Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪,

একই সময়ে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষা

সমন্বয়হীনতায় ক্ষতিগ্রস্ত চাকরিপ্রার্থীরা

মো. নাঈমুল হক

মো. নাঈমুল হক

সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৩, ১২:১২ এএম


সমন্বয়হীনতায় ক্ষতিগ্রস্ত চাকরিপ্রার্থীরা
  • আবেদনে ব্যয় হচ্ছে কিন্তু সব পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছেন না
  • এ বিষয়ে সরকারের চিন্তা-ভাবনা করা প্রয়োজন
  • —মো. আব্দুস সবুর মণ্ডল
    অতিরিক্ত সচিব
  • নিয়োগের জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা উচিত
  • —ড. মোসলেহ উদ্দিন  অধ্যাপক, ঢাবি
     

১ সেপ্টেম্বর ২৩ সালে নাঈম এখলাস নামে একজন চাকরিপ্রত্যাশীর বেলা ৩টায় তিনটি পরীক্ষা ছিল। বন অধিদপ্তরের অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে লিখিত পরীক্ষা, বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিস্ট্যান্ট ও নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের ক্যাশিয়ার পদের লিখিত পরীক্ষার মধ্যে তিনি একটিতে অংশ নেন। বাকি দুই পরীক্ষার অংশ নিতে পারেননি। যে দুই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি সেগুলোর আবেদনে ৬০০ টাকার বেশি খরচ হয় তার। এভাবেই সরকারি চাকরিতে বেকারদের আবেদনের টাকা নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে এটি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

জানা যায়, একই সময়ে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় নেই। ফলে মাসে হাজার টাকার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বেকাররা। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে আলাদা প্রতিষ্ঠান থাকা প্রয়োজন। সরকারি বিভিন্ন নিয়োগ সার্কুলার পর্যালোচনা করে জানা যায়, ২৫ই আগস্ট ২০২৩ এই দিনে পাঁচটি নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই নিয়োগ পরীক্ষাগুলো হলো— বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ১৬ পদের পরীক্ষা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগের প্রটোকল অফিসার পরীক্ষা। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ইলেকট্রিক্যাল-ইলেকট্রনিক্স) পদের পরীক্ষা। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের জুনিয়র ব্যক্তিগত সচিব, জুনিয়র ভাণ্ডার রক্ষক, জুনিয়র নিরাপত্তা পরিদর্শক, কারিগরি সহায়ক, অফিস সহায়ক ও জুনিয়র হিসাব সহকারী পদের পরীক্ষা। দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন (বাংলাদেশ) লি.-এর পরীক্ষা। 

এর পরবর্তী সপ্তাহের শুক্রবারেও সাতটি নিয়োগ পরীক্ষার হয়। ১ সেপ্টেম্বর বেলা ৩টায় চারটি পরীক্ষা ছিল। একইভাবে ৮ সেপ্টেম্বরেও আটটি চাকরির পরীক্ষা রয়েছে। চাকরিপ্রত্যাশীরা জানান, শুধু নাঈম ইখলাসই নন, ১ সেপ্টেম্বর চারটি নিয়োগ পরীক্ষা ছিল শহীদুল ইসলামেরও। নাঈম শহীদুলদের মতো লাখ লাখ পরীক্ষার্থী চাকরির জন্য আবেদন করেন। একই সময়ে একাধিক পরীক্ষা থাকায় তারা পরীক্ষায় বসতে পারেন না। চাকরি পেতে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকেই দুই থেকে  সাত বছরে কয়েকশ নিয়োগ পরীক্ষা দিতে হয়।

ক্ষতিগ্রস্ততার কথা জানিয়ে রাজশাহীর শহীদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে চাকরির বাজার অনেক কঠিন। এক দুই পরীক্ষায় চাকরি পাওয়ার সুযোগ নেই। আবেদনের প্রথম দিকে চাকরির পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। অনেকের চাকরি পেতে সাত বছরও লেগে যায়। আমাদের সঙ্গে অনেকেই প্রায় সপ্তাহে পরীক্ষা থাকে। এ ভাবে বছরে প্রায় ৫০-এর মতো পরীক্ষায় তারা অংশ নেন। এক চাকরির আবেদনে যদি ৩০০ টাকাও খরচ হয় তাহলে বছরে চাকরির আবেদনের পেছনে কত হাজার হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাজমুল ইসলাম ফুয়াদ বলেন, চাকরির আবেদনে চাকরিপ্রত্যাশীরা প্রথম দুই বছর এমনিতেই পরীক্ষা দেয়। বেশি বেশি পরীক্ষা দিয়ে নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় তারা। এরপর থেকে চাকরি পাওয়া সম্ভাবনা তৈরি হয়। এই সময় বিজ্ঞপ্তি দেখলেই আবেদন করেন বেকাররা। চাকরির আবেদনের সময় পরীক্ষার সময় লেখা থাকে না। সে জন্য ইচ্ছেমতো আবেদন করে। কিন্তু প্রায় দেখা যায়, তিনটি  বা চারটি পরীক্ষা পড়ছে। আবার কখনো পরীক্ষাও থাকে না। এর সমন্বয় করতে পারলে আমাদের কিছু খরচ বাঁচত।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের (নিয়োগ, অনুবিভাগ ও প্রেষণের) অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুস সবুর মণ্ডল আমার সংবাদকে বলেন, মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরগুলো নিয়োগের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের সুযোগ অনুযায়ী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। এর ফলে একই দিনে একাধিক পরীক্ষা হয়। এটিকে সমন্বয় করা প্রয়োজন। এটি একটি ভালো বিষয়। এ নিয়ে সরকারের ভাবা প্রয়োজন।’

একই দিনে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষা সম্ভব নয় বলে মনে করেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের যখন নিয়োগ দরকার আমরা তখনই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেই। শুক্র ও শনিবার ছাড়া আমরা পরীক্ষা নিতে পারি না। পরীক্ষার জন্য যদি আমাদের অপেক্ষা করতে হয় তাহলে বছরে নিয়োগ পরীক্ষা নিতে পারব কি-না তা নিয়েও সন্দেহ থেকে যায়। আমরা আসলে সব সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা দিতে পারি না। আমরাও ছাত্র ছিলাম। আমরাও সব পরীক্ষা দিতে পারিনি। নিয়োগে আবেদনকারী সবাই পরীক্ষা দিতে পারবেন, এরকম এ্যাকুরেট কীভাবে করবেন? বেকার হইলেও তাদের বাবার বা মায়ের আয় তো আছে। তাদের কী অন্য কোনো অবলম্বন নেই? এত বড় ডিগ্রি অর্জন করাইতে পারল কিন্তু চাকরির আবেদনের ২০০ টাকা খরচ করতে পারবে না। তবে এরকম করতে গেলে আরেকটি বিভাগ লাগবে। যে রকমভাবে পিএসসি পরীক্ষা নিচ্ছে।’

একই দিনে যেন একাধিক নিয়োগ পরীক্ষা না হয় সে জন্য প্রয়োজনে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কথা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোসলেহ উদ্দিন বলেন, ‘একই সময়ে একাধিক অধিক নিয়োগ পরীক্ষায় চাকরিপ্রত্যাশীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ওদের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে। অধিকাংশই ভালো চাকরির আশায় এই সময় পড়াশোনা করে। তাদের অতিরিক্ত আয় থাকে না। তারা বেকার থাকে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সমন্বয়হীনতার মাধ্যমে তাদের ওপর জুলুম করা ঠিক হচ্ছে না। 

এ ব্যাপারে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে এ অধ্যাপক বলেন, সরকারের উচিত এই বেকারদের নিয়ে ভাবা। একই দিনে যেন একাধিক নিয়োগ পরীক্ষা না হয় সে জন্য প্রয়োজনে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। এরই অধীনে সব নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া। 
 

Link copied!