Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪,

সবই যেন হাওয়াই মিঠাই!

নুর মোহাম্মদ মিঠু

মার্চ ২৩, ২০২৩, ১১:৫৩ এএম


সবই যেন হাওয়াই মিঠাই!
  • মিষ্টভাষী প্রতারক

 পুলিশ কর্মকর্তা খুনের অন্যতম হোতা আরাভ খান যেন এক ভাঁওতাবাজের নাম। তবে তার ভাঁওতাবাজির বিপরীতে রয়েছে কিছুটা সত্য, আর সে সত্যটাও তার বিরুদ্ধে। তিনি পুলিশ কর্মকর্তা খুনের পর থেকেই রয়েছেন লাপাত্তা। ঘটিয়েছেন আয়নাবাজির ঘটনাও। এ ছাড়া অসংখ্য ছদ্মনামের অধিকারী আরাভ খান অসংখ্য  পরওয়ানাভুক্ত পলাতক আসামি, নিজেকে রক্ষার্থে ভারতের পাসপোর্ট নিয়েও করছেন দুবাইয়ে অবস্থান। আপাতদৃষ্টিতে আরাভ গল্পের এটুকুই সত্য আর বাকি সবই তার ভাঁওতাবাজি। দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় ফ্ল্যাট, মারদিফে ফ্ল্যাট, তিন কোটি টাকা দামের গাড়ি, অনলাইনে গোল্ড বাজার, আরাভ রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ট্রাভেলস, আমেরিকান গ্রিনকার্ড, কানাডার সিটিজেনশিপ ও সর্বশেষ আরাভ জুয়েলার্স— সবই তার ভাঁওতাবাজি। আরাভকে ধরতে ইন্টারপোলের বিষয়ে দেশের পুলিশের যে বক্তব্য তারও নেই কোনো সত্যতা। মঙ্গলবার যেভাবে খবর হয়েছে— দুবাই পুলিশের হাতে আরাভ খান গ্রেপ্তার, দিন শেষে মেলেনি তারও সত্যতা। আরাভ গল্পে সত্য তাহলে কী— প্রশ্ন বিভিন্ন মহলের।

আরাভ গল্পের সর্বশেষ ইস্যু যাচাই করে দেখা গেছে, ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে দেশে আনা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। নির্ভরযোগ্য নয় পুলিশের এমন সূত্রের বরাতে দেশের গণমাধ্যমে এমনটিই খবর হয়েছে যে, আরাভের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করেছে ইন্টারপোল। অথচ গতকাল বুধবার রাত পর্যন্তও ইন্টারপোলের রেড নোটিসের তালিকায় ৬২ বাংলাদেশির নাম থাকলেও পাওয়া যায়নি আরাভের নাম। যদিও পুলিশ বলেছে আরাভের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিস তারা জারি করাতে পেরেছে। এদিকে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, আরাভ খান অবৈধ প্রক্রিয়ায় ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গেছেন। 

যদিও তিনি ভারতীয় নাগরিক নন। বাংলাদেশকে প্রথমে বিষয়টি প্রমাণ করতে হবে এবং এর মধ্য দিয়ে এটি প্রমাণ হবে, তিনি দুবাই যাওয়ার ক্ষেত্রেও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ যদি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে অন্য দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে অন্য কোনো দেশে যায় সে ক্ষেত্রে  সে ওই দেশের যেকোনো বড় ধরনের অপরাধে যুক্ত হতে পারে। আর এ যুক্তিতেই কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশকে বার্তা দিয়ে সমঝোতার ভিত্তিতে এমন ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনার সুযোগ তৈরি হয়। তবে আরাভের ক্ষেত্রে এখনো এ প্রক্রিয়া শুরুর কোনো তথ্য জানা যায়নি। আরাভ জুয়েলার্স উদ্বোধনের ক্ষেত্রে আরাভ দেশীয় তারকা খেলোয়াড়, অভিনেতা, অভিনেত্রী ও কণ্ঠশিল্পী নিয়ে যে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন, সেটিও পুরোপুরি তার ভাঁওতাবাজি। 

জানা গেছে, সাকিব আল হাসানের কন্ট্রাক্টের ৫০ হাজার দিরহাম দিতেও তাকে করতে হয়েছে ধারদেনা। যেখানে তিনি নিজেই বিভিন্ন মাধ্যমে দাবি করেছেন, দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় ফ্ল্যাট, মারদিফে ফ্ল্যাট, তিন কোটি টাকা দামের গাড়ি, অনলাইনে গোল্ড বাজার, আরাভ রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ট্রাভেলস, আমেরিকান গ্রিনকার্ড, কানাডার সিটিজেনশিপ রয়েছে তার। দুবাইতে তার শোরুমে গেছেন এবং তার সাথেও পরিচয় রয়েছে এমন প্রবাসী একাধিক বাংলাদেশি আমার সংবাদকে জানিয়েছেন, নিজেকে নিয়ে যতটা বলেছেন আরাভ সে সবের কিছুই তার নেই। পুরোটাই শোঅফ। আরাভ খান টাকা নিয়ে আরও চারজনকে আলোচিত সেই সোনার দোকানটির ব্যবসায়িক অংশীদার করেছেন। তাদের মধ্যে দোকানের তত্ত্বাবধায়ক উসমান গণি, কুমিল্লার শাহেদ আহমেদ, ঢাকার দোহারের রাফসান জামি ও শাকিব হোসেন। তারা সবাই মিলে বড় অঙ্কের অর্থ দিয়েছেন আরাভকে। নিজের তেমন কিছুই নেই।

এ ছাড়াও বুর্জ খলিফায় ফ্ল্যাট, মারদিফে ফ্ল্যাট, তিন কোটি টাকা দামের গাড়ি, অনলাইনে গোল্ড বাজার, আরাভ রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ট্রাভেলস এসবেরও কিছুই পুরোপুরি তার নেই। সবই তিনি করেছেন ধারদেনা করে। দুবাই প্রবাসীদের অনেকেই বলছেন, যত সম্পদের কথা আরাভ বলেছেন, ধারদেনার টাকা দিতে গেলে এসবের কিছুই তার থাকবে না; বরং তার চেয়ে বেশি ঋণের মুখে পড়তে হবে তাকে। তবে বর্তমান সময়ে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, আরাভ খান বিশেষ করে গত দুদিন ধরে সেসব ব্যক্তিদের সঙ্গেও যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। ধরছেন না কারও ফোন। তবে তারা বলছেন, আরাভ খানের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক তৈরির বড় মাধ্যম তার মিষ্টি ব্যবহার।

আরাভ খানের সঙ্গে লেনদেনে জড়িতরা এখন হতাশায় ভুগছেন। একাধিক দুবাই প্রবাসী বলছেন, আরাভ খানকে এখন কমবেশি সবাই প্রতারক হিসেবে গালি দিচ্ছেন। বলছেন তাদের দেয়া টাকা ফের পাওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তার কথাও। শুধু তাই নয়, আরাভ খান সাকিব আল হাসানের কন্ট্রাক্টের টাকা ধারদেনা করে পরিশোধ করতে পারলেও দেশ থেকে যাওয়া অন্য সেলিব্রেটিদের কারও চুক্তি অনুযায়ী পেমেন্ট দিতে পারেননি। পারেননি আরাভ জুয়েলার্স উদ্বোধনের দিন একজন টিভি সাংবাদিককে দিয়ে পুরো অনুষ্ঠানের কন্টেন্ট তৈরির টাকাও।

Link copied!