Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪,

চার ব্যাংকে রেমিট্যান্সে অস্বাভাবিক উত্থান

রেদওয়ানুল হক

নভেম্বর ৭, ২০২৩, ১১:৫৩ পিএম


চার ব্যাংকে রেমিট্যান্সে অস্বাভাবিক উত্থান
  • হুন্ডির সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে বেসরকারি ব্যাংক
  • সরকারি ব্যাংকে রেমিট্যান্সে ধস, রিজার্ভ থেকে ডলার নিয়ে এলসি নিষ্পত্তি
  • রেমিট্যান্সের টাকায় আমদানি হচ্ছে বিলাসী পণ্য  ডলারের রমরমা ব্যবসা
  • অক্টোবরে বাড়তি প্রণোদনায়ও আসেনি কাঙ্ক্ষিত রেমিট্যান্স
  • চলতি অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে বিক্রি সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার

অক্টোবর মাসে বেসরকারি খাতের চারটি ব্যাংক সাউথইস্ট, প্রাইম, ঢাকা ও সিটি ব্যাংকের রেমিট্যান্সে অস্বাভাবিক উত্থান হয়েছে। আর রেমিট্যান্স সংগ্রহে শীর্ষে থাকা ইসলামী ব্যাংক ও সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে ধস নেমেছে। কারণ, সরকার প্রদত্ত আড়াই শতাংশ প্রণোদনা ছাড়াও এখন নিজেদের ইচ্ছেমতো প্রণোদনা দিতে পারছে ব্যাংকগুলো। এমন সুযোগের ফলে ব্যাংক চাইলে হুন্ডির সমান মূল্য দিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে পারছে। এতে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। তবে রিজার্ভের ওপর চাপ না কমে উল্টো বাড়ছে। কারণ সরকারি ব্যাংকে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় রিজার্ভ থেকে সহায়তা দিতে হচ্ছে। জানা গেছে, বেসরকারি ব্যাংকগুলো বেশি দামে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। কিন্তু আইনগত জটিলতার কারণে সরকারি ব্যাংক অতিরিক্ত দাম দিয়ে রেমিট্যান্স কিনতে পারছে না। ফলে ডলার আয় কমে যাওয়ায় এলসি নিষ্পত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হাত পাততে হচ্ছে। আর জরুরি পণ্যের এলসি নিষ্পত্তির স্বার্থে বাধ্য হয়ে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে রিজার্ভের মজুত আরও কমে যাচ্ছে। 

ব্যাংকাররা বলছেন, আইন অনুযায়ী লোকসান দিয়ে ডলার বিক্রি করার সুযোগ নেই। যদি কেউ বেশি দামে ডলার কেনে, তাহলে বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে। কিন্তু বিক্রিমূল্য ১১১ টাকা নির্ধারণ করা আছে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো কর্পোরেট ডিলিংস বা আগাম ডলার বুকিংয়ের নামে বেশি দাম নিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে রিপোর্ট করছে ১১১ টাকা। এর সঙ্গে ১০ শতাংশ বাড়তি প্রিমিয়াম নিয়ে ১২৩ টাকা পর্যন্ত ডলার বিক্রি হচ্ছে। তাই ডলার সংগ্রহ করতে ১২২ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে পারছে ব্যাংকগুলো। যদিও কেনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকে রিপোর্ট করছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। কখনো ডুয়েল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে, আবার কখনো থার্ড কারেন্সি বা মুদ্রা রূপান্তরের মাধ্যমে বাড়তি দামে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে ব্যাংকগুলো। ক্রেতা সংকট না থাকায় সহজেই এমন কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো।

বাফেদা ঘোষিত বাড়তি প্রণোদনা দেয়ার ক্ষেত্রে শর্ত হলো ব্যাংকের বোর্ডের অনুমোদন নিতে হবে। বেসরকারি ব্যাংকে এ প্রক্রিয়া সহজ হলেও সরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে এটি জটিল। এছাড়া সরকারি ব্যাংকে আগাম বুকিং দেখিয়ে বেশি দামে ডলার বিক্রি সম্ভব নয়। কারণ এখানে বেশিরভাগ এলসি সরকারি জরুরি পণ্য ক্রয়ের জন্য খোলা হয়। আর বর্তমানে বিপুল অঙ্কের ডেফার্ড বা বকেয়া পরিশোধের চাপ থাকায় সরকারি ব্যাংকের এ ধরনের সুযোগ নেই। তাই সরকারি ব্যাংক বাফেদা নির্ধারিত মূল্যে ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। ডলারপ্রতি ৮-১০ টাকা ব্যবধান তৈরি হওয়ায় সরকারি ব্যাংকে রেমিট্যান্টে ধস নেমেছে। বকেয়া দায় পরিশোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার চেয়েও কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বিপাকে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। 

জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের ৬০০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া দায় পরিশোধের জন্য গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ৪০০ মিলিয়ন ডলার চাওয়া হয়েছে। কিন্তু রিজার্ভ চাপের মুখে থাকায় মাত্র ২২ মিলিয়ন ডলার দেয়া হয়েছে। সরকারি খাতের সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স সংগ্রহকারী অগ্রণী ব্যাংকের অবস্থাও ভালো নয়। গত মাসে বাড়তি প্রণোদনা প্রথা চালু হওয়ার পর থেকে ব্যাংকটির রেমিট্যান্স প্রবাহে ধস নেমেছে। পুরো মাসে মাত্র পাঁচ কোটি ডলার প্রবাসী আয় সংগ্রহ করতে পেরেছে অগ্রণী ব্যাংক। আগের মাসগুলোতে এর চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি রেমিট্যান্স আসত রাষ্ট্রায়ত্ত এ ব্যাংকটিতে। 

অগ্রণী ব্যাংক সূত্রের তথ্যমতে, রেমিট্যান্স ধসের কারণে ব্যাংকটিতে বকেয়া এলসির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের এলসি বকেয়া রয়েছে। পর্যাপ্ত ডলার সংগ্রহ না থাকায় নির্দিষ্ট সময়ে এলসি নিষ্পত্তিতে বিপাকে পড়ছে ব্যাংকটি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে কিছু ডলার নেয়া হচ্ছে। বাকিটা আন্তঃব্যাংক থেকে ধার করে কিংবা সোয়াপ (সমঝোতা) পদ্ধতিতে এলসি নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। 

সরকারি ব্যাংকের রেমিট্যান্স বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেসরকারি ব্যাংকগুলো বেশি দামে রেমিট্যান্স কিনতে ডুয়েল অ্যাকাউন্ট (গোপন হিসাব) ব্যবহার করছে। যেসব ব্যাংক কখনোই রেমিট্যান্স সংগ্রহ করত না, তারাও এখন রেমিট্যান্স কিনছে। পরে কালোবাজারে বেশি দামে বিক্রি করছে অথবা বিলাসী পণ্যের এলসি খুলছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেই সংকট কমবে না। কারণ, বেসরকারি ব্যাংক জরুরি পণ্যের এলসি খোলে না। তাদের হাতে ডলার থাকলে অপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে ডলার খরচ করবে। কিন্তু জরুরি পণ্যের জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি ব্যাংকের হাতে রেমিট্যান্স বাড়লে রিজার্ভের চাপ কমবে। হুন্ডির প্রভাব কমাতে যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, তাতে কিছু লোকের পকেট ভর্তি হওয়া ছাড়া চলমান সংকট নিরসনে কোনো কাজে আসবে না বলে মনে করেন তারা। 
এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুরশেদুল কবীর আমার সংবাদকে বলেন, পরিস্থিতি যা-ই হোক, আমরা বাফেদা নির্ধারিত দাম মেনে চলছি। এতে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে; কিন্তু নিয়মের কারণে বেশি দামে ডলার সংগ্রহ করার সুযোগ নেই। যারা বেশি দামে কিনছে, তারা নিশ্চয়ই বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। আমরা শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছি।  

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে অস্বাভাবিক হারে রেমিট্যান্স আসে অক্টোবর মাসে। এক্ষেত্রে গত কয়েক মাসের রেমিট্যান্সের চিত্র মিলিয়ে দেখে আমার সংবাদ। গত জুন মাসে দেশে কোরবানির ঈদের কারণে বিপুল রেমিট্যান্স আসে। আর গত সেপ্টেম্বরে হুন্ডির দাপট বেড়ে যাওয়ায় ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স আসে। গত অক্টোবরে অতিরিক্ত প্রণোদনা প্রথা চালু হওয়ায় ফের ব্যাংকে রেমিট্যান্স বাড়তে শুরু করে। সে হিসাবে গত জুলাই ও অক্টোবর মাসে সমপরিমাণ ১৯৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে। এ দুই মাসের চিত্র তুলনা করে দেখা যায় সরকারি ব্যাংকের রেমিট্যান্সে ধস নেমেছে আর কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে রেমিট্যান্সে অস্বাভাবিক উত্থান হয়েছে।

গত জুলাই মাসে বিডিবিএল ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি ব্যাংকে মোট রেমিট্যান্স আসে ২৪৪ মিলিয়ন ডলার। আর গতমাসে (অক্টোবর) এসেছে মাত্র ১৫৪ মিলিয়ন ডলার। রেমিট্যান্স সংগ্রহে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের রেমিট্যান্স ৪০ শতাংশ কমে গেছে। জুলাই মাসে ব্যাংকটিতে এসেছিল ১২৩ মিলিয়ন ডলার আর অক্টোবরে আসে মাত্র ৫০ মিলিয়ন। ফলে প্রবাসী আয় সংগ্রহে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্যাংকটি ১৩তম অবস্থানে নেমে যায়। অন্যদিকে শীর্ষে থাকা ইলসামী ব্যাংক বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এসেছে অর্ধেকেরও কম। বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকটিতে গত জুলাইয়ে এসেছিল ৬৭২ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু অক্টোবরে আসে মাত্র ৩১৬ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া সক্ষমতার দিক থেকে এগিয়ে থাকা ব্যাংক এশিয়ায় প্রবাসী আয় অর্ধেকে নেমেছে। 

অক্টোবর মাসে ব্যাংকটিতে মাত্র ২১ মিলিয়ন ডলার এসেছে। অথচ গত অর্থবছরে ব্যাংকটিতে ৬১৪ মিলিয়ন ডলার এসেছিল। 
এদিকে সাউথইস্ট, প্রাইম, ঢাকা এবং সিটি ব্যাংকের রেমিট্যান্সে অস্বাভাবিক উত্থান হয়েছে। গত জুলাইয়ের তুলনায় ১০ গুণ রেমিট্যান্স এসেছে সাউথইস্ট ব্যাংকে। জুলাই মাসে ব্যাংকটিতে আসে মাত্র চার মিলিয়ন ডলার। আর অক্টোবরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ মিলিয়নে। অথচ কোরবানি ঈদের মাস জুনেও এসেছিল মাত্র সাত মিলিয়ন ডলার। অক্টোবরে প্রাইম ব্যাংকে আসে ২৯ মিলিয়ন ডলার। এ অঙ্ক গত জুলাইয়ের তুলনায় ছয়গুণ। গত অর্থবছরে ব্যাংকটির গড় রেমিট্যান্স ছিল মাত্র ১০ মিলিয়ন ডলার। ঢাকা ব্যাংকে অক্টোবরে রেমিট্যান্স এসেছে ৪৪ মিলিয়ন ডলার, যা গত জুলাইয়ের তুলনায় পাঁচগুণ। দ্য সিটি ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবাহ হঠাৎ সাতগুণ বেড়েছে অক্টোবর মাসে। গত জুলাইয়ে ব্যাংকটিতে এসেছিল মাত্র ১৪ মিলিয়ন ডলার। অক্টোবরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১০ মিলিয়নে। প্রণোদনা ঘোষণার পর গত মাসের শেষ ১০ দিনে ব্যাংকটিতে আসে ৬৮ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বাড়তি প্রণোদনার সুযোগ শতভাগ কাজে লাগিয়েছে ব্যাংকটি। গত কোরবানির ঈদের মাসেও ব্যাংকটিতে এসেছিল মাত্র ২৮ মিলিয়ন ডলার। বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করেও ব্যাংক চারটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ ছাড়া গত জুলাই মাসের চেয়ে দ্বিগুণ রেমিট্যান্স এসেছে এবি, বেঙ্গল, ইস্টার্ন, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, মধুমতি, স্ট্যান্ডার্ড ও ট্রাস্ট ব্যাংকে। বাড়তি প্রণোদনার সুযোগ কাজে লাগিয়ে অক্টোবর মাসে ট্রাস্ট ব্যাংক রেমিট্যান্স সংগ্রহে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। অক্টেবরে ব্যাংকটিতে এসেছিল ১১৪ মিলিয়ন ডলার। অথচ গত অর্থবছরজুড়ে ব্যাংকটিতে গড় রেমিট্যান্স আসে মাত্র ৬৫ মিলিয়ন ডলার। 

প্রসঙ্গত, গত মাসে সরকারি আড়াই শতাংশ প্রণোদনার সঙ্গে ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাড়তি আড়াই শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছিল। ফলে প্রবাসীরা মোট পাঁচ শতাংশ প্রণোদনা পান। এর সুফলও মিলেছে। সেপ্টেম্বরের চেয়ে ৬৪ কোটি ডলার প্রবাসী আয় বেশি আসে অক্টোবরে। জানা গেছে, কাগজে-কলমে আড়াই শতাংশ প্রণোদনার সুযোগ থাকলেও বাস্তবে ডলারপ্রতি ৮-১০ টাকা পর্যন্ত বেশি খরচ করে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছিল ব্যাংকগুলো। কারণ ক্রেতার চাহিদা ও বাড়তি আয়ের সুযোগ ছিল। সেপ্টেম্বরে রেকর্ড পতনের পর রেমিট্যান্স সংগ্রহে বাড়তি প্রণোদনা ঘোষণা করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। তবে কয়েকটি ব্যাংক হুন্ডির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ১২০ টাকা পর্যন্ত খরচ করে রেমিট্যান্স সংগ্রহে। এসব তৎপরতায় অক্টোবরে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। সদ্যসমাপ্ত মাসে ১৯৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এ পরিমাণ আগের বছরের অক্টোবরের তুলনায় প্রায় ৪০ কোটি ডলার বেশি। তবে জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে তুলনা করলে এ অঙ্ক কাঙ্ক্ষিত নয়। কারণ, গত জুন মাসেও ২১৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। অর্থাৎ গত তিন মাসে বিপুলসংখ্যক কর্মী বিদেশে যাওয়ার পরও অক্টোবরে আসা প্রবাসী আয় জুন মাসের তুলনায় ২২ কোটি ডলার কম। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দীর্ঘমেয়াদি সুফল আসবে না। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেবে না বলে ভিসানীতি দিয়েছে। রাজনৈতিক সংকটসহ বেশ কিছু কারণে আরও কিছু দেশ থেকে এ ধরনের ভিসানীতি আসতে পারে। ফলে আগামীতে প্রবাসী আয়ের এ ইতিবাচক ধারা অব্যাহত না থাকার শঙ্কা রয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ব্যাংকের অতিরিক্ত প্রণোদনা সাময়িক সময়ের জন্য রেমিট্যান্স বাড়াবে। তবে দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমাধান হবে না। তিনি মনে করেন, রেমিট্যান্স বাড়াতে হলে হন্ডি বন্ধ করতে হবে। আর হুন্ডি বন্ধ করতে হলে অর্থ পাচার বন্ধ করতে হবে। এখন প্রচুর অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে। এটা যে কোনো উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। 

চার মাসে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার বিক্রি : ডলার বাজারের অব্যবস্থাপনা ও হুন্ডি তৎপরতার প্রেক্ষাপটে জরুরি পণ্যের এলসি নিষ্পত্তিতে রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বিক্রি হয়েছে প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ডলার বিক্রি বন্ধ করা গেলে রিজার্ভ সাড়ে চার বিলিয়ন উত্থান হতো, যা আইএমএফের শর্ত পূরণের জন্য যথেষ্ট ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চার দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়, যা আগের বছরের একই সময়ে পাঁচ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। আর গত অর্থবছরের পুরো সময়ে বিক্রি করা হয় ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ সাত দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

রিজার্ভ নামল ১৯ বিলিয়নে : ধারাবাহিকভাবে বাজারে ডলার বিক্রি করার কারণে রিজার্ভের ক্ষয় হচ্ছে। এখনই ডলার সংকট কাটাতে না পারলে রিজার্ভ তলানিতে গিয়ে ঠেকবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশের রিজার্ভ সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে। ওই বছরের আগস্ট মাসে রিজার্ভ উঠেছিল ৪৮ দশমিক শূন্য ছয় বিলিয়ন ডলার। ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রির কারণে তা এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ২৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। আর বিপিএম-৬ অনুযায়ী ২০ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। চলতি সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) এক দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার আমদানি দায় পরিশোধ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। এতে করে রিজার্ভ আরও কমে ১৯ দশমিক ৪৫ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন  বলেন, আর্থিক সংকট নিরসনে ডলারের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসা খুবই জরুরি। কিন্তু এবিবি ও বাফেদা দাম বেঁধে দেয়ার কারণে দামে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। তাই ডলারের দর পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা না গেলেও ধাপে ধাপে সেদিকে এগিয়ে যেতে হবে। তা না হলে সংকট আরও গভীর হবে।
 

Link copied!