Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৪,

ব্যাংকে ডলার কালোবাজারি

বাফেদার দর না মানলে শাস্তি

মো. মাসুম বিল্লাহ

এপ্রিল ৩, ২০২৩, ১১:৪২ এএম


বাফেদার দর না মানলে শাস্তি
  • ‘স্মার্ট’ পদ্ধতিতে প্রতি মাসে সুদহার নির্ধারণ রপ্তানির আড়ালে পাচার রোধে নজরদারি

বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন-বাফেদা ঘোষিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে ডলার কেনাবেচা করলে ব্যাংকগুলোকে শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে হুঁশিয়ার করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ব্যাংকার্স সভা শেষে এক জরুরি বৈঠকে বেশি দামে ডলার কেনাবেচায় অভিযুক্ত ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। বৈঠক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা কমাতে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত মেনে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে ডলার কেনাবেচার অভিন্ন দর নির্ধারণ করে দিচ্ছে বাফেদা ও এবিবি। সম্প্রতি জানা গেছে, ডজন খানেক ব্যাংক বাফেদার ঘোষিত দরের চেয়ে বেশি দামে ডলার বিনিময় করছে। এমন অভিযোগের বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ব্যংকগুলোকে সতর্ক করে বলা হয়েছে বাফেদার দরের চেয়ে কেউ বেশি দরে ডলার কেনাবেচা করতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি তদারকি করে দেখছে।

জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে দর পরিবর্তন করে বর্তমানে দেশে আসা রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ডলারের বিনিময় হার হবে সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা। রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারে সর্বোচ্চ ১০৫ টাকা পাবেন ব্যবসায়ীরা। যা গতকাল থেকে কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছে বাফেদা। আর আমদানির এলসি খোলার ক্ষেত্রে বিনিময় হার নির্ধারণ করা হবে রেমিট্যান্স ও রপ্তানির বিনিময় হারের গড় করে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ গড় হারের সঙ্গে অতিরিক্ত এক টাকা বেশি নিতে পারবে; অর্থাৎ স্প্রেড সীমা হবে এক টাকা।

অন্যদিকে গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় বিনিয়োগের সুদহার নিয়ে ব্যাংক নির্বাহীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ব্যাংকার্স সভাটি তিন মাস অন্তর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। সভা সূত্রে জানা যায়, ৯ শতাংশ ঋণ সুদহার তুলে দিয়ে ট্রেজারি বিল, বন্ডের ছয় মাসের গড় সুদহার (ওয়েটেড) বিবেচনা করে প্রতি মাসে একটি রেফারেন্স রেট নির্ধারণ করে দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক; এর সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সুদ যোগ করে ঋণ সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে বাণিজ্যিক ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার নির্ধারণের এ করিডর পদ্ধতিকে ‘স্মার্ট’ (শর্ট টার্ম মুভিং এভারেজ) নাম দিচ্ছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, ‘আগামী মুদ্রানীতিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে। আশা করছি আগামী ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়ন করা হবে।’ এখনো এ বিষয়ে ব্যাংকারদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথাও বলেছেন তিনি। নতুন এ পদ্ধতি চালু হলে প্রতিমাসেই গ্রাহকের ঋণের সুদহারে পরিবর্তন আসতে পারে।

মেজবাউল হক জানিয়েছেন, গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এ সভায় আগামী মুদ্রানীতি, সুদহার, আমদানি-রপ্তানি পণ্যের মূল্য হার, ডলারের বিনিময় হার, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা ও ক্যাশলেস বিষয়ে আলোচনা হয়।

উল্লেখ্য, ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে অর্থ দিতে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া ব্যাংক ঋণের সুদহারের ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। তবে সমপ্রতি ভোক্তা ঋণে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ বাড়িয়ে সুদ নিতে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখনো এ ইস্যুতে কোনো সার্কুলার জারি করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে পাওয়া ঋণের শর্ত পালনে ৯ শতাংশের সুদহারের সীমা তুলে দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৈঠকে অংশ নেয়া এক কর্মকর্তা জানান, সুদহারের যে গড় রেট বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণা করবে তা হবে বাজারভিত্তিক। প্রতি মাসেই ছয় মাসের গড় সুদহার দেখে একটি রেফারেন্স রেট ঘোষণা করা হবে। যদি দেখা যায় গড় সুদহার ১ শতাংশ বা বা নিম্নমুখী হয়েছে বা এমন একটি পর্যায়ে রয়েছে যা বাজারমুখী না, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার বুঝে সুদহার নির্ধারণ করে রেফারেন্স রেট জানিয়ে দেবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া রেফারেন্স রেটের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ সুদ নিতে পারবে গ্রাহকের কাছ থেকে। অথবা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেফারেন্স রেটে ঋণ দিতে পারবে।

‘র্স্মার্ট’ পদ্ধতিতে রেফারেন্স রেট ঘোষণা করলে বর্তমানে তা ৬ দশমিক ৯ শতাংশের মতো বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র মেজবাউল হক। অন্যদেক রপ্তানি হওয়া পণ্যের মূল্য যথাযথ হচ্ছে কি না তা দেখতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঝুঁকির জায়গাগুলো নির্ধারণ করে এ বিষয়ে একটি কাঠামো তৈরি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো দেখবে যে দরে পণ্য রপ্তানি হচ্ছে তা সঠিক কি না। আবার রপ্তানি মূল্য যেন প্রত্যাবাসনও হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক রপ্তানি মূল্যে কোনো অনিয়ম দেখতে পেয়েছে কি না জানতে চাইলে মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, আমরা সেরকম ভাবছি না। ঝুঁকির জায়গাগুলো চিহ্নিত করছি মাত্র।

ব্যাংকগুলো রপ্তানি ও আমদানি হওয়া পণ্যের সঠিক দরটি যাচাই করে দেখবে। প্রসঙ্গত, এর আগে চারটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রপ্তানির আড়ালে অর্থপাচারের প্রমাণ পায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। সংস্থাটির মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ ফখরুল আলম গত ১৪ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, জাল নথিপত্রে রপ্তানির আড়ালে এক হাজার ৭৮০টি চালানের বিপরীতে চার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩৮২ কোটি টাকা পাচারের প্রমাণ মিলেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— সাবিহা সাকি ফ্যাশন, এশিয়া ট্রেডিং কর্পোরেশন, ইমু ট্রেডিং কর্পোরেশন ও ইলহাম।
 

Link copied!