মার্চ ২৩, ২০২৩, ১২:২৪ পিএম
- দ্রব্যমূল্যের নেতিবাচক প্রভাব
- বাদ দিচ্ছেন আমিষ, কম খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী
- নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা ভুগছেন বেশি
- পর্যাপ্ত সুষম খাবারের অভাবে মেধা ঘাটতি দেখা দিতে পারে
—ড. আকতারুজ্জামান
অধ্যাপক, ঢাবি
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত সমস্যাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের সহায়তা করা
—আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক
সাবেক ভিসি, ঢাবি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন ঢাকায় আসেন ২০১৯ সালে। ওঠেন একটি মেসে। তখন মেসে মিল রেট ছিল ৩০ থেকে ৩২ টাকা। দুবেলা আমিষ খেতে পারতেন। টিউশন করাতেন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার। বর্তমানে মিল রেট ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। আনোয়ার হোসেন বলছেন, ‘এখন আমরা একবেলা আমিষ খাওয়া ছেড়েছি অথচ আমাদের টিউশনির টাকা বাড়েনি।’ গত কয়েকদিন বিশ্ববিদ্যালয়টি ও আশেপাশের অন্যান্য মেস ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থী মেসে থাকেন। নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা এসব শিক্ষার্থীর অনেকে তিনবেলা খাবার খেতে পারছেন না। অনেকের খাবারে তালিকায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। কম খেয়ে দিন পার করছেন বহু শিক্ষার্থী।
তারা জানিয়েছেন, মেস ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, শিক্ষা-উপকরণের দাম বাড়লেও টিউশনির টাকা বাড়েনি। অর্থসঙ্কটে কম খাওয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুষ্টি ঘাটতি দেখা দেয়ার আশঙ্কার কথা বলছেন পুষ্টিবিদরা। পরিসংখ্যান বলছে, গত কয়েক মাসে বহির্বিশ্বে অস্থিরতা, ডলার সংকট, এলসি খুলতে না পারা, ব্যয়বহুল খাদ্য পরিবহন ব্যবস্থাপনা, বাজার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারাসহ বিভিন্ন কারণে দেশের খুচরা বাজারে নিত্যপণ্যের দাম আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে। এরই সামগ্রিক প্রভাব সাধারণ নাগরিকসহ মেসবাসী শিক্ষার্থীদের উপরও পড়েছে।
সোহরাওয়ার্দী কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ আমার সংবাদকে বলেন, দুটি টিউশন করিয়ে সাড়ে চার হাজার টাকা পাই। আগে এই টাকায় কোনোভাবে তিন বেলা খাবার খেতে পারতাম। আজ তিন মাস ধরে তিন বেলা খাবার খেতে পারি না। এখন তো বড় হয়েছি। পরিবার চায় তাদের টাকা পাঠাই। আমার গ্রামের সমবয়সীরা পরিবারকে সহায়তা করছে। সবাই বলছে ঢাকা গিয়ে কী করছিস? অথচ তিন বেলা যে খেতে পারি না— এটি কাউকে বলতে পারছি না।’
কবি নজরুল কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মেহরাবুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, ‘বছর খানেক আগেও আমাদের মেসে প্রতি মাসে একবার গোশত আনা হতো। দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতিতে এখন তিন বেলা খেতে পারলেই খুশি। বেশির ভাগ সময় আলু ভর্তা ও ডিম খেয়ে থাকতে হয়। মেসে এখন মুরগির গোশত মাসে একবার আনা হয়।’ এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আকতারুজ্জামান আমার সংবাদকে বলেন, শিক্ষার্থীরা আমিষ কম খেলেই সমস্যায় পড়বে না। তাদের নিয়মিত সুষম খাবার খেতে হবে। সুষম খাবারের অভাবে তাদের মেধার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
সমস্যাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের পাশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের থাকার কথা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক আমার সংবাদকে বলেন, ‘বৈশ্বিক প্রভাব আমাদের দেশের ওপর পড়েছে। এ সময়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের আরো বেশি খোঁজ নেয়া প্রয়োজন। যেসব শিক্ষার্থী দুবেলা খাচ্ছে বা সমস্যায় আছে ওদের তালিকা প্রণয়ন করে ক্যাম্পাসে ডাইনিংয়ে নামমাত্র মূল্যে বা বিনামূল্যে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজগুলোর প্রশাসনের আন্তরিকতা বাড়াতে হবে।’ এ ছাড়াও তিনি মনে করেন, সমাজের সবার সহমর্মিতা ও ভালোবাসা নিয়ে পরস্পরের পাশে থাকা উচিত। যাদের টিউশনির বেতন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে, তারা যেন টাকা বাড়িয়ে দেন।’