জুলাই ১০, ২০২৩, ১২:৫৫ এএম
- প্রতিহতের ঘোষণা রেজাপন্থিদের
- দুই দিনের মধ্যে অফিস ছাড়ার নোটিস
নদীর কোনো একপাশ দিয়ে একটু ভেঙে গেলে সেটিকে ভাঙন বলা যায় না : রাশেদ খান
বেশ কিছু দিন ধরেই আলোচনায় গণঅধিকার পরিষদ। রেজা-নুরের দ্বন্দ্ব ভাঙতে বসেছে দেশের তারুণ্যনির্ভর এই দলটি। গতকাল রোববার গণঅধিকার পরিষদের পল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আমার সংবাদের সাথে একান্তে কথা বলেন গণঅধিকার পরিষদের একাংশের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ খান। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘কোন কারণে আমাদের এই অফিস ছাড়তে বলা হয়েছে। আমরা অফিস খোঁজার চেষ্টা করছি। ভালো কোনো জায়গা পেলে আমরা এই অফিস ছেগে দেবো, কোনো ঝামেলা করতে চাই না।’
রাশেদ বলেন, আমরা সোমবার কাউন্সিলের সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। কেউ এই কাউন্সিলকে বাঞ্চাল করতে পারবে না। তারা চাইলে ভোটে অংশ নিতে পারে সেখানে কাউন্সিলররা যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দিতে পারে। গণঅধিকারের এই ভাঙনের মুহূর্তে কাউন্সিল কেন? এমন প্রশ্নে রাশেদ বলেন, নদীর কোনো একপাশ দিয়ে একটু ভেঙে গেলে সেটিকে ভাঙন বলা যায় না। যারা এখন নুরের বিরুদ্ধে কথা বলছেন তারা মোশতাকের মতোই বিশ্বাসঘাতক। আমরা যেকোনো মূল্যেই কাউন্সিল করব।
অপরদিকে গণঅধিকার পরিষদের একাংশের (নুরুল হক নুর) ডাকা কাউন্সিল প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়াপন্থিরা। আজ গণঅধিকারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নুরপন্থিদের যে কাউন্সিল হওয়ার কথা রয়েছে তা প্রতিহতের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কাউন্সিলের সময়ে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করবেন রেজাপন্থিরা। এ নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় ঘটতে পারে সংঘর্ষের ঘটনাও। গণঅধিকার পরিষদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রেজাপন্থিরা যেকোনো মূল্যে আজকের কাউন্সিল প্রতিহত করবেন। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কমিটির বেশির ভাগ সদস্য ছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতাকর্মীরাও নুরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এমনকি রেজা কিবরিয়ার অপসারণ অবৈধ উল্লেখ করে লিখিত আবেদন করেছেন দলটির অন্তত ৫০ জন কেন্দ্রীয় নেতা।
এদিকে নুরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের মধ্যে রয়েছেন হাসান আল মামুন, ফারুক হাসান, আতাউল্লাহ, কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান, তারেক রহমান, জাকারিয়া পলাশ, এম জেড আবেদিন (শিশির), আরিফুর রহমান তুহিন, মো. শামসুদ্দীন. শাহাবুদ্দিন শুভ ড. আব্দুল মালেক ফরাজি, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাবিব, মেজর (অব.) আমিন আহম্মেদ আফসারি, অতিরিক্ত দায়রা জজ (অব.) শামসুল হক, ব্যারিস্টার জিসান মহসিন, আবু সাঈদ মুসা এবং আবুল বাশারসহ অনেক নেতা। এ ছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক এবং কেন্দ্রীয় নেতা কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক ড. আব্দুল মালেক ফরাজি, গাজীপুর মহানগরের আহ্বায়ক পাঠান আজহারসহ ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোর নেতারাও নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুর রহমান তুহিন বলেন, অসাংগঠনিক সিদ্ধান্ত আমরা মানি না। নিজের কর্তৃত্ব পাকাপোক্ত করতে নুরুল হক নুর স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তে রেজা কিবরিয়াকে বহিষ্কার করেছেন। আমরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। কেন্দ্রীয় কমিটির বেশির ভাগ সদস্য এই সিদ্ধান্ত মানে না। এমনকি ৫০ জন কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচন কমিশনের কাছে এই একনায়কতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে লিখিত আবেদন করবেন।
গণঅধিকার পরিষদের কেন্দীয় এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমার সংবাদকে জানান, রেজা-নুরের এই দ্বন্দ্বে দলের অনেকেই বিব্রত। তৃণমূল পর্যায়েও নেতাকর্মীরা মনোবল হারিয়ে ফেলছেন। দলের প্রধান ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যখন অর্থনৈতিক অভিযোগ আসে তখন দলের কর্মীরা মনোবল হারিয়ে ফেলেন। দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুর রহমান তুহিন বলেন, ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলি বাহিনী যেভাবে ন্যক্কারজনক হামলা চালাচ্ছে সচেতন মানুষ হিসেবে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা আমাদের দায়িত্ব। তাই আমরা গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে ১০ জুলাই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা করেছি। এই কর্মসূচি রিপোর্টাস ইউনিটি থেকে শুরু করে পল্টনে আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তুহিন বলেন , আমরা শুনেছি একটি পক্ষ কাউন্সিল করতে চায়। তারা সবাই দলছুট । আমরা খুব শিগগিরই একটি হায়ার কাউন্সিল ঘোষণা করব। এরপর নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে একটি পরিচ্ছন্ন কাউন্সিল করব। অব্যাহতি পাওয়া নুর কি কাউন্সিল করতে পারে। সে এখন দলের কিছুই না।