Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪,

নির্বাচনি চ্যালেঞ্জে পুলিশ

নুর মোহাম্মদ মিঠু

জুন ১৭, ২০২৩, ১১:৪৮ পিএম


নির্বাচনি চ্যালেঞ্জে পুলিশ
  •  বাড়ছে লজিস্টিকস সাপোর্ট ও জনবল বেড়েছে বাজেটও  
  •  বিরোধীদের আন্দোলন, ভোটের আগের সময়গুলো চ্যালেঞ্জিং

বিএনপির একদফা পরাশক্তি-মার্কিন মিত্রদের উদ্বেগই বড় চ্যালেঞ্জ
ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ, 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক

সময় হলেই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে প্রস্তুতি
মনজুর রহমান
মুখপাত্র, পুলিশ সদর দপ্তর

প্রচলিত অপরাধ দমনের পাশাপাশি বহুমাত্রিক অপরাধ দমন করতে গিয়ে এমনিতেই বাড়তি দায়িত্বের খড়গ রয়েছে পুলিশের ওপর। এরই মধ্যে সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের শেষদিকে কিংবা আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সে হিসেবে আর মাত্র ক’মাস পরই নির্বাচনি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে পুলিশকে। সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশও প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। সম্প্রতি পুলিশের অপরাধবিষয়ক একটি সভায় এ কথা বলেন তিনি। 

তবে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকায় রাজপথে তাদের শক্ত অবস্থানের শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সিটি নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ অসংখ্য ইস্যুতে বিভিন্ন সময়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক হুমকি-ধমকির ধরন দেখে সংশ্লিষ্টদের অনেকেই মনে করছেন, এবারের নির্বাচনি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সহজ হবে না। তবে সরাসরি রাজনৈতিক অস্থিরতার হুমকি এখনো না পেলেও যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সক্ষম করেই প্রস্তুত করা হচ্ছে পুলিশ বাহিনীকে। যাতে যে কোনো ধরনের অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে বেগ পেতে না হয়। ইতোমধ্যে পুলিশে নির্বাচনি রদবদলও হয়েছে বলে কথিত রয়েছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশের ২৯ কর্মকর্তাকে বদলি করার মধ্য দিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মাঠ পর্যায়ে পুলিশি সক্ষমতার সমন্বয় করেছে বলে মনে করছেন অনেকেই। এ পর্যায়ে ২২ জেলায় নতুন পুলিশ সুপার ও সাত ডিআইজিকে বদলি করা হয়। নির্বাচনের আগে এ ধরনের বদলি আরও হতে পারে। 

সূত্র বলছে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার বদ্ধপরিকর। যে কারণে নির্বাচনের আগে ২২ পুলিশ সুপারকে পদায়নকৃত জেলাগুলোতে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যদিও বিএনপি বলছে— নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। তবুও একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে চায় সরকার। আর এ কারণেই পুলিশ প্রসাশনে রদবদল আনা হয়েছে। আর রদবদলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারদের যেসব স্থানে পদায়ন করা হয়েছে, সেসব স্থানের রাজনৈতিক কিংবা অন্য কোনো বড় ধরনের অঘটন বা অপ্রত্যাশিত ঘটনা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বও রয়েছে তাদের ওপর। যদি তারা সফল হন, তাহলে নির্বাচনের আগে তাদের আর কোথাও কোনো ধরনের বদলি করার সম্ভাবনা নেই। এ সময়ে রদবদলের এমন প্রক্রিয়াকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ আমার সংবাদকে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম স্বাভাবিক রেখে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করাই পুলিশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। দিন যতই যাচ্ছে, নির্বাচনকেন্দ্রিক পরিস্থিতিও ঘোলাটে হচ্ছে। পুলিশের জন্যও পরিস্থিতি ততই চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে। অন্যদিকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আন্তর্জাতিক মহলেরও তীক্ষ নজরদারি রয়েছে। পরাশক্তি, মার্কিন মিত্ররাও তাদের কনসার্ন প্রকাশ করছে; উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এটিও পুলিশের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। অনুমান করছি, এ বছরের শেষদিকে কিংবা আগামী বছরের শুরুতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। সে হিসাবে এখনো ছয় মাসের বেশি সময় আছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে সাম্প্রতিক রদবদলটি পুলিশের রুটিন রদবদলও হতে পারে। আবার শাসক দল অনেক আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠান করে ফেলতে পারে। কারণ, বিএনপি যে এক দফার দাবিতে রাজপথে সোচ্চার, সেই এক দফা দাবির আন্দোলন তীব্রতায় গড়ানোর সময় নাও দিতে পারে। সে লক্ষ্যেও রদবদল হতে পারে। তবে সার্বিক প্রক্রিয়াটি সরল অঙ্কের মতো নয়।’ 

এদিকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ছড়াচ্ছে উত্তাপ। কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হবে— তা নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর অবস্থানও মুখোমুখি। বিরোধী দলের পক্ষ থেকেও রয়েছে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা। স্বাভাবিকভাবেই বিরোধী দলের আন্দোলন জোরদার হলে তা দমনের মধ্য দিয়ে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তার দায়িত্বও পুলিশের ওপর বর্তায়। এতে শুধু নির্বাচন নয়, নির্বাচনের আগেই আগামী কয়েকটি মাসও পুলিশের জন্য হবে চ্যালেঞ্জিং। মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা বলছেন, তাদের ডিউটিও এখন আর আট ঘণ্টায় সীমাবদ্ধ নেই। ক্ষেত্রবিশেষে তা ১২ ঘণ্টাও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ঢাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি বিক্ষোভ ও সমাবেশের মতো পরিস্থিতি সামাল দিতেও ঘাম ঝরছে পুলিশের।

পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র (এআইজি, মিডিয়া) মনজুর রহমান আমার সংবাদকে বলছেন, ‘নির্বাচনের এখনো অনেক সময় বাকি। এখন যা হচ্ছে, তার সবই রুটিন ওয়ার্ক। নির্বাচনি চ্যালেঞ্জের বিষয়ে আমাদের গোয়েন্দাদের তথ্যের ভিত্তিতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেয়া হবে। নির্বাচনি চ্যালেঞ্জ আছে কি-না, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি। নির্বাচন ছাড়াও যে কোনো রাজনৈতিক ইস্যুতেই সব সময় সবচেয়ে বেশি উত্তাপ বিরাজ করে ঢাকার রাজপথে।’ জানতে চাইলে ডিএমপির একটি সূত্র বলছে, সামনের দিনগুলোতে যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জই মোকাবিলা করতে প্রস্তুত পুলিশ। লজিস্টিকস সাপোর্ট বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এএসআই ও কনস্টেবল পদে লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। নির্বাচনি চ্যালেঞ্জ ছাড়াও সার্বিক বিষয়গুলো আমলে নিয়েই একদিকে পুলিশ তাদের জনবলের বহর বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে পুলিশকে আধুনিক করার উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। এ জন্য বাজেটও বাড়ানো হয়েছে পুলিশের।

পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা নির্বাচনি চ্যালেঞ্জের বিষয়টি এখনো সময়ের ব্যাপার বলে মনে করলেও নির্বাচনের বছরে পুলিশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করেন খোদ সংস্থাটির প্রধান আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আগামীতে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত নানা চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। আইনশৃঙ্খলার যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। দেশকে অস্থিতিশীল করার যে কোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। এ জন্য পুলিশের প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস সাপোর্ট, প্রশিক্ষণ ও পুলিশ সদস্যদের দৃঢ় মনোবলও রয়েছে।
 

Link copied!