রহমতুল্লাহ
সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩, ১১:৪৯ পিএম
রহমতুল্লাহ
সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩, ১১:৪৯ পিএম
- চার বিধিমালা হলো
নিবন্ধনের জন্য বিপুল খরচ শিক্ষা উদ্যোক্তাদের জন্য কঠিন। এর ফলে অনেকে নিবন্ধন নিতে চাইবেন না
—মো. মিজানুর রহমান সরকার মহাসচিব, বিকেএ
সব ধরনের কিন্ডারগার্টেন, কেজি ও অন্যান্য স্কুলের নাম বাদ দিয়ে দেশে দুই ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য নতুন করে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বিধিমালা সংশোধনের খসড়া প্রণয়ন করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর-ডিপিই। নতুন বিধিমালাকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন-বিকেএ। তবে বিকেএ চারটি বিষয়ে সংশোধনী চায়। তারা মনে করে, এ বিষয়গুলো সংশোধন না হলে ২০১১ সালের বিধিমালার মতো এবারও এই বিধিমালা বাস্তবায়ন হবে না। অনেকেই নিবন্ধন নিতে চাইবেন না। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বেশ কিছু নতুন ও পুরোনো শর্তের আলোকে কেজি স্কুল নিবন্ধন বিধিমালার খসড়া প্রণয়ন করেছে সরকার। বর্তমানে এর খসড়া কপি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে আছে।
এই প্রক্রিয়া শেষে এর খসড়া যাবে মন্ত্রিসভায়। সেখানে চূড়ান্ত অনুুুমোদন পেলে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই এই বিধিমালার আলোকে নিবন্ধন নিয়েই শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হবে দেশের সব কেজি স্কুলকে। জানা যায়, কিন্ডারগার্টেনসহ (কেজি) বেসরকারি বিভিন্ন ধরনের স্কুল তত্ত্বাবধানের জন্য ২০১১ সালের একটি বিধিমালা তৈরি করা হয়। কিন্তু নিবন্ধন জটিলতার কারণে এর পরিবর্তে নতুন করে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এ বিধিমালায় নিবন্ধন ফি ও স্থায়ী আমানত কমানো, ম্যানেজিং কমিটি থেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানকে না রাখার এবং ঢাকায় জায়গা ও ভবনের পরিমাণ কমানোর কথা বলছে বিকেএ।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন বিধিমালার আওতায় প্রাথমিক অনুমোদনের পর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে অনুমোদন নিতে হবে নিবন্ধন। শহরাঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত স্কুল নিবন্ধন ফি ১৫ হাজার টাকা। জেলায় ১০ হাজার ও উপজেলায় আট হাজার টাকা। প্রত্যেক স্কুলের একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি থাকবে। কমিটিই চালাবে প্রতিষ্ঠান। এতে প্রধান শিক্ষক, একজন শিক্ষক প্রতিনিধি, একজন অভিভাবক প্রতিনিধি, উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে দু’জন থাকবেন। প্রতিষ্ঠাতা পাওয়া না গেলে ইউএনও বা ডিসির দুজন প্রতিনিধি থাকবেন। এ ছাড়া থাকবেন নিকটতম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক। প্রতিনিধি নির্বাচনে ভূমিকা রাখবেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। বিদ্যালয়ের সংরক্ষিত ও সাধারণ নামে দুটি তহবিল থাকবে। বিধিমালায় আরো বলা হয়েছে, সংরক্ষিত তহবিলে এলাকা অনুযায়ী স্থায়ী আমানত বা সঞ্চয়পত্র আকারে থাকতে হবে। এর মধ্যে আছে, মেট্রোপলিটনে এক লাখ, জেলায় ৭৫ হাজার, উপজেলা ও পৌরসভায় ৫০ হাজার এবং ইউনিয়নে ২৫ হাজার টাকা এবং ব্যক্তি নামে বিদ্যালয় স্থাপন করতে হলে পাঁচ লাখ টাকা স্থায়ী আাামনত করতে হবে।
বিদ্যালয় ভাড়া কিংবা স্থায়ী বাড়িতে হোক, মেট্রোপলিটন এলাকায় অন্যুন দশমিক ৮ একর, পৌরসভায় দশমিক ১২ এবং অন্য এলাকায় দশমিক ৩০ একর ভূমিতে হতে হবে। ভবন ও ভূমি ভাড়া নেয়া যাবে। তবে এ বিধিমালার আগে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের ভূমির পরিমাণ কম হলে সে ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না। এর সাথে অন্যদিকে মালিকপক্ষ বিধিমালাকে স্বাগত জানালেও কয়েকটি ক্ষেত্রে আপত্তি তুলেছে তারা। তারা বলেছে, আপত্তির জায়গাগুলো সংশোধন না হলে নতুন বিধিমালা বাস্তবায়ন ফলপ্রসূ হবে না। বিশেষ করে ব্যবস্থাপনা কমিটিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে নিযুক্ত, নিবন্ধন ফির পরিমাণ ও স্থায়ী আমানত বা সঞ্চয়পত্র এবং সংরক্ষিত তহবিলে এলাকা অনুযায়ী স্থায়ী আমানত পরিমাণ। তা ছাড়া বাকি নিবন্ধনের সব প্রক্রিয়া পূরণে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে মালিকপক্ষ।
২০১১ সালে প্রণীত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধন বিধিমালা রিভিউ কমিটির অন্যতম সদস্য ও বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. মিজানুর রহমান সরকার আমার সংবাদকে বলেন, ‘বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নীতিমালা-২০২৩ কে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এ নীতিমালা আগের চেয়েও বেশি কঠিন মনে হচ্ছে। এ নীতিমালায় সিটি কর্পোরেশনে নিবন্ধন ফি এক লাখ, জেলা শহরে ৭৫ হাজার আর উপজেলায় ৫০ হাজার টাকা। অথচ মাধ্যমিকে এ ফি ৫০ হাজার টাকা। ম্যানেজিং কমিটিতে একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানকে রাখার কথা বলা হয়েছে। একজন রানিং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান যদি ২০-২৫টি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিতে থাকেন তাহলে তাকে এগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে। উনি কখন নিজের প্রতিষ্ঠান দেখবেন? এখানে একজন সরকারি কর্মচারী বা অবসরপ্রাপ্ত কোনো কর্মচারীকে দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে।
প্রতিষ্ঠানের আয়তনে সিটি কর্পোরেশনে আট শতক, জেলা শহরে ১২ শতক ও উপজেলা পর্যায়ে ৩০ শতক জায়গার উপর বাড়ির কথা বলা হয়েছে। ঢাকা শহরের বাসাগুলো কত শতক জায়গার উপর? সর্বোচ্চ তিন থেকে চার শতক। এই পরিমাণ জায়গার উপর ভাড়া নেয়া খুবই কষ্ট সাধ্য বিষয়। অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জায়গা নেই। অথচ একটি কিন্ডারগার্ডেনের জন্য এ ধরনের কঠিন শর্ত দেয়া হয়েছে। এই শর্ত শিথিল করে আগের বিধিমালায় তিন হাজার বর্গফুটের ভবনের পরিমাণ রাখা উচিত ছিল। ব্যক্তি নামে প্রতিষ্ঠিত স্কুল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিন লাখ টাকা জামানত রাখার কথা ছিল। এ বছর পাঁচ লাখ টাকা জামানাত করা হয়েছে। এত টাকা জমা রাখা কীভাবে সম্ভব? এই শর্তগুলো শিথিল না করলে ২০১১ সালের নীতিমালার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো নিবন্ধন করতে চাইবে না।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে দাবি নিয়ে আলোচনার বিষয়ে তিনি জানান, বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রীর সাথে দেখা করে বিষয়গুলো আমরা লিখিত আকারে তুলে ধরেছি। মন্ত্রী মহোদয় আমাদের দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাসচিবকে বারবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।