Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি

‘পোলাপান লইয়া কষ্টে আছি’

মো. সোহাগ বিশ্বাস

জুলাই ২৩, ২০২৩, ১২:০৫ এএম


‘পোলাপান লইয়া কষ্টে আছি’
ছবি: সংগৃহীত

‘কি আর কমু, পোলাপান লইয়া বড় কষ্টে আছি। দিন দিন সব কিছুর দাম যেন বাড়ছেই। দ্রব্যমূল্যের এই লাগামহীন ঘোড়ার সঙ্গে পেরে উঠছি না। যা বেতন পাই তা দিয়ে মাছ গোশত কিনে খাওয়া বড়ই কষ্টসাধ্য।’ গতকাল এ প্রতিবেদকের সঙ্গে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন মিরপুরে বাসিন্দা শাহ রহমতুল্লাহ বিপ্লব। একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন তিনি। 

পরিবারে বাবা ও মায়ের সঙ্গে আছেন ১৯ বছর বয়সি এক ছেলে ও ১২ বছর বয়সি এক মেয়ে। বড় আক্ষেপ নিয়ে বিপ্লব জানান, ছয় জনের সংসার। প্রায় এক সপ্তাহ হলো কোনো মাছ কেনা হয়নি। পরিবারের কাছে নিজেই লজ্জা পাচ্ছিলাম। তাই ভাবলাম আজ (২২ জুলাই) একটা মাছ কিনে নেবো। কিন্তু মাছের বাড়তি দামের কারণে আজও লজ্জা নিয়েই বাসায় ফিরতে হচ্ছে। এ তো গেল বিপ্লবের কথা। বাজারের এই উচ্চমূল্যে দিশাহারা নিম্ন আয়ের সব মানুষ। কারওয়ান বাজারের তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে ‘মুটে’ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন আবু তালেব, সবজির বাজারে বিভিন্ন সবজি যা বাজার শেষে পরিত্যক্ত থাকে সেগুলো দিয়েই সংসার চলে তার। মাছের যা দাম তাতে মাসে একদিনও মাছ কিনতে পারেন না তিনি। মাঝে মধ্যে ব্রয়লার মুরগি আর ডিমের দাম এত বেশি বেড়ে যায় যে, তার জন্য সংসার চালানোই দায়। এ প্রতিবেদকের কাছে এমন আক্ষেপের কথা জানান এই শ্রমিক। 

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মাছের দাম অনেক দিন ধরেই সাধারণ ক্রেতার নাগালে নেই। আবার ব্রয়লারের বাজারে যে স্বস্তিও  বাতাস বইতে শুরু করেছে, তার গতি যেন আরও বেড়েছে। গত সপ্তাহে ১৯০ টাকায় নেমে আসা ব্রয়লার মুরগি এ সপ্তাহে কিছুটা কমে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত শুক্র ও শনিবার রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা ও মহাখালীর বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বাড়তি দামের তালিকায় যুক্ত হয়েছে কয়েক পদের সবজি ও রসুন। টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে ঊর্ধ্বমুখী কাঁচামরিচ, আদা, আলু ও চিনির দামও রয়েছে অপরিবর্তিত। অর্থাৎ বাজারে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জন্য কোনো সুখবর নেই। অর্থাৎ তাদের অস্বস্তি কমছে না। 

রামপুরা বাজারে আল আমিন নামে এক গার্মেন্ট শ্রমিকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, বাজারে এলে মাথা ঠিক থাকে না। টাকায় কুলায় (ব্যয় সঙ্কুলান) না বলে প্রয়োজনের অর্ধেক কেনাকাটা করে বাসায় ফিরতে হয়। তিনি বলেন, সাধ থাকলেও সাধ্যের মধ্যে মাছ-গোশত কেনা যায় না। পাঙাশ, তেলাপিয়া, সিলভার কার্পের মতো মাছের দামও কেজি ২০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বাড়তি দামের কারণে এসব মাছও এখন আগের মতো খেতে পারি না। 

রামপুরার মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আকারভেদে তেলাপিয়ার কেজি ২২০ থেকে ২৬০ টাকা, পাঙাশের কেজি ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, সিলভার কার্প বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি দরে। অথচ কিছু দিন আগেও এ তিন পদের মাছের দাম কেজিপ্রতি ২০০ টাকার কম ছিল। আর এ জাতীয় মাছেই আমিষের চাহিদা মিটতো নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের। কিন্তু দাম বাড়ায় সেটিও এখন তাদের পাতে জুটছে না। শুধু পাঙাশ, তেলাপিয়া বা সিলভার কার্পই নয়, সপ্তাহের ব্যবধানে অন্যান্য মাছের দামও বেড়েছে। ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আর আকারভেদে রুই-কাতলা ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া চিংড়ি মাছের মধ্যে ছোট আকারের প্রতি কেজির দাম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। মাঝারি আকারের প্রতি কেজি ৯০০ থেকে হাজার টাকার বেশি। আর আকারে বড় হলে ক্রেতাকে কেজিপ্রতি গুনতে হচ্ছে এক হাজার ২০০ টাকারও বেশি। অন্য দিকে ইলিশ মাছের দামও আকাশছোঁয়া। প্রজনন মৌসুম হিসেবে গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সাগরে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলছে। তাই বাজারে ইলিশের সরবরাহও কম। এক কেজির কম ওজনের অর্থাৎ ৮০০ গ্রামের একটি ইলিশ কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে এক হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা। 

মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইলিশের সরবরাহ বাড়লে দামও কমে আসবে। অপরদিকে সমপ্রতি ব্রয়লারের বাজারে যে স্বস্তির বাতাস বইতে শুরু করেছে, তার গতি যেন আরও বেড়েছে। গত সপ্তাহে ১৯০ টাকায় নেমে আসা ব্রয়লার মুরগি এই সপ্তাহে এলাকাভেদে বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, সোনালি মুরগির কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের বাদামি ডিমের হালি এখনো ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। 

রাজধানীর মিরপুর শেওড়াপাড়ায় বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী খোরশেদ আলমের মতে, বাজারে শুধু ব্রয়লার মুরগির দাম কম। বাকি সব ধরনের মুরগির দাম অনেক বেশি। ব্রয়লার ছাড়া অন্য মুরগি কিনে খাওয়াই কঠিন। তিনি বলেন, আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতারা একমাত্র ব্রয়লার মুরগি ছাড়া অন্য কোনো মুরগি কিনতে পারি না। কারণ সব ধরনের মুরগির দাম বেশি। দেশি মুরগি কেনার কথা তো চিন্তাও করতে পারি না। গরুর মাংসের দামের কাছাকাছি দেশি মুরগির কেজি। এ ছাড়া সোনালি মুরগি যে কিনব এর দামও ৩০০ বা তার চেয়েও বেশি। পাশাপাশি লেয়ার, কক মুরগির ও দাম অতিরিক্ত। সব মিলিয়ে আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের জন্য ব্রয়লার ছাড়া অন্য মুরগি কেনাই দায়। ব্রয়লার ছাড়া অন্য মুরগির দাম কেন বেশি? 

এ বিষয়ে রাজধানীর মহাখালীর বাজারের মুরগি বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, কিছু দিন আগের চেয়ে এখন তাও দাম কমেছে। কিছু দিন আগে মুরগির দাম আরও বাড়তি ছিল। সোনালি, কক, লেয়ার এসব মুরগির দাম আগের চেয়ে ৫০-৬০ টাকা করে কেজিতে কমেছে। আসলে মুরগির বাচ্চা থেকে শুরু করে মুরগির খাবারের দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেছে। যে কারণে খামারিরা বেশি দামে মুরগি ছাড়ে। আমরা যখন যে দামে কিনতে পারি পাইকারি বাজার থেকে, তখন সে রকম দামেই খুচরা বাজারে বিক্রি করি। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই, বাজার যারা নিয়ন্ত্রণ করে তারাই মূল কারণ বলতে পারবে। 

সকাল থেকে রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, আদা, রসুন, আলু ও শাকসবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও সেই অর্থে দাম কমেনি।

আরএস


 

Link copied!