Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪,

লোডশেডিংয়ে বাড়ছে জনআক্রোশ অসন্তোষ

হামলার শঙ্কায় বিদ্যুৎকর্মীরা

মো. মাসুম বিল্লাহ

জুন ৫, ২০২৩, ১২:০২ এএম


হামলার শঙ্কায় বিদ্যুৎকর্মীরা
  • পল্লী বিদ্যুতের ৮০টি সমিতি থেকে চাওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা
  •  বিশেষ নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ পুলিশ সদর দপ্তরের
  •  বিদ্যুৎ অফিস ও স্থাপনা ঘিরে গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল জোরদার

জনআক্রোশ-অসন্তোষ বাড়ছে, গ্রাহকদের বোঝানোর চেষ্টা করছি

—পল্লী বিদ্যুতের মাঠ কর্মকর্তা

তীব্র দাবদাহের সাথে ঘন ঘন লোডশেডিং বিপর্যস্ত করে তুলেছে জনজীবন। রাজধানীতে দিন-রাত মিলিয়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। এর চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা গ্রামাঞ্চলে। সেখানে দিনে আট থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। দাবদাহ আর লোডশেডিংয়ে কষ্টের মাত্রা যত বাড়ছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও জনগণের ক্ষোভ তত বাড়ছে। এর মধ্যে মাঠপর্যায়ে বিদ্যুৎকর্মীদের ওপরই ক্ষোভ প্রকাশের ঘটনা ঘটছে বেশি। বিভিন্ন স্থানে তীর্যক ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। সারা দেশে পল্লী বিদ্যুতের ৮০টি সমিতিই এখন জনআক্রোশ ও গ্রাহক অসন্তোষের তোপে— বলছেন সমিতির কর্মকর্তারা। 

এরপরও তারা বলছেন, জুন মাসজুড়েই থাকবে চলমান লোডশেডিং। প্রাথমিক জ্বালানি গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি তেল সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। বন্ধ আছে বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রাথমিক জ্বালানির সরবরাহ স্বাভাবিক হলে আগামী মাসে লোডশেডিং কমে আসবে। তবে একেবারে বন্ধ হবে, তাও বলা যাচ্ছে না। এতে আরও ক্ষুব্ধ হচ্ছে জনতা। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা রক্ষায় সতর্ক থাকতে মাঠপর্যায়ে পুলিশের সব ইউনিটকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এক সভায় লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাব-স্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তাব্যবস্থা আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জিএম-ডিজিএমরা।

কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, ‘জনআক্রোশের তথ্য আমরা পুলিশকে জানিয়েছি। যেকোনো সময় গ্রাহকদের আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারে। গত দু-দিন ধরে ৪০-৪৫ শতাংশ লোডশেডিং হচ্ছে। গরম যত বাড়ছে গ্রাহকদের আক্রোশও তত বাড়ছে। বকেয়া বিলের বিষয়ে গেলেও গ্রাহকদের উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে। আমরাও আশঙ্কা করছি যেকোনো সময় গ্রাহক অসন্তোষ ঘটতে পারে। তাই জেলা প্রশাসক-পুলিশ সুপারকেও বিষয়টি জানিয়েছি। এ ছাড়া আমাদের প্রচুর জনবল রয়েছে। তাদের ফিল্ডে পাঠিয়ে গ্রাহকদের বুঝানোর চেষ্টা করছি আমরা।’ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) হিসাব অনুযায়ী চাহিদার তুলনায় উৎপাদনে ঘাটতি থাকায় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডসহ বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলো   ষ এরপর পৃষ্ঠা ২ কলাম ১ আগে থেকেই লোডশেডিং শিডিউল জানাচ্ছে। যদিও ভুক্তভোগীরা বলছেন, সেই শিডিউলও ঠিক রাখতে পারছেন না বিদ্যুৎ বিভাগ। লোডশেডিংয়ের মাত্রা ক্রমাগতই বাড়ছে। তাদের মতে, সরকারি হিসাবে লোডশেডিংয়ের যে তথ্যই দেয়া হোক না কেন, প্রকৃত অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। দিনে ছয়-সাতবার লোডশেডিং হচ্ছে। তীব্র গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। একবার বিদ্যুৎ গেলে ফিরে আসতে এক থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত লাগছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও মানুষ লোডশেডিং নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছেন।

চুয়াডাঙ্গা জোনাল অফিসের মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম কাজী মোছা. আয়শা সিদ্দিকা সরকার আমার সংবাদকে বলেন, ‘হুমকি না থাকলেও বিভিন্ন মাধ্যমে গ্রাহক অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে। আমরা তাদের মোটিভেট করার চেষ্টা করছি। জেলা প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসন সবার নলেজে দিয়েছি। সবার সমন্বয়েই গ্রাহকদের অসন্তোষ যেন চরম পর্যায়ে না পৌঁছায় সে জন্য তাদের মোটিভেট করার চেষ্টা করছি।’ বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তীব্র দাবদাহ কমে এলে বিদ্যুতের চাহিদাও কিছুটা কমে আসবে। তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী, দিনাজপুর, নীলফামারী, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে তীব্র দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকা, বরিশাল বিভাগসহ রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। শিগগিরই এই দাবদাহ কমার কোনো লক্ষণ নেই। ফলে আগামী আরও কয়েক দিন গরম আর লোডশেডিংয়ের সঙ্গে লড়াই করে চলতে হবে।  সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সভায়ও এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় লোডশেডিংয়ের কারণে সংক্ষুব্ধ লোকজন সরাসরি ফোন করে বিদ্যুৎ অফিসে হামলার হুমকি দিচ্ছেন— এমন তথ্যও উঠে আসে। যশোরে এমন অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আতিকুল ইসলাম মাঠ পুলিশকে সব জায়গায় খোঁজখবর নেয়ার নির্দেশ দেন। লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যেন কিছু করতে না পারে, এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনাও দিয়েছেন। 

জানা গেছে, গত এপ্রিলেই লোডশেডিংয়ের কারণে ফেনীর ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও সোনাগাজীতে ক্ষুব্ধ লোকজন বিদ্যুৎ অফিসে চড়াও হয়েছেন। সৈয়দপুরসহ দেশের কয়েকটি স্থানে উত্তেজনা দেখা দেয়। এরপরই মূলত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিভিন্ন অফিস থেকে বিদ্যুৎ অফিসসহ স্থাপনাগুলোর বাড়তি নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশ প্রশাসনের কাছে চিঠি দেয়া হয়। এমন একটি চিঠি থেকে জানা যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় এবং লো-ভোল্টেজের কারণে চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। সমিতির আওতাভুক্ত এলাকাগুলোতে অসহনীয় লোডশেডিং চলছে। তীব্র গরমে গ্রাহকরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। সেচকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক এলাকায় গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র ঘিরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। চিঠিতে সংশ্লিষ্ট স্থাপনা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা বিধানে সার্বিক সহযোগিতার অনুরোধ জানানো হয়।  

একাধিক পুলিশ সুপাররা আমার সংবাদকে জানান, বিদ্যুতের স্থাপনাগুলো কেপিআইভুক্ত। এসব স্থাপনায় পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যরাও পাহারায় থাকেন। সার্কেল এসপি, থানার ওসিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কেপিআই স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করেন। স্থাপনার সিসিটিভি, দেয়ালসহ অন্যান্য নিরাপত্তাসামগ্রী ঠিক আছে কি-না, সেটি যাচাই করেন। নিরাপত্তাবিষয়ক অন্যান্য খোঁজখবরও নেন। পল্লী বিদ্যুত সমিতির চিঠি পাওয়ার পর বিদ্যুৎ স্থাপনাগুলোর এলাকায় টহল বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মঞ্জুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের সব স্থাপনাই কেপিআইভুক্ত। এসব স্থাপনায় সবসময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকে। এরপরও বর্তমান সময়ে যেহেতু তীব্র দাবদাহ ও লোডশেডিংয়ের বিশেষ সময় অতিবাহিত করছে মানুষ সেহেতু বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হবে।’ 

 

Link copied!