Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

ইসি অনুগত স্বাধীন নয়!

আবদুর রহিম

মার্চ ১৪, ২০২৩, ১২:৪৪ এএম


ইসি অনুগত স্বাধীন নয়!

নির্বাচন কমিশনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করে গড়ে তোলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করে দিয়েছি, আর্থিক সচ্ছলতা এনে দিয়েছি। আওয়ামী লীগের আমলে ভোট চুরির সুযোগ নেই। জনগণের ভাতের অধিকার এবং ভোটের অধিকার আমরা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। আমরা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রমাণ করে দেখিয়েছি। গতকাল সোমবার বিকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে গত রোববার গণভবনে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যান মেরি ট্রেভেলিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাতেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী নির্বাচন পরিচালনার জন্য সম্পূর্ণ স্বাধীন। তবে প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। 

তারা বলছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়ন্ত্রিত। এ কমিশন সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কোনো কাজ করার শক্তি নেই। স্বাধীন কমিশন মাত্র কাগজে-কলমে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মাধ্যমে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে কৌশল দেখছে বড় একটি অংশ। তবে কেউ কেউ বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ওপর নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত ভরসা রাখতে; বিতর্কে না জড়াতে।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুক আমার সংবাদকে বলেন, আওয়ামী লীগ আবারও আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন করতে চাচ্ছে। তারা বিএনপিকে ভোটে নিতে চায় নানা কৌশলে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করে দেয়া হয়েছে। কারণ, তারা জানে যে কমিশন গঠন করা হয়েছে, তারা তাদের অধীনে কাজ করবে। কমিশনের প্রত্যেক ব্যক্তিই তাদের অনুগত। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বাইরে কিছুই করবে না আউয়াল কমিশন। তাই বলছি, শেখ হাসিনার অধীনে এই নির্বাচন হবে না।  নির্বাচন করতেও দেয়া হবে না। আর বিএনপিও সরকারের কোনো অনুগত ব্যক্তিদের দিয়ে হওয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবির) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স আমার সংবাদকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে যে কথা বলেছেন ইসিকে স্বাধীন করে দেয়া হয়েছে, এগুলো আসলে পুরোনো কথা। ইসি কাগজে-কলমে স্বাধীন হলেও বাস্তবে নয়। সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তারা শেখ হাসিনার আনুগত্য করবে। কারণ আমরা জানি, নির্বাচন কমিশন এখনো স্বাধীন নয়। তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার থাকবে। যে কমিশন অনুগত ব্যক্তিদের দিয়ে গঠিত হয়েছে, তাদের ওপর ভরসা রাখার কোনো কারণ নেই। এখন প্রয়োজন সংস্কার আগামী নির্বাচন কমিশন কোন ধরনের, কোন পন্থায় হবে। নির্বাচন সামনে রেখে এখন এসব বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার আমার সংবাদকে বলেন, যাদের অনুগত ব্যক্তিদের দিয়ে কমিশন গঠন করা হয়েছে, তারা কীভাবে স্বাধীনভাবে কাজ করবে। তারা তো সরকারকে সুরক্ষায় নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আমি মনে করছি এটি একটি কৌশল মাত্র। ২০১৮ সালে যেভাবে একটি নির্বাচন করা হয়েছে, আবারও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সে কৌশল নেয়া হয়েছে। আমি মনে করি, এই নির্বাচন কমিশনাররা পক্ষপাতমূলক কাজ করবেন; তারা স্বাধীনভাবে কাজ করবেন— এমন ভরসা করা যায় না।

জানিপপ সভাপতি প্রফেসর নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ আমার সংবাদকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেছেন, সেটি আসলেই বাস্তব। কারণ, এই কমিশন একসময় সচিবালয়ের অধীনে ছিল। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগকে আসলে স্বাগত জানানো উচিত। সব বিতর্কের ওপরে রাখা দরকার। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন খুবই সন্দিক্ষণ। নির্বাচন কতটা স্বাধীন এবং কতটা গুরুত্বপূর্ণ— সেটি অবশ্যই প্রমাণ করবে নির্বাচন পরিচালনার মধ্য দিয়ে। 

উল্লেখ্য, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানি ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে এলডিসি সম্মেলনে যোগ দিতে ৪ মার্চ কাতার সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সফরে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট সাবা কোরোসি, কাতার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শেইখা মোজা বিনতে নাসেরের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এ ছাড়া জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রধানের সঙ্গেও বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Link copied!