ডিসেম্বর ৪, ২০২৩, ০৩:৩০ পিএম
- ১ থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম ধাপের প্রশিক্ষণে শিক্ষকরা
- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে প্রশিক্ষণের ভিডিও
- এমন প্রশিক্ষণকে উদ্ভট ও সম্মানহানিকর বলছেন নেটিজেনরা
আমাদের প্রশিক্ষণের অংশ নয় এমন ভিডিও ছড়িয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে
—ডা. দীপু মনি, শিক্ষামন্ত্রী
বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে কোনো সমস্যা থাকলে এনসিটিবি বা সরকারকে জানানো প্রয়োজন
—ড. তারিক আহসান, সদস্য, জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটি
নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে দেশজুড়ে প্রথম ধাপের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। ডিসেম্বরের ১ থেকে ৭ তারিখ পর্যন্ত প্রথম ধাপের কার্যক্রম চলবে। প্রশিক্ষণের কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় হাস্যরস সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ সমালোচনা করে বলছেন, শিক্ষকদের দিয়ে এসব উদ্ভট কার্যক্রম করিয়ে তাদের আত্মসম্মানহীন করা হচ্ছে। অনেকে এর মাঝে শিক্ষা ব্যবস্থার ধ্বংস দেখছেন। তবে শিক্ষাক্রম প্রণয়নের সাথে জড়িতরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের আনন্দের সঙ্গে শেখানোর উদ্দেশ্যে উন্নত দেশেও এরকম প্রশিক্ষণ আছে। ভাইরাল ভিডিওর কয়েকটি প্রশিক্ষণের ভিডিও নয়।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন কারিকুলামের প্রশিক্ষণের অংশ নয় এমন ভিডিও ছড়িয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ভয়ানক রকম অপপ্রচার চলছে।
জানা যায়, শিক্ষকরা অভিনয় করে হাঁসের ডাক (প্যাক প্যাক করে) শিখছেন। আরেক দল শিক্ষক ব্যাঙয়ের মতো করে লাফানো শিখছেন। ছাত্র-শিক্ষক মিলে রান্না-বান্না করে বনভোজন করছেন। অন্য আরেক ভিডিও ক্লিপে সাইকেল চালানোর মতো করে কিছু একটা শেখানো হচ্ছে। শিক্ষক প্রশিক্ষণ-২০২৩ এর ব্যানার সম্বলিত এক প্রশিক্ষণে শিক্ষকরা আমরা সবাই রাজা, এই কবিতা কীভাবে শিক্ষার্থীদের আনন্দ দিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়টি চর্চা করছেন। এছাড়াও আরও বিভিন্ন ভিডিও নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে শুরু হয়েছে হাস্যরস। অনেকে করছেন সমালোচনা।
মানিক মুনতাসির নামে একজন অভিভাবক সামাজিক মাধ্যমে বলেন, ভাত রান্না, হাঁসের ডাক, সাইকেল চালানো না শিখিয়ে একটা ফেসবুকের অলটারনেটিভ কোনো প্লাটফর্ম তৈরি করা যায় কিনা— সেটার গবেষণা করেন। শিশুদের শেখান যে গবেষণা মানে আরেকজনের পেপারস চুরি করা নয়। নৈতিক শিক্ষার বিষয়েও কিছু জ্ঞান দেন। সেটা কর্মক্ষেত্রে ব্যাপক কাজে লাগবে। এটা হলে অন্তত দেশ থেকে অর্থপাচার কম হবে। চুরিও কমবে।
এস এম নুর মোহাম্মদ বলেন, এই জাতিকে ধ্বংস করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সন্তানদের নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত। গতকাল রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে পাঠ্যাভ্যাস উন্নয়নে দেশের ১৫ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩১ লাখ নির্বাচিত বই (পাঠ্যপুস্তক ছাড়া) বিতরণ কার্যক্রমের উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষাক্রম নিয়ে মিথ্যাচারের প্রতিবাদ জানিয়ে অভিভাবকদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যা শিক্ষাক্রমের অংশ নয়, আমাদের প্রশিক্ষণেরও অংশ নয়, এমন ভিডিওসহ বিভিন্ন বিষয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ব্যাপকভাবে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। অতীতের কোনো প্রশিক্ষণে (যা মাধ্যমিকের নয়) প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে নিজেরা নিজেরা বিনোদনের অংশ হিসেবে যে প্র্যাকটিস করেছে সে রকম কিছু ভিডিও সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে এগুলো প্রশিক্ষণ। এমনকি নতুন ভিডিও তৈরি করেও ছড়িয়ে দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ভয়ানক রকম অপপ্রচার চলছে এবং সেটি হচ্ছে ব্যক্তি স্বার্থ বা গোষ্ঠী স্বার্থহানি হওয়ার ভয়ে।
নতুন শিক্ষাক্রমের ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর ব্যাপারে জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটির সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক মো. তারিক আহসান, শিক্ষার্থীদের আনন্দের সঙ্গে শেখানোর জন্য উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষকরা এভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। ভাইরাল হওয়া সব ভিডিও প্রশিক্ষণের ভিডিও নয়। মূলত নতুন কারিকুলামের ব্যাপারে যথাযথভাবে বুঝতে না পেরেই এ ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। কেউ জেনে আবার কেউ না জেনেই এ ধরনের তথ্য ছড়াচ্ছেন।কারিকুলাম নিয়ে যেকোন সমস্যা থাকলে বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে এনসিটিবি বা সরকারকে জানানো প্রয়োজন।
ফেসবুকে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নিয়ে যে ভিডিও দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে সঠিক তথ্য—
১। হাঁসের প্যাক প্যাক ছড়ার মাধ্যমে শিশুদের ভগ্নাংশ শিখানোর জন্য একটা কৌশল, যা গণিত অলিম্পিয়াড প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালে রয়েছে। গণিত অলিম্পিয়াড নামে একটা প্রজেক্ট ছিলো, যা এখন আর নেই। গণিত অলিম্পিয়াড প্রজেক্টের মাধ্যমে আনন্দে গণিত শিখির জন্য গণিত অলিম্পিয়াড প্রজেক্ট কনসালট্যান্টের মাধ্যমে ম্যানুয়াল প্রণয়ন করে এবং তারা প্রশিক্ষণ প্রদান করে।
পরবর্তী সময়ে প্রশিক্ষণ বিভাগের মাধ্যমে এ প্রশিক্ষণ ইউআরসিতে প্রদান করা হয়। বর্তমানে এ প্রশিক্ষণ আর হচ্ছে না।
২. সাইকেল চালানোর মাধ্যমে অঙ্গভঙ্গি করে যে শিখন পরিচালনা হচ্ছে তা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পরিচালিত কোনো প্রশিক্ষণের অংশ নয়। এমন কোনো ছড়া বা কৌশল অধিদপ্তর থেকে পরিচালিত কোনো প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালে নেই।
৩. ব্যাঙের মতো করে লাফানোর ভিডিওটা স্কাউটিংয়ের অংশ। স্কাউটে এ বিষয়টি আছে।
৪. বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পরিচালনার সময় শিক্ষকরা সেশন শুরুর আগে বিভিন্ন রকম ফান এক্টিভিটি করে থাকেন। অনেক সময় এটা অনেকে ভিডিও করে এবং কিছু অংশ ফেসবুকে প্রচার করে থাকেন। অনেক সময় মূল বিষয়ের সাথে মিল থাকে না। এ ভিডিওগুলো তেমন। বর্তমানে কারিকুলাম বিরোধী একটা গ্রুপ পুরোনো এ ভিডিওগুলো ফেসবুকে দিচ্ছে। গণিত অলিম্পিয়াড প্রশিক্ষণ ২০২২ সালেই শেষ হয়েছে।