মে ৯, ২০২৩, ১১:৫৯ পিএম
১০ টাকা শাকের আঁটি এখন ৩৫-৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে * আদা-পেঁয়াজ-রসুনের দাম ৪-৫ দিনে ৫০-৬০ টাকা বাড়ল * ১০০ টাকার নিচে কোনো গ্রীষ্মকালীন সবজি নেই * ২০০ টাকার নিচে কোনো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না * গরু-মুরগি তো গরিব-মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে
তেলাপিয়া, পাঙ্গাস ও সবজি দিয়ে কোনোমতে সংসার চলত, এখন সবজি কেনাও স্বপ্ন হয়ে গেছে —এমন আক্ষেপ বানু আক্তারের
ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, এলসি খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে বৃষ্টি না হওয়ায় অতিরিক্ত গরমে কৃষকের ফসল মরে যাচ্ছে
ক্ষেতেই শুকিয়ে যাচ্ছে
কুরবানি ছাড়া গরুর মাংস ভাগ্যে জুটে না। মুরগি খাওয়াও কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তেলাপিয়া, পাঙ্গাস ও সবজি দিয়েই জীবন চলছে। গত তিন-চারদিন সবজি কেনাও স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৬০-৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। আর গ্রীষ্মকালীন সব সবজি তো ১০০ ছাড়িয়েছে। আদা, পেঁয়াজ-রসুনের দামও গত চার-পাঁচদিনে প্রায় ৫০ টাকা বেড়ে গেছে, আমরা কী করে জীবন চালাব— এমন প্রশ্ন বানু আক্তারের। তিনি মতিঝিল এলাকায় মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। মধ্যবিত্তদের জীবন আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি বেসরকারি অফিসে কাজ করেন নাজমুল ইসলাম। গতকাল সকালে যাত্রাবাড়ী বৌ বাজারে এসে ঘুরে ঘুরে শুধু দাম জিজ্ঞেস করছেন তিনি। কিন্তু কিছুই কেনার সাহস করতে পারছেন না। এক হাজার টাকা নিয়ে দুই কেজি চাল, এক কেজি তেল ও এক কেজি পেঁয়াজ কেনার পর প্রায় টাকা শেষ। কিনতে পারছেন না সবজি। পরে ৩৫ টাকা দিয়ে এক কেজি আলু কিনে তিনি বাসায় ফেরেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, গত দুই বছরে আমার কোনো সেলারি বাড়েনি। কিন্তু প্রতিদিনই বেড়েছে কোনো না কোনো জিনিসপত্রের দাম। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গত চার-পাঁচ দিনে আদা, পেঁয়াজ ও রসুন কেজিপ্রতি প্রায় ৫০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া সবজির দাম হঠাৎ লাফিয়ে প্রায় দিগুণ হয়ে গেছে। ১০ টাকা শাকের আটি এখন ৩৫-৬০ টাকা। ১০০ টাকার নিচে কোনো গ্রীষ্মকালীন সবজি নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাড়তি দামে মানুষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সরেজমিন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে টমেটো, বরবটি ও বেগুন ছাড়া গ্রীষ্মকালীন সব সবজির দাম বেশ চড়া। ঝিঙ্গা, করলা, কাঁকরোল, ঢেঁড়শের দাম ১০০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল টমেটো বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা ও ভালো মানের বেগুন বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৮০ টাকায়। তাছাড়া গ্রীষ্মকালীন সবজি ঝিঙ্গা ১২০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ১১০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। পটোল, মুলা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা। ধুন্দল, বরবটি, চিচিঙ্গা ৮০-১০০ টাকা এবং শজিনা ১২০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি ধনেপাতার দাম ৩০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। তিন দিন আগেও যে আলু ২৫ টাকায় কেনা গেছে এখন তা ৩৫ টাকা। ১০-১৫ টাকার কাঁচা পেঁপের কেজি এখন ৮০ টাকা ছুঁয়েছে। ৬০-৭০ টাকার নিচে কোনো সবজিই মিলছে না।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে মাছের দাম কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। সামুদ্রিক মাছের জোগান কমাতেই স্থানীয় প্রজেক্ট ও পুকুরে চাষ করা মাছের চাপ বেড়েছে। তাছাড়া বাজারে ২০০ থেকে ২৫০ টাকার নিচে কোনো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল বাজারে রুই মাছ বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, কাতলা বিক্রি হয়েছে ৩২০ থেকে ৩৫০, পাবদা ৩৫০ থেকে ৬০০, শিং ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। সমুদ্রের কোরাল বিক্রি হয়েছে ৫৫০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ভালো মানের চিংড়ি বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ১৩০০ টাকা কেজিতে।
ক্রেতারা বলছেন, একেবারেই লাগাম টানা যাচ্ছে না নিত্যপণ্যের বাজার। চিনির পর এবার অস্থির আদা-পেঁয়াজ-রসুনের দাম। পেঁয়াজে ভারতের আমদানি বন্ধসহ এলসি খরচ বৃদ্ধির কারণে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। গতকাল কাওরান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ১৫ দিন ধরে পেঁয়াজ, আদা ও রসুন বিক্রি হচ্ছে চড়া দরে। আমদানিকৃত পেঁয়াজ সংকটের কারণে দেশীয় পেঁয়াজের দাম বেশ চড়া। পাইকারি বাজারে দেশীয় পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৪২ থেকে ৫৪ টাকা। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজিতে।
অন্যদিকে এলসি (ঋণপত্র) খরচ বাড়ার কারণ দেখিয়ে পেঁয়াজের পাশাপাশি বাড়তে শুরু করেছে আদা ও রসুনের দাম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে আদা ও রসুনের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০-২৫ টাকা পর্যন্ত। যাত্রাবাড়ী এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, আদা বিক্রি হয়েছে মানভেদে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকায়। যা ১৫ দিন আগে বিক্রি হয়েছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। আর ভিয়েতনামের আদা বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকার বেশি। তাছাড়া বাজারে দেশি ও চীনা আদার সংকট রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে দাম বাড়তে শুরু করেছে রসুনেরও। এক সপ্তাহের ব্যবধানে চীনা রসুনের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। গতকাল প্রতিকেজি চীনা রসুন বিক্রি হয়েছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা কেজিতে। আর দেশীয় রসুনের সংকট রয়েছে। দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্যবসায়ী আজিমুদ্দিন জানান, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। আমরা পাইকারি বাজারে কেজি ৫৫ টাকা বিক্রি করছি। সামনে দাম আরও বাড়তে পারে। আরেক ব্যবসায়ী আলী হোসেন বলেন, ‘পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ থাকায় দেশীয় পেঁয়াজে চাপ বেড়েছে।’
কাওরান বাজারের ডিম ব্যবসায়ী ইয়াছিন মিয়া বলেন, গত সপ্তাহে অতিরিক্ত গরমে বেশি ডিম নষ্ট হয়েছিল। ফলে ডিমের দাম কমতির দিকে থাকলেও আজ (গতকাল) বাজারে কিছুটা বেড়েছে। হয়তো ব্যবসায়ীরা খরচ সমন্বয় করে কয়েক টাকা বাড়তি দরে বিক্রি করছে। তাছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কমেনি গরু ও খাসির মাংসের দাম। গরুর মাংস ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে গরুর দাম বাড়ায় খরচ বেশি পড়ছে। ফলে গরুর মাংস বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। গতকাল বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে হাঁড়সহ ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা ও হাঁড় ছাড়া মাংস ৯০০ টাকার উপরে। আর খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে ১১০০ টাকা থেকে ১১৫০ টাকায়। হঠাৎ দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কাওরান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, আপনারা জানেন গত কয়েকদিন ধরেই প্রচণ্ড গরম পড়ছে। পানির অভাবে কৃষকের সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সব ফসল শুকিয়ে যাচ্ছে। আশপাশের জলাশয় শুকিয়ে গেছে কোথাও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা কৃষক থেকে এমনই খবর পেয়েছি। ধারণা করা হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে হয়ত দাম আরও বেড়ে যেতে পারে।