অক্টোবর ১৫, ২০২৩, ১১:৩৬ পিএম
- অগণিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাকা রাস্তা ব্রিজ-কালভার্টসহ ১০ বছরে বিএম মোজাম্মেলের করা সব উন্নয়নের সুফলই ভোগ করছে জনগণ
- এখনো বাস্তবায়ন হচ্ছে তার নেয়া উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ। ৯০ শতাংশ কাঁচা রাস্তা পাকা হয়েছে তার আমলেই
গত চার বছরে আমার শূন্যতা জনগণ উপলব্ধি করেছে। আমি কিন্তু এ দীর্ঘ সময়েও কারো কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করিনি
—বিএম মোজাম্মেল হক
প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে নিজ নির্বাচনি এলাকার বাইরে থেকেও জনগণের হূদয়ে বাস করার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত রাজনীতিবিদ, ওয়ান-ইলেভেনের পরীক্ষিত সৈনিক, শরীয়তপুরের লাখো মানুষের আবেগ ও দুঃসময়ের পরম সঙ্গী বিএম মোজাম্মেল হক। সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই যাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে নানা ঘাত-প্রতিঘাত। তবুও রাজনীতি ও মানবসেবায় এক মুহূর্তের জন্যও না টলে দলকে সুসংগঠিত করার পাশাপাশি পালং-জাজিরাসহ জেলার গরিব-দুস্থ, অসহায়, নির্যাতিত-নিষ্পেষিত এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণেই নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছেন। যিনি দেহে প্রাণ থাকা পর্যন্ত দল ও মানবসেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেছিলেন বহু আগেই।
তারই ধারাবাহিকতায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বর্তমান সরকারের ব্যাপক উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে পঞ্চমবারের মতো শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করার লক্ষ্যে, জেলার গরিব-অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের গ্রাম থেকে গ্রামে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদেরও ঐক্যবদ্ধ করতে নিরলস ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি। দূরে থেকেও দিন-রাত গরিব, অসহায়, কর্মহীন, শ্রমজীবী, ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ দলীয় অসচ্ছল নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবর রাখছেন, হচ্ছেন তাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গীও। তার আদর্শ ও ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে ইতোমধ্যেই এ জেলার মানুষ তাকে ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন। এ জেলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছেই মানবতার অনন্য উদাহরণ তিনি। এলাকার উন্নয়ন, জনগণের সেবা ও গত প্রায় সাড়ে চার বছরের শূন্যতায় এখন বিএম মোজাম্মেলের নাম শোনামাত্রই শরীয়তপুরের মানুষের চোখে আসে জল, হয়ে ওঠেন আবেগী। পালং-জাজিরার নারীরাও আজ তার জন্য রাখছেন রোজা, করছেন কুরআন তিলাওয়াত ও খতম শেষে মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন।
বিএম মোজাম্মেলকে উদ্দেশ করে তারা এই প্রতিবেদককে বলছেন, তাকে ভোট চাইতে পালং-জাজিরায় আসতে হবে না। কেবল নৌকা প্রতীক এনে দিলেই হবে। ভোটের বাকি বিষয়টিও তারাই দেখবেন। পালং-জাজিরায় সরেজমিন ঘুরে বিএম মোজাম্মেল হকের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা-বিশ্বাস ও ভালোবাসার এমন নজির অবগত হয় আমার সংবাদ।
পালং-জাজিরার সাধারণ বাসিন্দারা আমার সংবাদকে জানান, গত চার বছরে বিএম মোজাম্মেলের শূন্যতা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন তারা। যে কারণে এবার আর তাকে হারাতে চান না। তারা আশা করছেন, আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে তিনিই নৌকা নিয়ে তাদের মধ্যে ফিরবেন। আর নৌকার বিজয়ও সুনিশ্চিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিজয় উপহার দেবেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, পালং-জাজিরায় বিএম মোজাম্মেল ছাড়া অন্য কাউকে নৌকার মাঝি করা হলে তার সুফল তারা পাবেন না। বিএম মোজাম্মেল এমপি থাকা অবস্থায় যেসব উন্নয়নকাজ করে গেছেন, এখনো তারই সুফল ভোগ করছেন তারা। ২০০৮ সালের আগে যেখানে (পালং-জাজিরায়) তেমন কোনো রাস্তাঘাটই ছিল না, বিভিন্ন গ্রামে পাকা রাস্তা তো দূরের কথা, কাঁচা রাস্তাও ছিল অদৃশ্য। ছিল না বলার মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও ছিল অনেকটাই না থাকার মতো। সেখানে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল নাগাদ টানা দুই মেয়াদে পালং-জাজিরায় শত শত রাস্তা পাকা করেছেন তিনি। করেছেন ব্রিজ-কালভার্ট, অসংখ্য-অগণিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি ভবন। পালং-জাজিরার আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও বলছেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দলের সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য পালং-জাজিরায় অন্যদের তুলনায় তিনিই এগিয়ে এবং সর্বদাই সচেষ্ট।
জানতে চাইলে বিএম মোজাম্মেল হক আমার সংবাদকে বলেন, ‘সংসদ সদস্য হিসেবে ১০ বছর ওখানকার (পালং-জাজিরা) মানুষের পাশে ছিলাম। এরপর থেকেই আমি নেই। সাংগঠনিক কার্যক্রমে সময় দিচ্ছি। এরই মধ্যে চার বছর তিন মাস পর গত ৫ ফেব্রুয়ারি মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীর মিলাদ পড়াতে যাই, তাও অঘোষিতভাবে। স্থানীয়রা বলেন, কাউকে না জানিয়ে বাড়ি এলেও সেদিন শতাধিক প্রাইভেটকার ছাড়াও হাজার হাজার মোটরসাইকেল ও হাজারো মানুষ জড়ো হন পদ্মাপাড়ে। পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজা থেকেই তাকে অর্ভ্যথনা দিয়ে ১৮ কিলোমিটার দূরের বাড়িতে নিয়ে আসে সাধারণ মানুষ। পুলিশ প্রশাসনও আগে থেকেই রাস্তা ক্লিয়ার রেখেছিল।’ এরপরও বাড়ি পৌঁছাতে চার ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছিল সেদিন, যা তার প্রতি সাধারণ মানুষের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করি। কারণ তার শূন্যতা আমাদের কাঁদায়।
বিএম মোজাম্মেল বলেন, ‘যেহেতু মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীর মিলাদ, সেহেতু আমি ভেবেছিলাম দুই থেকে তিন হাজার মানুষ হবে হয়তো। কিন্তু সেখানে জনতার ঢল দেখে সেদিন ২৫ হাজার মানুষের বন্দোবস্ত করতে হয়েছিল আমাকে। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত মানুষের ভিড় ছিল বাড়িতে। এটি আমার প্রতি সাধারণ মানুষের স্নেহ-ভালোবাসা। এর অন্যতম কারণ— এই মানুষগুলোকেই আমি মনে-প্রাণে ভালোবাসি। কেউ যত গরিবই হোক না কেন, আমি তাদের জড়িয়ে ধরে বুকে টেনে নিই। তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করি আর এটিই নিয়ম। গত চার বছরে তারা (পালং-জাজিরার মানুষ) আমার শূন্যতা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছে। আমার অনুপস্থিতি, ১০ বছরের উন্নয়ন-অগ্রগতি, সমৃদ্ধি, আমার আচরণ, সততা-নিষ্ঠা, আন্তরিকতা আর বর্তমান অবস্থান— এগুলো মিলেই তারা আমার প্রতি আসক্ত।’
তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে যখন আমি মনোনয়ন পাইনি, আমার ধারণা— আমার জনমত ছিল ৭৫ শতাংশ। কিন্তু চার বছর তিন মাস আমি এলাকায় যাইনি, এর মধ্যেই আমার জনমত বেড়ে হয়েছে ৮০ শতাংশের ওপরে; যা আমি জানতাম। কিন্তু একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যে জানা যায়, বর্তমানে আমার জনমত ৯০ শতাংশের ওপরে।’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত চার বছরে আমার প্রতি জনগণের কোনো রকম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়নি। এ ছাড়া বর্তমান এমপিকেও ফ্রিলি কাজ করার সুযোগ দিয়েছি। কোনোরকম হস্তক্ষেপ করিনি। আমি যাওয়া মানেই তার কাজে হস্তক্ষেপ। লোকজন কষ্ট পাচ্ছে, বাড়িঘর পোড়াচ্ছে, মিথ্যা মামলা হচ্ছে, মারধর করছে, খুন করছে। আমি গেলেই তো মানুষও উত্তেজিত হয়ে যাবে। আমি সে ক্ষেত্রে দাঁতে কামড় দিয়ে সয়েছিলাম।’
উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গ্রামে গ্রামে এখন যত পাকা রাস্তা দেখবেন, এর একটিও এক সময় পাকা ছিল না। গ্রামে ৯০ শতাংশ রাস্তা আমি পাকা করেছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবই আমার করা। যেটি শরীয়তপুর কলেজ ছিল, এটি এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ। ওই কলেজে ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আমি তিনটি পাঁচতলা ভবন করেছি, একটি একাডেমিক ভবন, একটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ভবন, আরেকটি ছাত্রীনিবাস করেছি। শরীয়তপুর গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজ ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত ছিল; এটিও ডিগ্রি কলেজে উন্নীত করেছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কলেজে চারটিতে অনার্স কোর্স ছিল, এখন ১২টি বিষয়ে অনার্স কোর্স আমিই চালু করেছি।
এছাড়াও পালং-জাজিরায় ২৭টি সরকারি প্রাইমারি স্কুল করেছি এবং জমির ব্যবস্থা করে বর্তমান এমপির বাবার নামেও দড়িকান্দি অ্যাডভোকেট সুলতান হোসেন মিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছি। প্রত্যেকটি হাইস্কুলের বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, নতুন ভবন, মাদ্রাসাগুলোতে নতুন ভবন ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করেছি। প্রাইমারি স্কুলের যত ভবন রয়েছে, তাও করে দিয়েছি। তিনি বলেন, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট যত দেখবেন, এর সবই আমার করা। এখনো জেলার স্থানীয় সরকারের নির্বাহী প্রকৌশলীকে জিজ্ঞেস করলে তিনিই বলবেন, আমার দেয়া প্রকল্পগুলো এখনো চলমান রয়েছে। আমার নামে একটি হাইস্কুল রয়েছে (বিএম মোজাম্মেল হক উচ্চ বিদ্যালয়)। ফলাফলের দিক থেকে ওই হাইস্কুল জাজিরায় প্রথম কিংবা দ্বিতীয় হয়। আমার বাবার নামে একটি হাইস্কুল রয়েছে (মাস্টার হাছান উদ্দিন ভুঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়)। বঙ্গবন্ধু কলেজকে আমি সরকারিকরণ করেছি। আমি যে স্কুলের ছাত্র (জাজিরা মহান আলী হাইস্কুল), সেটিকে সরকারিকরণ করেছি। জাজিরা কলেজে নতুন ভবন করে দিয়েছি।’
উল্লেখ্য, আশির দশকে রাজপথে ছাত্রলীগের সাহসী সৈনিক বিএম মোজাম্মেল। ছাত্রজীবনে সামরিক স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের পাশাপাশি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন। এ ছাড়া ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির দপ্তর সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। পরে আবার ১৯৮৯ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আ.লীগের কেন্দ্রীয় এই নেতা। ছাত্ররাজনীতি থেকে বিদায় নেয়ার পরপরই তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সদস্যপদ গ্রহণ করেন। শরীয়তপুর জেলা আ.লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি ও কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে নির্বাচনের পর তাকে বাংলাদেশ আ.লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে সদস্য হিসেবে কো-অপ্ট করা হয়। ২০০২ সালের ২৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিলে বাংলাদেশ আ.লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের উপ-দপ্তর সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আ.লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে শরীয়তপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে বিজয়ী হন। পুনরায় ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আ.লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এছাড়া ২০০৯ সালে ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিলে বাংলাদেশ আ.লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে অর্জন করেছেন খ্যাতি ও সুনাম। সেই থেকে সততা, দক্ষতা, সফলতার সঙ্গে ২২তম কাউন্সিল পর্যন্ত পঞ্চমবারের মতো সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়ে অদ্যাবধি তার দায়িত্ব পালন করে আসছেন।