আগস্ট ৭, ২০২৩, ০২:৪৪ পিএম
- রপ্তানির ১০ শতাংশ বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি চান ব্যবসায়ীরা
- বিদেশি বিনিয়োগ সন্তোষজনক নয়, সতর্ক পদক্ষেপের পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের
দশে চলছে তীব্র ডলার সংকট। বাণিজ্য ঘাটতির প্রভাবে সৃষ্ট সংকটে এলসি খুলতে জটিলতা তৈরি হওয়ায় উৎপাদন খাতে চলছে অস্থিরতা। বিদেশি বিনিয়োগও আসছে না আশানুরূপ। ঋণ পরিশোধের চাপ যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। এমন প্রেক্ষাপটে যখন দেশে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা তুঙ্গে। রপ্তানি খাতকে বহুমুখীকরণের মাধ্যমে আয় বাড়ানোর জোর তাগিদ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। হুন্ডিচক্রের থাবা থেকে রেমিট্যান্স রক্ষায় মরিয়া সবাই। ঠিক এমন সময়ে বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে বিনিয়োগের আবদার নিয়ে হাজির হয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
তাদের দাবি, রপ্তানির ১০ শতাংশ বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি দিতে হবে। এর মাধ্যমে দেশে-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথাও বলা হচ্ছে। জরুরি চাহিদা মেটাতে দেশের রিজার্ভ যখন ক্রমেই কমছে— এ মুহূর্তে এমন আবদারকে অহেতুক ও অপ্রত্যাশিত হিসেবেই দেখেছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের ব্যবসায়ীরা রপ্তানি করা অর্থের ১০ শতাংশ বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি চান বলে জানিয়েছেন ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আইবিসিসিআই) সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ। ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স-আইসিসির উদ্যোগে ও আইবিসিসিআইয়ের সহযোগিতায় ৬ থেকে ৮ আগস্ট আইসিসি-বিমসটেক এনার্জি কনক্লেভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিন দিনব্যাপী এ আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরবর্তী এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এ সময় মাতলুব বলেন, ‘আমাদের ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট এখনো ফ্রোজেন। আমরা বাইরে থেকে ইনভেস্টমেন্ট আনতে পারব, কিন্তু কোথাও ইনভেস্ট করতে পারব না। সেটি আমাদের এখনো বন্ধ আছে। এ নিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অনেক রিকোয়েস্ট করতে পেরেছি। তিনি আমাদের ফ্রুটস সিকিউরিটির জন্য আফ্রিকা পাঠিয়েছিলেন। সেখানে ফার্মিং করা যায় কি-না, কিছু টাকা পাওয়া যায় কি-না। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ডলার নিয়ে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি খুব কম। এখন তো ডলার সংকট, প্রশ্নই আসে না। সে জন্য আমরা ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার থেকে সবসময় বলেছি, অন্তত আমরা যদি ১০০ টাকার রপ্তানি করি, ১০ টাকা অন্তত অ্যালাও করা উচিত সেখানে ইনভেস্ট করার জন্য। ভারত কিন্তু আমাদের স্বাগত জানিয়েছে। আমরা আশা করছি সরকার অন্তত ১০ শতাংশ ইনভেস্ট করার পারমিশন দেবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে, ব্যবসা-বাণিজ্য সবসময় দুই তরফা হয়। এক তরফা দিয়ে শুরু হয়। পরে উভয়ই উপকৃত হয়।’
ব্যবসায়ীদের এমন দাবি বিদেশে পাচার হওয়া অর্থের বৈধতা দেয়ার গোপন পরিকল্পনা কি-না এমন প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যখন টালমাটাল অবস্থা; এমন সময় ব্যবসায়ীদের অযৌক্তি আবদার কার স্বার্থে তা খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ ভারত বাংলাদেশ বাণিজ্যে এমনিতেই বিশাল ব্যবধান বিদ্যমান। গেল অর্থবছরের ১৬ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যের ব্যবধান ১৪ ঃ ২। এমন পরিস্থিতিতে আইবিসিসিআই থেকে রপ্তানির ১০ শতাংশ বিদেশে বিনিয়োগের প্রস্তাব রহস্যজনক। নাম প্রকাশ না করে একাধিক ব্যবসায়ী নেতা আমার সংবাদকে জানিয়েছেন, দেশের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে কোন কোন ব্যবসায়ী বিদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী তা আইবিসিসিআইকে স্পষ্ট করতে হবে।
বেসরকারি খাতে বিদেশি বিনিয়োগের হতাশাজনক পরিস্থিতে ব্যবসায়ীদের এমন দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, ‘রপ্তানির সাথে বিনিয়োগের কোনো সম্পর্ক নেই; দুটি দুই জিনিস। এখন যদি কোনো ব্যবসায়ী তার রপ্তানির অর্থ বিদেশে বিনিয়োগ করতে চান তাহলে এটি সরকারকে ভাবতে হবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে। বাস্তবতা হলো, আমাদের বিদেশি বিনিয়োগ সন্তোষজনক নয়। গত ১০ বছরের বেসরকারি বিনিয়োগ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এটি জিডিপির ২২-২৩ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। এ সংক্রান্ত আইন-কানুন পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। তবে ভবিষ্যতে আর্নিং আসতে পারে এমন লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করা যায় কি-না সেটি পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে।’
তিন দিনব্যাপী আইসিসি-বিমসটেক এনার্জি কনক্লেভ অনুষ্ঠান সম্পর্কে ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের (আইসিসি) মহাপরিচালক ড. রাজীব সিং জানান, এ ব্যবসায়িক কনক্লেভের উদ্দেশ্য হলো বিমসটেক দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ বিতরণ ও ট্রান্সমিশন, বাংলাদেশে এনার্জি ট্রেডিং এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি খাতে উন্নিত করা। এ ছাড়াও, পারস্পরিক স্বার্থের ক্ষেত্রগুলো অন্বেষণ করার জন্য কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত থেকে কোম্পানিগুলোকে নিয়ে আসার লক্ষ্য রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি জানান, ভারতের বিভিন্ন সেক্টরের ডেলিগেটস কনক্লেভে অংশ নিয়েছেন। ভারতের ব্যবসায়ীরা স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষিতে বিনিয়োগ করতে চান। ড. রাজীব সিং জানান, জ্বালানি-শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন ভারতের ব্যবসায়ীরা। ৮৫টি কোম্পানির প্রতিনিধিরা যোগদান করছেন ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ বিজনেস কনফারেন্সে। আগামী তিন দিন সরকারের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন। বাংলাদেশে চারটি বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র, একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব আছে তাদের। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান সত্তম রায় চৌধুরী, ডিসেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সজল দত্ত, চার্নক হাসপাতালে এমডি ইশান্ত শার্মা প্রমুখ।