জুলাই ৩১, ২০২৩, ১১:২২ পিএম
২০২৩ সালের দাখিল পরীক্ষার ফলাফলে রেকর্ড বিপর্যয় হয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় পাসের হার কমেছে সাড়ে ৭ ভাগ। জিপিএ-৫ কমেছে প্রায় আড়াইগুণ। এই রেজাল্ট বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ বছরের মাদ্রাসা বোর্ডের জিপিএ-৫ এর হার সব বোর্ডের তুলনায় সবচেয়ে কম। এমন ফলাফল বিপর্যয়ের ব্যাপারে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, গণিত ও ইসলামের ইতিহাসে শিক্ষার্থীরা খারাপ করেছে। খারাপের কারণ খতিয়ে দেখছি। মাদ্রাসা শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষাবিদরা বলেন, মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও নিয়মিত মাদ্রাসাগুলো তদারকি করতে হবে।
জানা যায়, এ বছর মাদ্রাসা থেকে দাখিলে মোট পরীক্ষার্থী ছিল দুই লাখ ৮৫ হাজার ৮৭ জন। এর মধ্যে পাস করেছে দুই লাখ ১২ হাজার ৯৬৪ জন। যা মোট পরীক্ষার্থীর ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২.১৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। যা সব বোর্ডের তুলনায় সর্বনিম্ন জিপিএ-৫ এর হার। দাখিলে এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ছয় হাজার ২১৩ জন। গত বছর দাখিলে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫ হাজার ৪৫৭ জন।
বিগত পাঁচ বছরের দাখিলের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ বছর দাখিলে রেকর্ড পরিমাণ রেজাল্ট খারাপ করেছে। যা বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ এ সর্বনিম্ন। ২০১৯ সালের তুলনায় দাখিলে পাস কমেছে ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ওই বছর পাস করেছে ৮৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ও এ বছরের চেয়ে বেশি। ২০১৯ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ছয় হাজার ২৮৭ জন। একইভাবে ২০২০ সালেও পাস করেছে ৮২ দশমিক ৫১ শতাংশ। জিপিএ-৫ ছিল সাত হাজার ৫১৬ জন। ২০২১ সালে পাসের হার ৯৩ দশমিক ২২ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ ১৪ হাজার ৩১৩ জন। ২০২২ সালেও ৮২ দশমিক ২২ শতাংশ পাশ। জিপিএ-৫ ১৫ হাজার ৪৫৭ জন।
এ বিষয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর কায়সার আহমেদ আমার সংবাদকে বলেন, গণিত ও ইসলামের ইতিহাসে শিক্ষার্থীরা খারাপ করেছে। কী কারণে রেজাল্ট খারাপ হয়েছে আমরা এটি খতিয়ে দেখছি। এটি কী প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা নাকি প্রশ্ন কঠিন হয়েছে? এ বিষয়টি আমরা গবেষণা করে ডিজি স্যারকে জানাব। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলেন, বাংলাদেশে সব শিক্ষারই মান্নোয়নের প্রয়োজনীয়তা আছে। মাদ্রাসা শিক্ষার মান সাধারণ শিক্ষা থেকেও খারাপ। সাধারণ শিক্ষার তুলনায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন ও খাতা দেখা অনেক সহজ করে। এর ফলে বিগত সময়ে মাদ্রাসায় ভালো ফলাফল এসেছে। এ বছরের ফলাফলটা ঠিক আছে। আরেকটু খারাপ হলেও স্বাভাবিক হিসেবে ধরা যেত। কারণ মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের না বুঝে মুখস্থ করার দিকে উৎসাহিত করা হয়।
মাদ্রাসা শিক্ষার মানোন্নোয়নে পরামর্শ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের সাবেক পরিচালক ড. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, মাদ্রাসায় ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। এই প্রশিক্ষণ দুই ধরনের হবে। নিয়োগের পূর্বে প্রশিক্ষণ ও নিয়োগের পর দু-তিন বছর পরপর শর্ট কোর্স বা লং কোর্সের আলোকে তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মান বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের তদারকি বাড়াতে হবে।