এপ্রিল ১৩, ২০২৩, ১২:৩১ পিএম
- এক যুগেও সুর উঠেনি সাংস্কৃতিক চর্চায়
- শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে ব্যয় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সাংস্কৃতিক চর্চা শিশুশিক্ষার্থীদের বিশুদ্ধ মন তৈরিতে সহায়ক হলেও অবহেলায় তা সম্ভব হচ্ছে না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্টোররুমে কিংবা কক্ষের কোণে পড়ে আছে হাজার হাজার পিয়ানো। এক যুগ পেরিয়ে গেলেও সুর উঠেনি মূল্যবান পিয়ানোগুলোতে। ২০১১ সালে কোরিয়ান সরকার বাংলাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে এগুলো অনুদান হিসেবে দেয়। পিয়ানো বাজাতে শিক্ষকদের দেয়া হয় প্রশিক্ষণ। সামান্য প্রশিক্ষণে শিক্ষকরা এগুলো পরিচালনা করতে পারেননি। দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় নষ্ট হওয়ার পথে মূল্যবান এসব পিয়ানো।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের পাঁচ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি করে পিয়ানো দেয়া হয়। পিয়ানো প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কোরিয়ার বুইয়ং কোম্পানি। প্রতিটি পিয়ানো বাজার মূল্য প্রায় লাখ টাকা। বাংলাদেশের শিশুশিক্ষার্থীদের গান শিক্ষার জন্য এসব পিয়ানো সরবরাহ করে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। এসব পিয়ানো পরিচালনার জন্য পিয়ানো সরবরাহকৃত বিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষককে দেয়া হয় প্রশিক্ষণ। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ঢাকা শহর ও জেলা শহরে প্রশিক্ষণ বাবদ টিএ/ডিএ ও অন্যান্য বাবদ খরচ হয় মাথাপিছু প্রায় পাঁচ হাজার টাকা করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা গেছে, এগুলো শুধু সরবরাহ আর প্রশিক্ষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। এক যুগ পাড় হয়ে গেলেও এ উদ্যোগ সফল হয়নি।
পিয়ানো বাজানো প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন বালিয়াকান্দি উপজেলার এমন একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, সম্ভবত দুদিনের প্রশিক্ষণ পেয়েছিলাম, দুদিনের প্রশিক্ষণে এমন আধুনিক পিয়ানো পরিচালনায় আর কি শেখা যায়? দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় এটি এখন আর বাজে না, নষ্ট হয়ে গেছে। শ্রেণিকক্ষের কোনায় পড়ে থাকে বলেও তিনি জানান। পিয়ানো পাওয়া বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা স্বীকার করে বলেন, তারা যে প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন তাতে এটি ব্যবহার শিখতে পারেননি। কয়েকটি বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষ কিংবা স্টোর রুমের এক পাশে পড়ে আছে কালো রঙের ডিজিটাল পিয়ানো। বছরের পর বছর অব্যবহূত অবস্থায় পড়ে থাকায় নিস্ক্রিয় পিয়ানোটির উপরে জমেছে ধুলোর পুরু আস্তর। কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে পিয়ানো সম্পর্ক জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, শুনেছি পিয়ানো আছে তবে এ পর্যন্ত বাজাতে দেখিনি কাউকে।
বাগেরহাট জেলা সদরের কোধলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দীপা চক্রবর্তীর সঙ্গে কথা হলে তিনি আমার সংবাদকে জানান, পিয়ানো শেখার জন্য ইউআরসি ট্রেনিং সেন্টারে দুদিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। এ শিক্ষক বলেন, আমি হারমোনিয়াম বাজানোই জানি না। সে ক্ষেত্রে বিষয়টি আমার জন্য কঠিন ছিল। আর প্রশিক্ষণের সময় ছিল মাত্র দুদিন, এর মধ্যে পিয়ানো রপ্ত করা সম্ভব না। আবার সে সময় আমাদের যে ম্যাডাম সঙ্গীত জানতেন তিনি ছিলেন অন্য এক ট্রেনিংয়ে, ফলে প্রশিক্ষণটা আমাকেই নিতে হয়। এ কারণে আমার বিশেষ যোগত্যা অর্জন হয়নি। এ শিক্ষক আরও বলেন, এখন বলতে গেলে পিয়ানো শিখানো হয় না। জাতীয় সঙ্গীতটা গাওয়া হয়। তবে পিয়ানো অফিস রুমেই সুরক্ষিত আছে, কার্যত কিছুই হয় না বলে জানান এ শিক্ষক।
কথা হয় বগুড়া জেলার সদরের ঠনঠনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের সঙ্গে। তিনিও জানান, পিয়ানো দিয়ে প্রশিক্ষণ নেয়া পর্যন্তই। এরপর আর বাচ্চাদের শিখানোর বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। পিয়ানোটা বর্তমানে ইউআরসি সেন্টারে আছে বলে জানান ওই শিক্ষক। সাংস্কৃতিক চর্চার বিষয়ে কেন অবহেলা জানতে চাইলে এ শিক্ষক বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, পিয়ানোর এত পুরোনো ইতিহাস আমি বলতে পারব না, আমি নিজেই এসেছি ২০২১ সালে। পিয়ানো নিয়ে স্কুলগুলোতে সামনে কি কোনো পরিকল্পনা আছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আপনি ডিজি মহোদয়ের কাছে জেনে নেবেন। পাঁচ হাজার স্কুলে এত পিয়ানো দেয়া হলো, এ ছাড়াও ট্রেনিং বাবদ প্রায় পাঁচ কোটি টাকা খরচ এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
ভবিষ্যতে কোনো প্রোগ্রাম এলে প্রাথমিক স্কুলের সাংস্কৃতিক চর্চার বিষয়টি যোগ করবেন বলে জানান তিনি। বর্তমানে তেমন কিছু করার পরিকল্পনা নেই জানিয়ে এ কর্মকর্তা আরো বলেন, আমরা প্রত্যেক স্কুলে বছরে একটি স্লিপ ফান্ডের মাধ্যমে টাকা দিয়ে থাকি। ওই ফান্ড থেকে স্কুলগুলো তাদের দরকারি ক্রীড়া সামগ্রী অথবা হারমনিয়াম/তবলা ক্রয় করে নিতে পারে। স্পেসিফিক এ ধরনের কোনো ফান্ড বা কর্মকাণ্ড আমাদের নেই। পরিচালক বলেন, আমাদের নীতিমালায় বলা আছে স্লিপ ফান্ড থেকে একটি স্কুল তাদের দরকারি সামগ্রী ক্রয় করতে পারবে।