Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪,

তফসিল ঘোষণা হলেই অসহযোগ

আবদুর রহিম

নভেম্বর ৯, ২০২৩, ১০:৫৮ পিএম


তফসিল ঘোষণা হলেই অসহযোগ

চতুর্থ দফায় আবারও রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ঘোষণা

  • তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাস্তবায়ন পর্যন্ত অবরোধ ও ধারাবাহিক কর্মসূচি  
  • প্রযুক্তির মাধ্যমে লন্ডন থেকে মাঠ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ
  • প্রয়োজন ছাড়া যার যার এলাকা ত্যাগ না করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ
  • অবরোধের সমর্থনে গতকাল বিএনপি জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল

চতুর্থ দফায় আবারও আগামী রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপি। আগামী রোববার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত সারা দেশে এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে দলটি। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এর আগে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশে হামলা, হত্যার প্রতিবাদে ২৯ অক্টোবর হরতাল পালন করে দলটি। এরপর ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ৭২ ঘণ্টার অবরোধ দেয়। তৃতীয় দফায় দুই দিনের অবরোধ কর্মসূচির শেষ দিন কর্মসূচি দিয়ে দলটি বলছে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত তাদের অবরোধ চলবে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ প্রেরণের দাবিতে অবরোধ চলতেই থাকবে। গণতন্ত্রের বিজয় পতাকা উড্ডীন না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলতেই থাকবে। 

এদিকে বিএনপির সঙ্গে তাল মিলিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা, আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ জাতীয় নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ দাবিতে তৃতীয় দফায় টানা ৪৮ ঘণ্টার (৮ ও ৯ নভেম্বর) অবরোধ ডেকেছে জামায়াত। এরপর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে ঘেরাও ও অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে। আগামী সপ্তাহে বড় কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। দলটির অনেকে বলছেন, তফসিল ঘোষণা হলে চূড়ান্ত মুভমেন্টে যাবে বিএনপি। তখন যুপপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোকে নিয়ে এক ব্যানারে আসারও চিন্তা করা হচ্ছে। শক্তিশালী জোটগুলো থেকে এমন প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। বিএনপির নির্বাহী কমিটির নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, তফসিল ঘোষণা করা হলে অসহযোগ আন্দোলনে যাবে বিএনপি। এটির রূপরেখা কিংবা ধরন কী হবে তা আগেই যুগপৎ আন্দোলনে থাকা জোটগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। দলের মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতাদের আটক করা হলেও এ নিয়ে বিএনপি চিন্তিত নয়। বিকল্প নেতৃত্ব কে দেবেন তা আগেই ঠিক করে রাখা হয়েছে। আন্দোলন কঠিন থেকে কঠিন হবে— সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে ঢাকা থেকে সারা দেশে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে।  

বিএনপির দুই নির্বাহী কমিটির সদস্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে আমার সংবাদকে বলেছেন, ‘ঢাকা থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলের সব নেতাকর্মীকে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া যার যার এলাকা ত্যাগ না করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। আন্দোলনের ধরন কী হবে তা স্বল্প সময়ের মধ্যে জানানো হবে। ঢাকা থেকে সারা দেশকে বিচ্ছিন্ন করার বার্তা দেয়া হয়েছে। টানা অবরোধ চলতেই থাকবে। এর ফাঁকে ফাঁকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ঘেরাও কর্মসূচিও আসতে পারে। তবে তফসিল ঘোষণার পর ‘ডু অর ডাই’ নীতি গ্রহণ করে চূড়ান্ত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। গ্রেপ্তার এড়িয়ে চূড়ান্ত প্রস্তুতির জন্য মানসিকভাবে তৈরি হতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলেও সেই বার্তা দেয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বিশেষ প্রযুক্তিতে তারেক রহমান কথা বলছেন বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রটি বলছে। তাই কাকে কী দায়িত্ব হয়েছে, প্রথম সারির নেতারাও এ বিষয়ে জ্ঞাত নন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল অবরোধে সারা দেশে বিএনপি ও জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। গতকাল  বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে পিকেটিং ও সড়ক অবরোধ করা হয়।  সকাল ৮টায় উত্তরা-আশুলিয়া সড়কে তিনি নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে সড়ক অবরোধ করে পিকেটিং ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ ছাড়া ছাত্রদল সংসদের প্রথম সহ-সভাপতি তানজিল হাসানের নেতৃত্বে মৎসভবন মোড় থেকে শাহবাগ অভিমুখে মিছিল করেছে ছাত্রদল। ঢাকা কলেজের মূল ফটকে তালা দিয়ে ব্যানার সাঁটিয়ে দিয়েছে ঢাকা কলেজ ছাত্রদল। রাজধানীর খিলক্ষেতে ৩০০ ফিটে ঢাকা মহানগর উত্তর সড়ক অবরোধ করে মিছিল ও পিকেটিং করেছে। 

হাতিরঝিলে  স্বেচ্ছাসেবক দলের  এক নং সহ-সভাপতি ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গুলশান-১ এ সরকারি তিতুমীর কলেজ ছাত্রদল বিক্ষোভ মিছিল করেছে। রাজধানীর চারটি এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ। স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি এ এ জহির উদ্দিন তুহিন ও সাধারণ সম্পাদক সাদ মোর্শেদ পাপ্পা নেতৃত্বে দেন। ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ্যামলের নেতৃত্বে মালিবাগে পিকেটিং হয়েছে। অবরোধের তৃতীয় দফায় ৪৮ ঘণ্টার দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর শনির আখড়া, মতিঝিল, হাজারীবাগ, খিলগাঁও ও ধোলাইরপাড় মোড়, মিরপুর, উত্তরা, আবদুল্লাহপুর, মোহামদপুর এলাকায় জামায়াতও সড়কপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

বিএনপির সর্বশেষ বিষয়ে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেড় দশকে বাংলাদেশের জনপদ এক মৃত্যু-উপত্যাকায় পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্রহীন, মানবাধিকারহীন, মানবিক মর্যাদাহীন এক জংলি নিষ্ঠুর স্বৈরশাসকের জাঁতাকলে নিষ্পেষিত হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ তথা আজকের বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আজ রক্তাক্ত, ক্ষত-বিক্ষত মানুষের করুণ আর্তনাদের প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশের সমগ্র মানুষ আজ ফিরে পেতে চায়, হারানো গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার। দীর্ঘ দেড় দশক ধরে হাজারো অত্যাচার, নিপীড়ন সহ্য করে জনগণ আন্দোলন-সংগ্রাম করছে। জনগণের দাবি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন, সবার অংশগ্রহণ, নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া যা বিগত দেড় দশকে শেখ হাসিনা রাষ্ট্র সমাজ থেকে সেগুলো উচ্ছেদ করেছেন। 

তিনি আরও বলেন, অবরোধ কর্মসূচিকে বানচাল করার জন্য সরকার তার চণ্ডনীতির সব কিছু প্রয়োগ করেছে। নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং কোথাও কোথাও মুক্তিপণ আদায় চলছে গ্রেপ্তারের পর। অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের আরও নানা বিষয়ে এক দফা দাবিতে এই অবরোধ কর্মসূচি। র্যাব-পুলিশ, বিজিবি ও আওয়ামী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে যৌথভাবে যে গেস্টাপো বাহিনী তৈরি হয়েছে তারা জনগণের সাথে ‘সহিংস আচরণ’ করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার জন্য গোটা জাতির নিরাপত্তাকে হুমকির মধ্যে ফেলেছে এবং আরেকটি এক তরফা নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে। কিন্তু বঞ্চিত, ব্যথ্যাহত নিপীড়িত জনগণ সর্বশক্তি দিয়ে ভোটারবিহীন এক তরফা নির্বাচন হতে দেবে না।  আওয়ামী লীগের বেপরোয়া দুর্বৃত্তপনার বিরুদ্ধে জনগণ পথে পথে, সড়ক-মহাসড়কে মানবপ্রাচীর গড়ে তুলে অবরোধ অব্যাহত রাখবে। শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন থেকে মুক্তি ও পরিত্রাণ পেতে এক দফার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে।’

রিজভী বলেন, ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর দাবিতে অবরোধ চলবে। দলের মহাসচিবসহ সব নেতার মুক্তি দাবিতে অবরোধ চলবে। গণতন্ত্রেও বিজয় পতাকা উড্ডীন না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে। বাঁচবার অধিকার কাড়তে/দাস্যের নির্মোক ছাড়তে/অগণিত মানুষের প্রাণপণ যুদ্ধ/চলবেই, চলবেই। আমাদের সংগ্রাম চলবেই। হোক না পথের বাধা প্রস্তর শক্ত/অবিরাম যাত্রার চির সংঘর্ষে/একদিন সে পাহাড় টলবেই/চলবেই/চলবেই/আমাদের সংগ্রাম চলবেই। 

গত ২৮ ও ২৯ জুলাই থেকে অদ্যাবধি বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারা দেশের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, মোট গ্রেপ্তার ১২ হাজার ৮১১ জন, মোট মামলা ৫৯২টি, মোট আসামি  ৪৬ হাজার ১৮ জন, মোট আহত পাঁচ হাজার ৯৭২ জন, মোট মৃত্যু ১২ জন (সাংবাদিক একজন), মোট ১৭টি মামমলায় ৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও প্রায় ১১১ জনের অধিক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়।
 

Link copied!