Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

সংক্ষিপ্ত সিলেবাসেও ফলাফলে ধস

মো. নাঈমুল হক

জুলাই ২৯, ২০২৩, ১০:১৩ পিএম


সংক্ষিপ্ত সিলেবাসেও ফলাফলে ধস
  • এসএসসিতে পাসের হার কমেছে সাত শতাংশের বেশি
  •  জিপিএ-৫ কমেছে ৮৬ হাজার ২৪টি
  •  শতভাগ পাস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে ৬২১টি
  •  ৪৮ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি

সারা দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এবারের এসএসসি পুনর্বিন্যাসকৃত সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ও পূর্ণ নম্বরে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে গত বছরের তুলনায় পাসের হার কমেছে ৭ শতাংশেরও বেশি। জিপিএ-৫ কমেছে ৮৬ হাজার ২৪টি। শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে ৬২১টি। একজনও পাস করেনি— এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪৮টি। বিদেশের কেন্দ্রগুলোতে পাসের হার গত বছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৪ শতাংশ কমেছে। গতকাল ১১টায় রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ ফলাফল প্রকাশ করেন। ফলাফলে ধস নামার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, পূর্ণ নম্বরে সব বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছে। তাই গতবারের চেয়ে এবার পাসের হার কিছু কমাই স্বাভাবিক। শিক্ষাবিদরা বলছেন, এত বেশি পাসের হার কমার বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুসন্ধান করা দরকার।

জানা যায়, এ বছর এসএসসিতে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ৪১ হাজার ৪৫০ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৪০ জন। মোট পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। গতবার পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ । অর্থাৎ এক শিক্ষাবর্ষে কমেছে সাত দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ । শুধু পাসের হারই নয়, এ বছর রেকর্ড জিপিএ-৫ও কমেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন। অথচ গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। অর্থাৎ এক বছরে কমেছে ৮৬ হাজার ২৪ জন। শতভাগ পাসকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে ৬২১টি। গতবছর  শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল দুই হাজার ৯৭৫টি। এ বছর এমন শক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দুই হাজার ৩৫৪টি।  এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার বিদেশের আটটি কেন্দ্রে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। গত বছর এ হার ছিল ৯৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। পাসের হার কমেছে ১০ দশমিক ৫৪ শতাংশ। 

একজনও পাস করেনি— এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যার তেমন পরিবর্তন হয়নি। গতবছর পাস না করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫০ হলেও এ বছর ৪৮টি। ফলাফল ধসের কারণ, শূন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে ব্যাখ্যা ও পরীক্ষার সময়ের ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, গত বছর পূর্ণ নম্বরে পরীক্ষা হয়নি। অল্প কয়েকটি পরীক্ষা হয়েছিল। সময় অল্প ছিল। তবে এবার পূর্ণ নম্বরে সব বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছে। তাই গতবারের চেয়ে এবার পাসের হার কিছু কমাই স্বাভাবিক।  ২০২১ সাল থেকে করোনার প্রভাব কাটানোর চেষ্টা চলছে, তবুও কেন পরিমার্জিত সিলেবাসে পরীক্ষা আয়োজন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সিলেবাস শেষ করতে যে সময়টুকু লাগে, আমাদের শিক্ষার্থীরা সে সময় পায়নি। করোনার কারণে প্রত্যেকবারই স্বাভাবিক সময়ের অনেক পরে পরীক্ষা হয়েছে। আগামী বছরের পরীক্ষা আরও এগিয়ে আনতে পেরেছি। চেষ্টা করব, পরীক্ষা যাতে স্বাভাবিকের কাছাকাছি আনা যায়। তাতেও পরীক্ষার্থীরা পুরো সময়টা পাবে না। সে কারণে পুনর্বিন্যাসটা করা হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই নন-এমপিওভুক্ত। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম থাকে। দু-তিনজন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছে— এমনও উদাহরণ রয়েছে। সে কারণে তারা শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় চলে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে যেসব শিক্ষার্থী পড়ে, তারা যেন পাস করার মতো জায়গায় যেতে পারে, সে ব্যাপারে আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তাদের সহযোগিতা করার প্রচেষ্টা হাতে নিয়েছি। আমাদের সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

পাসের হার কমার বিষয়ে অনুসন্ধানের কথা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক আমার সংবাদকে বলেন, সবসময় ফলাফলের অবস্থা এক রকম থাকবে না। কম বা বেশি হতে পারে। এবারের পাসের হার এত বেশি কমেছে কেন? এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুসন্ধান করা দরকার। পাসের হার কমার কারণ হলো আমাদের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষকের অভাব আছে। অবকাঠামো ও অব্যবস্থাপনার সমস্যাও রয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। কম শিক্ষার্থী থাকায় শিক্ষকও সেভাবে নিয়োগ দেয়া হয় না। কোনো কোনো এলাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আধিক্য এত বেশি যে, সেখানে সরকারি স্কুলগুলো শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। এ জন্য শিক্ষার্থী ঘনত্বের আলোকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেয়া প্রয়োজন। এগুলো বৃহত্তর শিক্ষা পরিকল্পনারই অংশ।

Link copied!