জুলাই ১২, ২০২৩, ১২:০০ এএম
- ২০০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং ছাড়াল
- গ্যাসভিত্তিক উৎপাদনে সরকারের নজর
- তাপমাত্রার ওপর লোডশেডিংয়ের আপডাউন
- গ্যাস ও তেল সংকটে ৫৩টি কেন্দ্র বন্ধ
- ফের বন্ধ বরিশালের ৩০৭ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি
- পরিচালন ত্রুটিতে বন্ধ রামপাল কেন্দ্রের উৎপাদন
অন্যান্য খাতে খরচ কমিয়ে কয়লা আমদানি এবং এলএনজি আমদানির বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ প্রয়োজনীয় সরবরাহ দিতে না পারলে লোডশেডিং বন্ধ হবে না
—প্রকৌশলী সালেক সুফি
আন্তর্জাতিক জ্বালানি পরামর্শক
তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। এ করণে ফের বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। টানা বৃষ্টি ও ঈদের ছুটির কারণে বিদ্যুৎ চাহিদা অনেকটা কমে আসে। ফলে তেমন লোডশেডিং করতে হয়নি বিদ্যুৎ বিভাগকে। তবে চলতি সপ্তাহে তাপমাত্রা বাড়ার ফলে লোডশেডিংও বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। গত সোমবার সর্বোচ্চ ২০১৩ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। মূলত, তাপমাত্রা কমলে চাহিদা কমে, লোডশেডিং কমে যায়। আবার তাপমাত্রা বেড়ে গেলে লোডশেডিং বৃদ্ধি পায়। ডলার সংকটে চাহিদামতো জ্বালানি আমদানি করতে না পারায় এমন লোডশেডিং করতে হচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। তবে বড় ধরনের সংকট হলে তা মোকাবিলায় পরিকল্পনাও গ্রহণ করে রেখেছে সরকার।
সূত্র জানায়, গ্যাস, ফার্নেস তেল, কয়লা, সৌর ও জলবিদ্যুৎ থেকে সরকার ১৫ হাজার ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনতে চায়। গ্রীষ্মে তীব্র দাবদাহ না থাকলে গড়ে ১৫ থেকে ১৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন থাকে। আর তীব্র দাবদাহ অর্থাৎ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে তাপমাত্রা উঠলে চাহিদা গিয়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৫০০ থেকে ১৭ হাজার মেগাওয়াট। ফলে গ্রীষ্মে চাহিদার কাছাকাছি পৌঁছা যাবে। এছাড়া ডিজেলভিত্তিক কেন্দ্র থেকে আরও এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রস্তুত রাখা হবে। ডিজেলভিত্তিক এসব কেন্দ্র জরুরি চাহিদা না হলে চালানো হবে না।
এদিকে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে কেউ যেন অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখছে সরকার। এছাড়া সরকারের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে বলেও জানায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। সর্বশেষ গত রবি ও সোমবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত তথ্য পর্যালোচনা করে লোডশেডিংয়ের ঊর্ধ্বমুখী চিত্রই পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রোববার দিবাগত রাত ১২টায় সর্বোচ্চ এক হাজার ৬০৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। ওই সময় চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ২৫০ মেগাওয়াট। অর্থাৎ চাহিদার ১১ দশমিক ২২ শতাংশ লোডশেডিং হয়। আর সোমবার রাত ৩টায় সর্বোচ্চ দুই হাজার ১৩ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। ওই সময় চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ১০৫ মেগাওয়াট। অর্থাৎ চাহিদার ১৫ দশমিক ৩১ শতাংশ লোডশেডিং হয়।
সূত্র জানায়, গত ৯ জুলাই বেলা ২টা পর্যন্ত লোডশেডিং হাজার মেগাওয়াটের নিচে ছিল। ওই সময় ৮৬১ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। বেলা ৩টায় তা বেড়ে হয় এক হাজার ১৫১ মেগাওয়াট। ওই সময় চাহিদার ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ লোডশেডিং ছিল। বিকাল ৫টার পর তা আবার হাজার মেগাওয়াটের নিচে নামে। তবে রাত ১০টায় তা আবার হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়।
সূত্র মতে, চলমান জ্বালানি সংকটে ১২-১৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি কোনোভাবেই উৎপাদন করা যাচ্ছে না। বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ পড়ে আছে। ফলে লোডশেডিং পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, গত ৯ জুলাই গ্যাস সংকটে ১৭টি ও ফার্নেস অয়েল সংকটে ৩৬টি কেন্দ্র পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ ছিল। এছাড়া কয়লা সংকটে আবারও বন্ধ হয়ে গেছে বরিশাল ৩০৭ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি। আর রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শেষ না হওয়ায় এখনও চালু হয়নি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। আবার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ পায়রার একটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে।
এদিকে সরকার সংকট মোকাবিলায় গ্যাসভিত্তিক উৎপাদনে নজর দিয়েছে। এ জন্য দেশের স্থলভাগে ৪৬টি গ্যাসকূপ খননকাজ এ বছরই শুরু করতে যাচ্ছে। শিগগিরই কূপ খননের অনুমতি নিতে প্রধানমন্ত্রী এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন নেয়া হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৪০ মাসে ৪৬টি কূপ খননের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বাপেক্সের অধীনে থাকা ক্ষেত্রগুলোতে ২০টি কূপ খনন করা হবে। এর মধ্যে সংস্কার কূপ বা ওয়ার্কওভার কূপ দুটি, অনুসন্ধান কূপ ৯টি ও উন্নয়ন কূপ ৯টি। চারটি কূপ খনন করা হবে শ্রীকাইলে, ভোলার নর্থে চারটি, ভোলার শাহবাজপুরে দুটি এবং সেমুংতাংয়ে দুটি। বাকিগুলো ফেঞ্চুগঞ্জ, নোয়াখালীর চরজব্বারপুর, শরীয়তপুর ও জকিগঞ্জে। শুধু বাপেক্সের নিয়ন্ত্রণে থাকা ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে ২০টি কূপ খনন করলে চার বছরে অন্তত ২৮ কোটি লাখ ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়বে।
এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক জ্বালানি পরামর্শক প্রকৌশলী সালেক সুফি বলেন, অন্যান্য খাতে খরচ কমিয়ে কয়লা আমদানি এবং এলএনজি আমদানির বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ আমরা যদি চাহিদামাফিক সরবরাহ করতে না পারি, তাহলে কোনো পরিকল্পনা করেই অতিরিক্ত লোডশেডিং থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না।
এ বিষয়ে সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এক প্রশ্নের জবাব বলেন, ৪৬টি কূপ খননের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দ্রুতই পাঠানো হবে। অনুমোদন পেয়ে গেলে বাপেক্স, বিজেএফসিএল ও এসজিএফএলের আওতাধীন ক্ষেত্রগুলোয় এই কূপ খনন করা হবে। বাপেক্স যতগুলো পারে তারা ততগুলো কূপ খনন করবে। বাকিগুলো ঠিকাদার নিয়োগ করে কূপ খনন করা হবে।