নভেম্বর ১৫, ২০২৩, ১২:১৬ এএম
- তফসিল সম্পর্কে জানাতে আজ সকালে ব্রিফিং করবেন ইসি সচিব
- ডোনাল্ড লুর পাঠানো চিঠির প্রভাব তফসিল ঘোষণায় পড়বে না
- সংকট নিরসনে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতার তাগিদ বিভিন্ন মহলের
সবকিছু ঠিক থাকলে আজ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন সচিবের দেয়া বক্তব্য থেকে এমন ধারণা পাওয়া গেছে। আজ বিকাল ৫টায় কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভার পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের। সে ভাষণেই তিনি তফসিল ঘোষণা দেবেন। তবে ঠিক কখন তফসিল ঘোষিত হবে, আজই ঘোষণা করা হবে কি না— সেটি আরও স্পষ্ট করে জানাতে আজ সকাল ১০টায় সাংবাদিকদের ব্রিফিং করবেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
ইসি সূত্র জানায়, আজ বিকালে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকের পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হতে পারে। সাধারণত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। এরপর বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে প্রচারের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাষণ রেকর্ড করা হয়। সন্ধ্যায় ওই ভাষণ প্রচার করা হয়ে থাকে। ওই ভাষণেই মূলত তফসিল ঘোষণা করা হয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল নিয়ে আজ বুধবার বৈঠক ডেকেছে নির্বাচন কমিশন। তবে তফসিল কবে হবে— সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য এখনো দেয়া হয়নি কমিশনের পক্ষ থেকে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র জানিয়েছে, আজ বিকাল ৫টায় কমিশনের বৈঠকের পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে তফসিল ঘোষণা করতে পারেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। আর নির্বাচন হতে পারে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। গতকাল দুপুরে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, কবে, কখন কীভাবে তফসিল ঘোষণা করা হবে, এ বিষয়টি আগামীকাল (আজ বুধবার) সকাল ১০টায় আপনাদের অবগত করব। কবে-কখন কী হবে, সেটা বুধবার (আজ) জানাতে পারব। এ সময় সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছেন আজ (১৫ নভেম্বর) তফসিল ঘোষণা হতে পারে কি না। জবাবে তিনি বলেন, সবকিছু আগামীকালই (আজ বুধবার) বলতে পারব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা জানেন ৭০ এবং তার পরবর্তী যতগুলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে, তার প্রত্যেকটি তফসিলই প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে অবগত করেছেন। এবারও সেই রেওয়াজ অব্যাহত থাকবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া তফসিল ঘোষিত হলে বড় আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে বিএনপি ও জামায়াত। একইভাবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, সমমনা পাঁচটি ইসলামি দলের জোটসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা চায়— এমন রাজনৈতিক দলগুলো। তারা বলছে, নির্বাচনকালীন সরকার কী হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা এখনো হয়নি। বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। তারা সরকারের পদত্যাগ দাবিতে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। একই কর্মসূচি পালন করছে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলোও।
এদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলটির নেতারা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
যে কোনো সময় দ্বাদশ নির্বাচনের তফসিল হতে পারে— ঠিক এমন সময়ে এসে দেশের প্রবীণ রাজনীতিক ড. কামাল হোসেন গতকাল সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। একইদিন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সংলাপে সম্মতি আছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এর এক দিন আগে ১৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে শর্তহীন সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র দেয়া চিঠি বিএনপি ও জাতীয় পার্টি পেয়েছে। অবশ্য আওয়ামী লীগ গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করেনি।
এদিকে, দেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র পাঠানো চিঠির প্রভাব তফসিল ঘোষণায় পড়বে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম। গতকাল দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে ইসি সচিব এ কথা বলেন। ভোট পিছিয়ে সংলাপের জন্য চিঠি পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু— এ বিষয়ে ইসির কনসার্ন কি? তফসিল ঘোষণায় এর প্রভাব পড়বে কি? এমন প্রশ্নে ইসি সচিব বলেন, ওই চিঠি তফসিল ঘোষণায় কোনো প্রভাব পড়বে না। তিনি বলেন, ডোনাল্ড লু’র চিঠি সংলাপের কি না— এ বিষয়ে কমিশন অবগত নয়। কমিশন তার নিজস্ব গতিতে সাংবিধানিক আলোকে যেভাবে রোড ম্যাপ প্রস্তুত করেছে, সেভাবেই কাজ করবে।
ইতোমধ্যে তফসিলকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রবেশে কিছু বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। গতকাল নির্বাচন সচিবালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা জহুরা আক্তার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সংবাদকর্মী, নির্বাচন কমিশন, সচিবালয়, সব প্রকল্প, নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের গলায় পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে প্রবেশ করার অনুরোধ জানানো হয়।
গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ২৪ মন্ত্রণালয়/বিভাগের ১৫৭ প্রকল্পের আওতায় দেশব্যাপী নির্মিত ১০ হাজার ৪১টি অবকাঠামোর সমন্বিত উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে উল্লেখ করে ‘হয়তো দু-একদিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দেবে’ বলে উল্লেখ করেন। একইদিন দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেছেন, নির্বাচনি তফসিলের সঙ্গে সংলাপের কোনো সম্পর্ক নেই। সুনির্দিষ্ট সময়েই তফসিল ঘোষণা করা হবে।
প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। তাই সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সংসদের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। পরবর্তী সংসদের জন্য ভোটগ্রহণ করতে হবে তার আগের ৯০ দিনের মধ্যে। অর্থাৎ গত ১ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হয়েছে। আর ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটারসংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। আর ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ১০৩টি।