Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪,

রমজানের পরও যেসব আমলের প্রতি যত্নশীল হবেন

মো. মাসুম বিল্লাহ

এপ্রিল ২৯, ২০২৩, ১১:৩২ এএম


রমজানের পরও যেসব আমলের প্রতি যত্নশীল হবেন

রমজানকে বলা হয় ইবাদতের বসন্তকাল। এ মাস আল্লাহর নৈকট্য ও পুণ্য লাভের সর্বোত্তম সময়। কেননা রমজান মাসে আল্লাহ রহমতের দুয়ার খুলে দেন এবং প্রতি নেক কাজের প্রতিদান বহু গুণ বৃদ্ধি করেন। এ মাসে আল্লাহর রহমত ও বরকত লুফে নিতে বেশি বেশি ইবাদতে মগ্ন হন মুসলিমরা।

রমজানের পর মানুষের মধ্যে আগের মতো আমল-ইবাদতের প্রতি তেমন উদ্যমতা দেখা যায় না। অনেকে ফরজ ইবাদতগুলো পালন করতেও অবহেলা করেন। কিন্তু রমজানে আমলের এই অনুশীলন পুরো বছর ধরে রাখা উচিত। রমজান পরবর্তী সময়েও যেসব আমলের প্রতি যত্নশীল হওয়া আবশ্যক তা তুলে ধরা হলো-

  • পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময় মতো জামাতে আদায়

রমজান, রমজানের বাইরে বাকি ১১ মাস অর্থাৎ পুরো বছর নামাজ আদায় করা ফরজ। ফরজ নামাজ নির্ধারিত সময়ে আদায় করাও ফরজ। প্রত্যেক নামাজের জন্যই সময় নির্ধারণ করা আছে। ওয়াক্ত বা সময় চলে গেলে সে নামাজের কাজা আদায় করা যায়। নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়লা ঘোষণা করেন- ‘নিশ্চয় নামাজকে ঈমানদারের জন্য নির্ধারিত সময়ে (আদায় করা) আবশ্যক কর্তব্য করা হয়েছে।’ (সূরা নিসা : আয়াত-১০৩)

নামাজ আদায়ে গরিমসি করা উচিত নয়। নামাজ না পড়া পরকালে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ। পবিত্র কুরআনে এসেছে, ‘(জাহান্নামিদের জিজ্ঞাসা করা হবে) তোমাদের কোন জিনিস সাকারে (জাহান্নাম) নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না।’ (সূরা : মুদ্দাসসির, আয়াত : ৪২-৪৩)

  • মসজিদে বেশি বেশি যাতায়াত  করা

রমজানে ইতিকাফ ও নামাজের প্রতি যত্নশীল হওয়ার কারণে মসজিদের সঙ্গে এক ধরনের আত্মার সম্পর্ক গড়ে উঠে। মসজিদে বেশি বেশি যাওয়া-আসা করা হয়। মসজিদে বেশি বেশি যাতায়াতের এই গুণটি প্রশংসনীয়। রমজানের পরও মসজিদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত। কারণ, মসজিদে বেশি সময় অতিবাহিত করা ব্যক্তির জন্য আল্লাহর রাসূল সুসংবাদ দিয়েছেন।

হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা মসজিদে যায়, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারির ব্যবস্থা করেন। সকালে অথবা সন্ধ্যায় যতবার সে মসজিদে যায়, ততবারই আল্লাহ তায়ালা তার জন্য মেহমানদারির ব্যবস্থা করেন। (সহিহ বুখারি, ৬৩১, সহিহ মুসলিম, ১৫৫৬, সহিহ ইবনে খুজাইমা, ১৪৯৬, সহিহ ইবনে হিব্বান, ২০৩৭)

  • কুরআনা তিলাওয়াত কমিয়ে না দেয়া

কুরআন নাজিলের মাস রমজানে প্রায় সব মুসলমানই কুরআন তিলাওয়াতের প্রতি যত্নশীল হয়ে থাকেন। কিন্তু রমজানের পর পুরো বছর কুরআনের সঙ্গে তেমন কোনো সম্পর্ক থাকে না। রমজানের বাইরেও পুরো বছর কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত।

কুরআন তিলাওয়াত মানুষের মনকে প্রশান্ত রাখে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।’ (সূরা রা‘দ, আয়াত : ২৮)

  • তাহাজ্জুদের প্রতি যত্নশীল হওয়া

 তাহাজ্জুদ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের উপায়। রমজানে শেষ রাতে সাহরিতে উঠার কারণে অনেকেই সহজে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে পারতেন। কিন্তু বছরের অন্য সময় গভীর ঘুমের কারণে সবার পক্ষে তাহাজ্জুদ পড়া হয়ে উঠে না। কিন্তু রমজানের বাইরেও পুরো বছর তাহাজ্জুদের ফজিলত লাভে যত্নশীল হওয়া উচিত।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও ধারাবাহিকভাবে তাহাজ্জুদ পড়ার প্রতি গুরুত্ব দিতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আ’স রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আবদুল্লাহ! তুমি অমুক ব্যক্তির মতো হয়ো না, সে রাত জেগে ইবাদাত করত, পরে রাত জেগে ইবাদত করা ছেড়ে দিয়েছে। (বুখারি, হাদিস-১১৫২)

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।’ (সূরা রা‘দ, আয়াত : ২৮)

  • গিবত পরনিন্দা থেকে দুরে থাকা

গিবত বা পরনিন্দা ব্যাভিচারের চেয়েও জঘন্যতম গুনাহমি রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে অনেকেই গিবত থেকে বেঁচে থাকলেও পুরো বছর এ নিয়ে তেমন সচেতনতা দেখা যায় না। কিন্তু গিবত মানুষের ঈমান ও আমল ধ্বংস করে দেয়। পার্থিব ও অপার্থিব কল্যাণ দূর করে দেয়। ইসলামে কাউকে সামনে থেকে নিন্দা করাও মারাত্মক অপরাধ। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘পেছনে ও সামনে প্রত্যেক পরনিন্দাকারীর জন্য দুর্ভোগ-ধ্বংস।’ (সূরা হুমাজাহ, আয়াত-০১) আয়াতে আল্লাহ তাআলা সামনে-পেছনে কারো নিন্দা বা গিবত করা অথবা সামনাসামনি কাউকে দোষারোপ করা ও মন্দ বলা জঘন্য পাপ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এর শাস্তিও ভয়াবহ।

  • মিথ্যা বলা থেকে দুরে থাকা

মিথ্যা বলা অথবা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া গর্হিত অপরাধ। মিথ্যাবাদীর পক্ষে যেকোনো ধরনের পাপ করা সম্ভব। কেননা সে পাপ কাজ করে খুব সহজে তা অস্বীকার করতে পারে। এ বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা হলো, কোনো বিষয়ে নিশ্চিত জানাশোনা না থাকা সত্ত্বেও সে বিষয়ে অনুমানভিত্তিক কোনো কথা বলা অপরাধ।

Link copied!