন সময়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকালও মৌলভীবাজারে সংঘর্ষ হয়। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন একইদিন একই এলাকায় দুটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ে। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত ভিন্ন ভিন্ন দিনে কর্মসূচি পালন করা। তাহলে সংঘর্ষ ও সংঘাত এড়িয়ে চলা সম্ভব।

নতুন কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির : চলমান যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ১৮ মার্চ দেশের সব মহানগরে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। গতকাল দুপুর ১২টায় নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধন থেকে নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগসহ বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। তিনি বলেন, আন্দোলন ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে। আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।

Link copied!