Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪,

সংকট সমাধান কোন পথে

সংলাপ নাকি রাজপথ

সৈয়দ সাইফুল ইসলাম

জুন ৭, ২০২৩, ১১:১৮ পিএম


সংলাপ নাকি রাজপথ

যারা সংলাপ নিয়ে কথা বলেছেন তারা আ.লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা
—আব্দুল খালেক
উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, আ.লীগ

প্রস্তাব দিলে তখন দেখা যাবে, রাজপথে আছি   সেখানেই সমাধান চাই
—খন্দকার মোশাররফ হোসেন
স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি

সংলাপের বিকল্প নেই
তা না হলে দেশ বিপদে পড়বে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে
—ড. বদিউল আলম
সম্পাদক, সুজন

নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা কী হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে সর্বত্রই কৌতূহল। কারণ, বিরোধী দলগুলো নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার চায়। আর এ জন্য তারা বছরে পর বছর রাজপথে আন্দোলনে রয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। তারা কোনোভাবেই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে রাজি নয়। এই একটি ইস্যুই এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে মুখ্য ইস্যু। যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দুই বিরোধীয় পক্ষ দুই মেরুতে অবস্থান করছে। কিন্তু উভয় পক্ষের এই অনঢ় অবস্থান শেষ পর্যন্ত নড়চড় হতে পারে বলে কিছুটা আভাস পাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন, নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে হয়তো বরফ গলবে। কিন্তু ঠিক কী ধরনের ছাড় দেবে দলগুলো তা নিয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো ইঙ্গিত নেই। তবে ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপির সঙ্গে সংলাপ করার কোনো আগ্রহ না দেখালেও সাম্প্রতিক চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। চলমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে সংলাপে বসার পক্ষে নমনীয় মনোভাব দেখাচ্ছেন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও দায়িত্বশীল মন্ত্রী। এদিকে জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই এগোচ্ছে, কূটনৈতিক অঙ্গনে দৌড়ঝাপ ততই বাড়ছে। 

বিশেষ করে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পাটি,  ষ এরপর পৃষ্ঠা ১১ কলাম ১ জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। কোনো কোনো দলের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। গতকাল বুধবারও প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ-বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে বৈঠকে কি নিয়ে আলোচনা হয় তা সন্ধ্যা পর্যন্ত জানতে পারেননি গণমাধ্যমকর্মীরা। রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে বিরোধীয় দুটি পক্ষ কে কতটুকু ছাড় দেবে না দেবে সেটি এখনো দৃশ্যমান হয়নি। তবে সংলাপে বলে আলাপ-আলোচনার একটি পথ খোলার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সংলাপ নিয়ে আওয়ামী লীগের নমনীয় মনোভাবের বিষয়ে বিএনপির মনোভাবে হচ্ছে— আগে আওয়ামী লীগ নিজেরা ঠিক করুক তারা আসলে কী চাচ্ছে, এরপর এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করবে বিএনপি। 

গত ৬ জুন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ১৪ দলীয় জোটের সমাবেশে অংশ নিয়ে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ও ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু। সেখানে তিনি বলেন, প্রয়োজনে জাতিসংঘের প্রতিনিধি আসুক আমরা বিএনপির সঙ্গে মুখোমুখি বসে আলোচনা করে দেখতে চাই, কিভাবে সবাই মিলে একটি অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়। সেটি আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা হতে পারে, অন্য কোনো পথে নয়। ২০১৩ সালে জাতিসংঘের প্রতিনিধি তারানকো বাংলাদেশে এসেছিলেন। দুদলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এবারও জাতিসংঘ প্রতিনিধি এলে আমরা তাদের সামনে আলোচনা করতে রাজি আছি।’ তিনি এও বলেন, ‘আমরা বিএনপির সঙ্গে মুখোমুখি বসে আলোচনা করে দেখতে চাই।’ অবশ্য একদিন পর গতকাল আমির হোসেন আমু তার সুর পাল্টেছেন। গতকাল তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, আমির হোসেন আমুর বক্তব্য তার ব্যক্তিগত। তথ্যমন্ত্রী যেদিন এমন মন্তব্য করলেন ঠিক একই দিন ওই একই ইস্যুতে কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল দুপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সদর দপ্তরে স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৩ উদযাপন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সংলাপ চলমান থাকবে। সংলাপের বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, সব কিছুই সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।’ বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করছেন। আগামী নির্বাচনে তাদের কোনো ষড়যন্ত্র বা পরিকল্পনা আছে কি-না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ। তারা যেটি বলেছে সেটিই যথেষ্ট। তারাই মনিটরিং করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, রাষ্ট্রদূতরা যেন তাদের শিষ্টাচার মেনে নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন এটিই আমাদের প্রত্যাশা।’ আওয়ামী লীগকে একটি জনপ্রিয় দল উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘দীর্ঘদিন ক্ষমতায় রয়েছে। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে, জনগণের ক্ষমতায় চলতে হবে। আর জনগণের ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে হলে সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাই আলোচনার বিকল্প কিছু নেই।’

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল খালেক বলেন, ‘সংলাপ তো হতেই পারে। এখন নির্বাচনের সময় নতুন নতুন অনেক কথা আসবে। রাজনৈতিক সংকট সমাধানে অতীতেও সংলাপ হয়েছে, বিএনপি সেই সংলাপে অংশ নিয়েছে। এখনো সংলাপ হতে পারে।’ আমার সংবাদের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘যারা সংলাপ নিয়ে কথা বলেছেন তারা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তাদের কথার অবশ্যই গুরুত্ব আছে। তবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদে কোনো আলোচনা হয়নি। সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদের কোনো মিটিংও হয়নি।’ আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু গত মঙ্গলবার যে কথা বলেছেন, তা নিয়ে বিএনপি মহাসচিব সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এ বিষয়ে আমরা অফিসিয়ালি কিছু জানি না। আমির হোসেন আমুর বক্তব্য কি আওয়ামী লীগের বক্তব্য? তিনি কি আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হিসেবে কথা বলছেন? আমরা জানি না। তিনি ১৪ দলের নেতা এবং মনে হয় তাদের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। এখন তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামেও নেই। সে ক্ষেত্রে প্রথম কথা হচ্ছে— তার কথাকে আমরা আওয়ামী লীগের বক্তব্য মনে করব কি-না? দ্বিতীয় কথা হচ্ছে— ১৪ দল তো সিদ্ধান্ত নেয় না, সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। এটি আদৌ আওয়ামী লীগের প্রস্তাব কি-না, সেটি না জেনে মন্তব্য করাটা ঠিক হবে না।’

এ বিষয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতারা একেক জন একেক কথা বলেন। তারা নিজেদের কথায় নিজেরা ঠিক থাকেন না। বিচ্ছিন্নভাবে কথা বলেন। এ অবস্থায় তাদের কথা নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক না। তারা আগে নিজেরা ঠিক করুক, কী করতে চায়।’ আমার সংবাদের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ যদি আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপের প্রস্তাব দেয়, সেটি তখন দেখা যাবে। এখন আমরা রাজপথে আছি, সেখানেই সমাধান চাই।’ 

এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘দেশের এখন যে সংকট রয়েছে তা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, সংকট সমাধানে সংলাপের বিকল্প নেই। তা না হলে দেশ বিপদে পড়বে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
 

Link copied!