অক্টোবর ২৫, ২০২৩, ১১:১৯ পিএম
- আ.লীগ-বিএনপি পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারি
- সমাবেশের অনুমতি পাচ্ছে না জামায়াত
রাজনীতির সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন আগামী ২৮ অক্টোবর শনিবার ঘিরে। সেদিন কী ঘটবে? ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলগুলোর কর্মসূচি কি শান্তিপূর্ণ হবে নাকি সঙ্ঘাতময় হবে? বিরোধী দলের লোকেরা কি স্বাভাবিকভাবে ঢাকায় পৌঁছতে পারবে? ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা কি বিরোধী দলের লোকদের বাধা দেবে নাকি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান হবে? এমন নানা প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের মনে। গত ১৮ অক্টোবর প্রথমে বিএনপি ২৮ অক্টোবর সমাবেশ ঘোষণা করে।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে তারা এ সমাবেশ ঘোষণা করে। এর পর আওয়ামী লীগও একই দিন পাল্টা সমাবেশ ঘোষণা করে। ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা উদ্বেগ তৈরি হয়। পরবর্তীতে জামায়াতে ইসলামী নির্দলীয় সরকার ও দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবিতে সমাবেশ ঘোষণা দেয়ায় ২৮ অক্টোবর নিয়ে মানুষের ভাবনায় নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। এ ছাড়াও বিরোধী দলগুলোর মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো একই দিন পৃথক পৃথক স্থানে অবস্থান কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২৮ অক্টোবর বাধা এলে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে ২৯ অক্টোবরই এ কর্মসূচি দেয়া দরকার হতে পারে বলে ধরে রেখেছে বিএনপি। এদিকে ৩০ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ ঘোষণা দিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোট। এরপর ধারাবাহিক কর্মসূচিতে থাকছে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলগুলো। অর্থাৎ ভোটের আগে রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতাই থাকছে।
গতকাল বিকেলে তেজগাঁও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে ঢাকার সব পর্যায়ের নেতাদের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের নেতাকর্মীদের ২৭ অক্টোবর থেকে রাজধানীর অলিগলি পাহারা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আক্রমণ করলে পাল্টা আক্রমণ করে বিএনপিকে পরাজিত করা হবে।’ বিএনপির সমাবেশ থেকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে দাঁতভাঙা জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। নেতারা বলেন, ‘কোনো হুমকি ধমকিতে ভয় পায় না আওয়ামী লীগ। ২৮ তারিখ সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপিকে ঘেরাও করে পরাজিত করা হবে।’
গতকালের মতবিনিময় সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘২৮ তারিখ আমি আপনাদের সঙ্গে রাজপথে থাকব। আমরা কোনো কিছু কেড়ে নিতে দেবো না। ২৮ অক্টোবর যেমন আমরা লগি-বৈঠা নিয়ে গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছিলাম, ঠিক সেভাবে এবারও আমরা গণতন্ত্রকে রক্ষা করব’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। মেয়র তাপস আরও বলেন, ‘২৮ তারিখ আমাদের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। এ পরীক্ষায় আমরা ইনশাআল্লাহ বিজয়ী হবো।’
এদিকে গত ২৪ অক্টোবর রাজধানীর ইস্কাটনে আমির হোসেন আমুর বাসায় কেন্দ্রীয় ১৪ দলের এক বৈঠক হয়। ওই বৈঠক থেকে আগামী ৩০ অক্টোবর ঢাকায় ১৪ দল সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ওই বৈঠকে আমু বলেন, দেশি কিংবা বিদেশি শক্তির অপতৎপরতায় কিছুই হবে না। দেশের সংবিধান অনুযায়ী সময়মতো নির্বাচন হবে। ১৪ দল জোটগতভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবে। আগামী ৩০ অক্টোবর রাজধানীতে সমাবেশ হবে।
২৮ অক্টোবর সমাবেশ শান্তিপূর্ণ করারই পরিকল্পনা বিএনপির। তারা কোনো সঙ্ঘাতে যেতে চায় না বলে দলটির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। ওই দিন তারা রাজপথে বসে পড়ারও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন। তবে দলটির বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবেদীন ফারুক বলেছেন, যখন দেয়ালে আমার পিঠ ঠেকেছে, লাঠির আঘাত আমার মাথায় এলে অবশ্যই সেই লাঠি কেড়ে নিয়ে তাকে পেটাতে হবে। ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ নিয়ে জয়নুল আবেদীন ফারুক বলেন, ২৮ তারিখ কিছুই হবে না, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিই হবে। তাই বলতে চাই, আওয়ামী লীগের ভাইয়েরা কথা বন্ধ করুন। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করতে দিন, আমরা আমাদের কথাগুলো মানুষকে বলি। যতই বাধা দেবেন ততই জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়বে।
সাবেক এই চিফ হুইপ বলেন, মানুষকে ভালোবাসলে সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার করে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন। প্রতিদিন স্কুল-কলেজ, মহাসড়ক উদ্বোধন করেন। গরিবের ট্যাক্সের হাজার হাজার টাকা খরচ করেন। নির্বাচনকে ভয় পান কেন? একটি নির্বাচন দিয়ে দেন না... পুলিশ দিয়ে আবার ক্ষমতায় যাবেন... এবার আর হবে না। ২৮ তারিখ এই সরকারের বিরুদ্ধে ফয়সালা হবে। জামায়াতে ইসলামী ২৮ অক্টোবর সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়ায় রাজপথে উত্তাপ আরও বাড়ছে। দলটির পক্ষ থেকে পুলিশকে জানানো হয়েছে, তারা মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ করতে চায়। কিন্তু গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন না থাকায় জামায়াতে ইসলামীকে ঢাকার সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে না। ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ করতে কোনো দলকেই এখনো অনুমতি দেয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নিয়ম-শৃঙ্খলা মানলে’ যেকোনো রাজনৈতিক দলকেই সমাবেশের অনুমতি দেয়া হবে। গতকাল সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। জামায়াতে ইসলাম ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি পাবে কি-না, এ প্রশ্নে কামাল বলেন, আমাদের দেশে অনেক দল, অনেক পথ, অনেক কিছু রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী এর আগেও দু’-এক জায়গায় আলোচনা করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের নিয়মকানুন মেনে, দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনা মেনে যে কেউ যেকোনো কথা বলতে পারে। জামায়াত বলে কোনো কথা নেই, যে কেউ, যেকোনো কথা বলতে পারে, এটি গণতান্ত্রিক দেশ, গণতান্ত্রিক চর্চা এখানে আছে। আমাদের কথা হলো— আমাদের যে আইনকানুন আছে, তার মধ্যে থেকে তাদের কথা বলতে হবে। জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হবে কি-না, দ্বিতীয় দফা এ প্রশ্ন করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা পারমিশন দেইনি, আমরা তাদের কোনো পারমিশন দেই না। জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধিত দল নয় এখন পর্যন্ত। কাজেই তারা জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে যদি আসে, তাহলে তাদের পারমিশন দেয়ার প্রশ্নই আসে না।
জামায়াত আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে কি-না, তা ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে জিজ্ঞাসা করার পরামর্শ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমার কাছে কেউ পারমিশন চায় না। এদিকে আওয়ামী যুবলীগ ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। গত ২৪ অক্টোবর রাতে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিলের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ১১ নভেম্বর আওয়ামী যুবলীগের ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২৭ অক্টোবর বেলা ৩টায় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের অন্তর্গত সংসদীয় আসনভিত্তিক শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা। ২৮ অক্টোবর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণসহ বিভিন্ন ইউনিটের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ। এ ছাড়া ২৯ অক্টোবর বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের অন্তর্গত সংসদীয় আসনভিত্তিক তারুণ্যের জয়যাত্রা সমাবেশ। ৩০ অক্টোবর দেশের সব মহানগরে তারুণ্যের জয়যাত্রা সমাবেশ। এ ছাড়াও নভেম্বরের ১, ২, ৩, ৪, ৭, ৯, ১০, ১১ নভেম্বর নানা কর্মসূচি রয়েছে। ১৫ নভেম্বর ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের উদ্যোগে তারুণ্যের জয়যাত্রা সমাবেশ করবে দলটি।
এদিকে টালমাটাল রাজনৈতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে বসে নেই হেফাজতে ইসলাম। অরাজনৈতিক এ সংগঠনটি তাদের গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্য সাত দফা দাবি ও তিন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে গ্রেপ্তার নেতাদের আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে মুক্তি না দিলে আবার রাজপথে কঠোর কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে হেফাজতে ইসলামের জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনে এ হুঁশিয়ারি দেন সংগঠনটির নেতারা। জাতীয় নির্বাচনের আগে কারাবন্দি আলেমদের মুক্তির দাবি জানিয়ে হেফাজত নেতারা বলেন, নির্বাচনের আগে আলেমদের মুক্তি না দিলে নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।