আব্দুল কাইয়ুম
সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩, ১১:০৭ পিএম
আব্দুল কাইয়ুম
সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩, ১১:০৭ পিএম
খালি জায়গাগুলোতে বহুতল পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করলে আর সমস্যা হবে না
—সাইদুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক, রোড সেফটি ফাউন্ডেশন
বিভিন্ন এলাকায় পার্কিংয়ের জন্য ইজারা দেয়া আছে, এর অর্থ ডিএসসিসির ফান্ডে জমা হয়
—মো. মুনিরুজ্জামান, সম্পত্তি কর্মকর্তা, ডিএসসিসি
রাজধানী ঢাকার সড়কের পাশে গাড়ির অবৈধ পার্কিং এখন স্বাভাবিক রূপ নিয়েছে। মূল সড়কগুলো চার লেনের দু’পাশে অবৈধ পার্কিংয়ে দখল হয়ে আছে প্রায় অর্ধেক রাস্তা। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে খোদ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) বিভিন্ন মেয়াদে ইজারা দিয়েছে। ইজারা দেয়া পার্কিং স্থান থাকার পরও ভ্রুক্ষেপ নেই কারও। বিশেষ করে রাজধানীর মতিঝিলের ব্যাংকপাড়ার পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রায় সব সড়কে অবৈধ পার্কিং বেশি চোখে পড়ে। এ ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন অফিস ও শপিংমলের সামনে গাড়ি পার্কিংয়ের দৃশ্য দেখা যায়। বাণিজ্যিক অঞ্চল ছাড়াও অসংখ্যা সড়কে অবৈধ পার্কিংয়ে বেদখল হয়ে আছে সড়ক। এতে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে নাগরিকদের সীমাহীন কষ্ট ভোগ করতে হয়।
পার্কিংয়ে রাখা অধিকাংশই ব্যক্তিগত গাড়ি। এসব পার্কিং নিয়ে বিভিন্ন মহলের চাঁদাবাজিও কম চলে না। এগুলো সাথে রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশ জড়িত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, পরিতাপের বিষয় হলো— পার্কিং করার অনুমতি না থাকলেও এগুলো দেখার কেউ নেই। প্রত্যেকে ইচ্ছে মতো জায়গায় গাড়ি থামিয়ে রাখছে। সিটি কর্পোরেশন থেকে এসব পার্কিং উচ্ছেদ করার কথা থাকলেও তেমন একটা চোখে পড়ে না। ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, যে সব স্থানে পার্কিংয়ের সুযোগ রয়েছে পুলিশের মতামতের ভিত্তিতে ইজারা দিচ্ছে তারা। কিছু এলাকার রাস্তার পাশে ডিএসসিসি পার্কিংয়ের বৈধতা দিলেও নিয়ম মেনে পার্ক করছে না কেউ।
তাদের দাবি, কোলাহলপূর্ণ নয় এমন এলাকায় এসব পার্কিংয়ের অনুমতি দেয়া হয়। ঢাকার প্রতিটি সড়কের দিকে তাকালেই পার্কিংয়ের দৃশ্য চোখে পড়ে। আর এসব পার্কিংয়ের ফলেই অধিকাংশ যানজটের সৃষ্টি। নির্দিষ্ট স্থানে পার্কিং করার কথা থাকলেও খেয়ালখুশি মতো পার্কিং করছে রাস্তার পাশেই। বুয়েটের গবেষণায় উঠে এসেছে, একটি ব্যক্তিগত গাড়ি সব মিলিয়ে মাত্র ১০ শতাংশ সময় রাস্তায় চলে। বাকি ৯০ শতাংশ সময় গাড়ি পার্কিং অবস্থায় থাকে। ঢাকাতে ব্যক্তিগত গাড়ির বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের বেশি। বাড়তি গাড়ির ফলে পার্কিংয়ের জায়গা হচ্ছে রাস্তায় ধারে। এটি যেমন দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে সেই সাথে নষ্ট হচ্ছে রাজধানীবাসীর কর্মঘণ্টা। সাধারণত একটি শহরে আয়তন ও জমির পরিমাণ অনুযায়ী ২৫ শতাংশ সড়ক থাকা জরুরি। অথচ রাজধানীর প্রধান সড়ক আয়তনের মাত্র ৩ শতাংশ রয়েছে। তবে বিভিন্ন গলিসড়কসহ সর্বসাকুল্যে রয়েছে মাত্র ৭ শতাংশ। এসব সড়কের অধিকাংশই পার্কিংয়ের দখলে। রাজধানীর ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ যানজটের জন্য দায়ী অবৈধ গাড়ি পার্কিং।
সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর ৪৭ নং ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি প্রজ্ঞাপনে সিটি কর্পোরেশন বা স্থানীয় সরকারের নির্ধারিত এলাকা ছাড়া নির্ধারিত স্থান ও সময় ছাড়া যানবাহন পার্কিং এবং থামানো যাবে না। আইনে আরও বলা হয়েছে, পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত এলাকা ছাড়া পার্কিং করা যাবে না। যদি কেউ পার্কিং করে তাহলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে। ওই আইন লঙ্ঘিত হলে অনধিক তিন মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হবে। তা ছাড়া উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে দোষসূচক এক পয়েন্ট কাটা হবে। পয়েন্ট কাটার কথা উল্লেখ থাকলেও তার ব্যবহার নেই বলেই চলে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন চাইলে করলে নির্দিষ্ট স্থানে বৈধভাবে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারে। সবাই একটি নির্দিষ্ট ফি দিয়ে সেখানে গাড়ি রাখবে। তাহলে আর রাস্তায় এতটা জ্যাম হবে না। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অবৈধ পার্কিং উচ্ছেদ করতে পারলে সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। অবৈধ পার্কিং রোধ করা না যায় তাহলে ঢাকার জন্য হুমকির কারণ হতে পারে। অবস্থা দেখে মনে হয়, এই অবৈধ পার্কিং দেখার কেউ নেই। যাদের এ সমস্যা সমাধানের কথা তারা আজ নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন।
রাজধানীর এসব অবৈধ পার্কিং বিষয়ে বাংলাদেশ রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, পার্কিংয়ের কারণে রাস্তার প্রসস্ততা কমে যাচ্ছে। ফলে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। পুলিশ সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলার ফলে এমনটি হয়। তা ছাড়া পার্কিংয়ের মাধ্যমে চাঁদাবাজি করার একটি বিশাল সুযোগ থাকে। অধিকাংশ দলীয় লোকজন ও পুলিশ এ চাঁদাবাজির সাথে জড়িত। অবৈধ পার্কিং বন্ধ করতে হলে সরকারকে বিকল্প কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রশাসনকে লক্ষ রাখতে হবে যাতে কেউ দলীয় নাম দিয়ে চাঁদাবাজি না করে। নতুন করে পার্কিংয়ের পরিকল্পনা করার জন্য কোনো আগ্রহ কারো নেই। যদি আন্ডারগ্রাউন্ড ও বহুতল বিশিষ্ট পার্কিং ব্যবস্থা করে তাহলে এর সমাধান সম্ভব। রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো জায়গাগুলোতে আন্ডারগ্রাউন্ড তিন মিটার নিচ থেকে চার-পাঁচ তলা পর্যন্ত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা যায়। এতে করে পার্কের কোনো সমস্যা হবে না। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে টানেল পদ্ধতিতে পার্কিয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কর্তৃপক্ষরা এগুলোর দিকে লক্ষ করছে না। মূলত নিজেদের স্বার্থে সমস্যাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখছে। আমরা অফিসের সামনেই কেন গাড়ি রাখব। নির্দিষ্ট স্থানে গাড়ি রেখে অফিস করলেই আর সমস্যা হয় না। ভালো উদ্যোগ নিলে এগুলো অনেক আগেই ঠিক হয়ে যেত। তবে কেউ এসব বিষয়ে ভাবে না।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মুনিরুজ্জামান আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে বৈধ পার্কিং দেয়া আছে। নিউ মার্কেটের চারপাশে গাড়ি রাখার জন্য জন্য ইজারা দেয়া আছে। মতিঝিল এলাকাতেও বিভিন্ন এলাকায় পার্কিংয়ের জন্য ইজারা দেয়া আছে। তা ছাড়া মূল সড়কের পাশেও আমরা এসব ইজারা দিয়ে থাকি। সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে এসব ইজারা দেয়া হয়। আর এর অর্থ ডিএসসিসির ফান্ডে জমা হয়। নতুন করে গাড়ি পার্কিংয়ের নীতিমাল তৈরি হচ্ছে। তারপর নতুনভাবে সব সাজানো হবে। অফিসিয়াল ও বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে গাড়ি রাখার জন্য রাস্তার পাশেই জায়গা দেয়া আছে। সিটি থেকে বহুতল ও আন্ডাগ্রাউন্ড পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিছু আন্ডারগ্রাউন্ড বেদখল ছিল। এগুলো এখন উদ্ধার করা হয়েছে। যেসব এলাকায় যান চলাচল কম সেখানে পার্কিংয়ের অনুমতি দেয়া হয়।’