Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

হরতাল-অবরোধের এক মাস

হামলা-অগ্নিসংযোগে চলছে রাজনৈতিক কর্মসূচি

মহিউদ্দিন রাব্বানি

নভেম্বর ২৭, ২০২৩, ১১:৫৪ পিএম


হামলা-অগ্নিসংযোগে চলছে রাজনৈতিক কর্মসূচি
  • এক মাসে ২১০ পরিবহন ও আট স্থাপনায় আগুন
  • অষ্টম ধাপে ২৪ ঘণ্টার কর্মসূচি বিএনপির
  • ১৭ দিনে পরিবহন খাতে ক্ষতি ৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা
  • হরতাল-অবরোধে দৈনিক ক্ষতি সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা

হরতাল-অবরোধে সব ধরনের নাশকতা হচ্ছে শুধু গণপরিবহনের ওপর
—বাস মালিক সমিতি

চাই দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা  বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা উদ্বিগ্ন 
—মন্তব্য ব্যবসায়ীদের

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখোমুখি দেশের আর্থিক খাত। গত ২৮ অক্টোবর থেকে বিএনপি-জামায়াতসহ রাজপথে থাকা সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো টানা হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি দিয়ে আসছে। এতে সারা দেশে বিভিন্ন পরিবহন ও স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। ফায়ার সার্ভিসের দেয়া তথ্য মতে, গত ২৮ অক্টোবর থেকে গতকাল ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত একমাসে ২১৮টি আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ২১০টি পরিবহন ও আটটি স্থাপনায় আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। চলমান আন্দোলনে গড়ে সাতটি পরিবহনে আগুন দেয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের প্রধান শাহজাহান সিকদার আমার সংবাদকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কবে আসবে, কবেই-বা বন্ধ হবে বিরোধীদের নৈরাজ্য, জানে না সাধারণ মানুষ। হরতাল-অবরোধ ডাকলেই সাধারণ মানুষের মধ্যে এক আতঙ্ক তৈরি হয়। বিশেষ করে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়েই গণপরিবহনে যাতায়াত করেন যাত্রীরা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাজনৈতিক সমঝোতা দরকার। সমঝোতা না হলে সামনে আরও বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে দেশ। এতে বলি হবে সাধারণ মানুষ। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর টানা হরতাল-অবরোধে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা বাড়াতে নির্দেশনা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। নির্বাচন ঠেকাতে ও সরকার পতনের আন্দোলনের নামে গত ২৮ অক্টোবর থেকে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে আসছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এতে ১৭ দিনের কর্মসূচিতে যানবাহন কম চলাচল করায় আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। সম্প্রতি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ গণমাধ্যমকে ১৭ দিনে পরিবহন খাতে ক্ষতির চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত হরতাল-অবরোধের ১৭ দিনে শুধু গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে পরিবহন খাতে ক্ষতি হয়েছে ৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তিনি আরও বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে যানবাহন কম চলাচল করায় এর আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৩৩৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। সর্বমোট গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে ২৫৫টি। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, হরতাল কিংবা অবরোধে দিনে সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়। তাই আমরা এরকম হরতাল-অবরোধ চাই না। এদিকে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, হরতাল-অবরোধে দৈনিক ক্ষতি সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা। করোনা মহামারির ধকল সামলে ওঠার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে এমনিতেই দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। তার ওপর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে কেন্দ্র করে হরতাল-অবরোধ শুরু হয়েছে। যা দেশের অর্থনীতির জন্য বড় ক্ষতিকর হবে —বলেছেন ব্যবসায়ীরা। 

জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, আমরা চাই সুষুম নির্বাচনের মাধ্যমে যেকোনো সরকার ক্ষমতায় আসুক। হরতাল কিংবা অবরোধে দিনে সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। সুতরাং আমরা চাই দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। আমরা হরতাল কিংবা অবরোধ চাই না। হরতাল কিংবা অবরোধ অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন।

মহাখালী বাসটার্মিনাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, হরতাল-অবরোধে সব রকমের প্রয়োগ হচ্ছে শুধুমাত্র গণপরিবহনের ওপর। এমনকি হরতাল সমর্থনকারীদের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের গাড়িও নির্বিঘ্নে চলছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে জ্বালাও-পোড়াও পরিহার করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে হরতাল-অবরোধের কারণে আয় রোজগার কমায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। তারা বলেন, ‘গাড়ি চালানো বাদ দিয়ে আমাদের এখন দায়িত্ব হলো তিন-চারজন মিলে পালা করে আগুন থেকে বাঁচতে গাড়ি পাহারা দেয়া।’

উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে হামলা, হত্যা, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে প্রথমে ২৯ অক্টোবর হরতাল এবং ৩১ অক্টোবর, ১ ও ২ নভেম্বর মোট তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের শরিকরা। এরপর আবার ৫ ও ৬ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় এবং ৮ ও ৯ নভেম্বর তৃতীয় দফায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করে তারা। ১১ ও ১২ নভেম্বর চতুর্থ দফা, ১৫ ও ১৭ নভেম্বর পঞ্চম দফা, এবং ২২ ও ২৩ নভেম্বর ষষ্ঠ দফা, ২৬ ও ২৭ নভেম্বর সপ্তম দফায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করে দলটি। আবারও বিএনপি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে। আগামী ২৯ নভেম্বর বুধবার ভোর ৬টা থেকে ৩০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত অষ্টম ধাপে ২৪ ঘণ্টার অবরোধ এবং ৩০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। 
 

Link copied!