জুলাই ৭, ২০২৩, ১২:১৩ এএম
ভয়াবহ রূপে ডেঙ্গু
- ২৪ ঘণ্টায় দুজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৬৬১
- বিদ্যালয় খোলার পর ডেঙ্গু ও বন্যা পরিস্থিতি দেখে এবং মাঠপর্যায়ের তথ্যানুযায়ী
পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো
—মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন, পরিচালক (মাধ্যমিক উইং) মাউশি
শঙ্কা নিয়েই আগামী ৯ জুলাই রোববার দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে। তবে ভয়াবহ ডেঙ্গু যেভাবে চোখ রাঙাচ্ছে তাতে অভিভাবকরা আছেন ভীতসন্ত্রস্ত। অপরদিকে দেশের বেশ কিছু জেলায় বন্যার কারণে স্কুলভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দোলাচলের ওপর শিক্ষার্থীরা। রাজধানীসহ সারা দেশেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েই চলছে। স্কুলসংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাদের আগাম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যদি স্কুল খোলার পর বড় পাদুর্ভাব দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের এক ছাত্রী ও চট্টগ্রাম নগরীতেও পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের সেন্ট স্কলাস্টিকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শ্রাবন্তী সরকার। ঈদের ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিল ভারতের ত্রিপুরায়। তবে সেই আনন্দ রূপ নিলো বিষাদে। ছয় দিনের ডেঙ্গুজ্বরে গত মঙ্গলবার রাতে মৃত্যু হয় শ্রাবন্তীর। এর মাধ্যমে প্রাণঘাতী ডেঙ্গুর প্রকোপ চট্টগ্রামে কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠছে তা ফুটে ওঠেছে। দুই ভাইবোনের মধ্যে শ্রাবন্তী ছোট। বড় ভাই সৌভিক সরকারি বাণিজ্য কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থী। বাবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। মা গৃহিণী। সদ্য সন্তানহারা মায়ের যেন শোক প্রকাশেরও সুযোগ দিচ্ছে না এই ডেঙ্গু। কারণ এখন একমাত্র ছেলে সৌভিকও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় রাজধানীর পুরান ঢাকার বাসিন্দা তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর অভিভাবক ইকবালের সঙ্গে। তিনি জানান, পুরান ঢাকার এলাকা ডেঙ্গুর জন্য বিশেষ শঙ্কার জায়গা। ইকবাল বলেন, সরকারি কলোনিগুলোর আশপাশে বাচ্চাদের স্কুল। বড় বড় বিল্ডিং থেকে ময়লা ফেলা পরিবেশ নোংরা করা হচ্ছে। এতে মশার আরও বেড়ে যায়। আমরা নাগরিক সচেতন হলেও, সিটি কর্পোরেশন তো মশার লার্ভা বিনষ্ট করতে পারছে না। এ অভিভাবক আরো বলেন, তার সন্তান আজিমপুরের লিটোল এ্যানজেল স্কুলে পড়ালেখা করে। ঈদের আগে ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকায় কয়েকদিন স্কুলে পাঠাননি। তিনি বলেন, চারিদিকে যে অবস্থা বাসায় তো টেককেয়ার করে রাখতে পারছি। স্কুলে তো স্প্রের কোনো ব্যবস্থা নেই, এ নিয়ে ভয়ের মধ্যে আছি বলে জানান এ অভিভাবক। এ ছাড়াও সারা বছর সিটি কর্পোরেশন, ওয়াশার ড্রেনের সেন্টারিংয়ের কাঠগুলো কাজ হয়ে যাওয়ার পর আর খোলে না। ফলে একসময় কাঠগুলো পচে ড্রেন বন্ধ হয়ে যায় আর অবাদ্ধ ড্রেনে তখন মশার স্বর্গরাজ্য হয়ে দাঁড়ায়। অভিভাবক ইকবালের মতো অনেকেই বাচ্চাদের নিয়ে সংশয়ে আছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক উইং) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন আমার সংবাদকে বলেন, ‘ডেঙ্গুর প্রকোপ তো সারা দেশেই। আমরা বিদ্যালয় খোলার প্রস্তুতি ইতোমধ্যে নিয়েছি। বিদ্যালয় খোলার আগে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার সব নির্দেশনা দেয়া আছে। তিনি বলেন, আগামী ৯ জুলাই বিদ্যালয় খোলার পর ডেঙ্গু অথবা বন্যার প্রাদুর্ভাব যদি দেখা দেয় যায়, সে ক্ষেত্রে আমাদের একটি নির্দেশনা আসবে। এ ছাড়াও মাঠপর্যায় থেকে যে তথ্যগুলো আসবে সে অনুযায়ী আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো বলে জানান সরকারের এ কর্মকর্তা। অপরদিকে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলার আগেই পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এটি স্বাভাবিক নির্দেশনা দেয়া হয়ে থাক বলে জানা গেছে। তা ছাড়া এবার ডেঙ্গু ও বন্যার কারণে সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ৬৬১ জন নতুন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে আরও দুই ডেঙ্গুরোগীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ৬৬১ জন নতুন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৪৩৩ জন ও ঢাকার বাইরে ২২৮ জন। বর্তমানে সারা দেশে দুই হাজার ১২৯ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে এক হাজার ৪৯০ জন ও ঢাকার বাইরে ৬৩৯ জন।
২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ১১ হাজার ১১৬ জন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় সাত হাজার ৮৯৯ জন ও ঢাকার বাইরে তিন হাজার ২১৭ জন। একই সময়ে সারা দেশে ছাড়প্রাপ্ত ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা আট হাজার ৯২৩ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ছাড়প্রাপ্ত ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা ছয় হাজার ৩৫৯ জন ও ঢাকার বাইরে দুই হাজার ৫৬৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬২ হাজার ৩৮২ জন ও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান ২৮১ জন।