Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪,

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ‘মিয়া ভাই’র শেষবিদায়

মো. মাসুম বিল্লাহ

মে ১৭, ২০২৩, ০৮:২৬ এএম


শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ‘মিয়া ভাই’র শেষবিদায়

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে গতকাল মঙ্গলবার ফারুককে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকারের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীসহ নানা পেশার মানুষ ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। বীর মুক্তিযোদ্ধা, সংসদ সদস্য ও চিত্রনায়ক ফারুকের মরদেহ গতকাল বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আনা হয়। শুরুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের পক্ষে লে. কর্নেল সৈয়দ মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষে শ্রদ্ধা জানান সংসদ সচিবালয়ের সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস এম এম নাঈম রহমান।

আওয়ামী লীগের পক্ষে দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের নেতারা শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শেষে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘চিত্রনায়ক ফারুক ছিলেন বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি অবিচল ও অনড় পাথরের মতো। তিনি তার আদর্শ থেকে কখনো একচুলও ছাড় দেননি। ফারুকের বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র আমার কাছে ভালো লেগেছে। তার লাইফটা ছিল কালারফুল। একদিকে ভালো নায়ক, অন্যদিকে রাজনীতিবিদ। ফারুককে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শেষে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘মানবিক গুণাবলির সব গুণই তার ছিল। তার সঙ্গে আমাদের পরিবারের একটি বন্ধন ছিল। জাতীয় সংসদে আমরা পাশাপাশি আসনে বসতাম। দুই বছর ধরে আসনটি শূন্য। দুই বছর ধরে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। আমরা ভেবেছিলাম, তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন। দুর্ভাগ্য আমাদের, তাকে হারিয়ে শূন্যতা তৈরি হয়েছে।’

ফারুকের ছেলে রওশন হোসেন পাঠান বলেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, আপনারা উনার প্রতি কোনো দুঃখ রাখবেন না। উনি যদি কোনো কষ্ট দিয়ে থাকেন, উনাকে মাফ করে দেবেন। আপনারা কোনো দাবি রাখবেন না। আপনারা উনার জন্য দোয়া করবেন।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান, মহানগর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনসহ নানা রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের তরফ থেকে ফারুককে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ফারুককে শ্রদ্ধা জানাতে ইলিয়াস কাঞ্চন, ফেরদৌস, মিশা সওদাগর, নিপুণ, জায়েদ খানসহ আরও অনেকে এসেছিলেন শহীদ মিনারে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফারুককে শ্রদ্ধা জানাতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর শহীদ মিনার থেকে ফারুককে বহনকারী কফিন তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল এফডিসিতে নেয়া হয়। এফডিসিতে ফারুককে শেষবারের মতো বিদায় জানান সহকর্মী শিল্পী, নির্মাতা, প্রযোজক ও কলাকুশলীরা। শহীদ মিনার ও এফডিসিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শেষে ফারুককে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে নেয়া হয়, সেখানে তার জানাজা হয়। এরপর গুলশানে আজাদ মসজিদে তার আরেকবার জানাজা হয়। সন্ধ্যায় তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কালীগঞ্জের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

দুই বছরের বেশি সময় ধরে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ফারুক। গত সোমবার সকালে তার মৃত্যু হয়। এর আগে গত সোমবার সকালে তার মরদেহ ঢাকায় পৌঁছে। সেখান থেকে উত্তরা নিজ বাসভবনে নেয়া হয়। তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে কষ্ট হচ্ছে বলে জানান আলমগীর। তিনি বলেন, ফারুক নেই কথাটা ভাবতে কষ্ট হচ্ছে তার, কষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। আবার অসুস্থ অবস্থায় গত দুই বছর কষ্ট পাচ্ছিলেন ফারুক। আলমগীর আরও বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা চলাকালীন ভাবির সঙ্গে আমার প্রায়ই কথা হতো। ফারুক অনেক কষ্ট পাচ্ছিল। সে তার কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়েছে। আল্লাহ ফারুকের সব গুনাহ মাফ করে তাকে জান্নাতবাসী করুক। ওর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’ সেই সঙ্গে তিনি দেশবাসীর কাছে অনুরোধ করেন, যে যেভাবে পারেন সেভাবে যেন চিত্রনায়ক ফারুকের জন্য দোয়া করেন। 
 

Link copied!