ডিসেম্বর ১৭, ২০২৩, ১১:৩৪ পিএম
যে কোনো সময় ঘোষণা হচ্ছে জামায়াত-বিএনপির এক মঞ্চে চূড়ান্ত কর্মসূচি। নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, আগামী ২৩ ডিসেম্বর সম্ভাব্য দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এক মঞ্চের কর্মসূচি ঘোষণা হবে। জামায়াত নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের এতদিন মতানৈক্য থাকলেও সেটিও কেটে গেছে। গতকাল সন্ধ্যায় এক বৈঠকে ইসলামী আন্দোলনও এক মঞ্চে কর্মসূচিতে থাকার আশ্বাস দিয়েছে।
প্রাথমিকভাবে ঢাকাসহ সারা দেশে কয়েকটি কর্মসূচি দিয়ে আগামী ২৭ তারিখ থেকে যে আন্দোলনে সরকার ঠেকে, সেই আন্দোলনের পথেই হাঁটবে তারা। গত এক সপ্তাহ ধরে পর্দার আড়ালে জামায়াত ও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সিরিজ বৈঠক চলছে। ইতোমধ্যে আন্দোলন সফলে ঢাকাসহ সারা দেশে সমন্বয় কমিটিও গঠন করা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানিয়েছেন, জামায়াত আমিরের সঙ্গে বিশেষ মাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের চূড়ান্ত কথা হয়েছে। এক মঞ্চে আন্দোলনে বড় দুই নেতা একমত হয়েছেন। এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলনও অধিক গুরুত্ব পেয়েছে। তাদের সঙ্গেও বিএনপি-জামায়াতের হাইকমান্ডের কথা হয়েছে। অন্য একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, দেশের বাইরে জামায়াত ও বিএনপির একাধিক বৈঠক হয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে শক্তিশালী কিছু বিদেশি প্রেসক্রিপশনও যুক্ত রয়েছে। এখন আন্দোলনের ফরমেট নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক চলছে। সবশেষে গতকাল রোববার বিকালে ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গেও বৈঠক হয় বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রটি বলছে, বিএনপির সঙ্গে জাতীয় পার্টির জিএম কাদেরও নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার সম্ভাবনা ছিল। তবে অজানা কারণে তা আর হয়নি। তারা ধারণা করছেন, জিএম কাদের যখনই প্রকাশ্যে আসতে পারেন, তখনই তিনি নির্বাচনে না থাকার ঘোষণা দিতে পারেন।
বিএনপি-জামায়াতের প্রভাবশালী নেতারা জানিয়েছেন, এতদিন ভারত ও কয়েকটি বামপন্থি রাজনৈতিক দলের বিরোধিতায় জামায়াতকে সঙ্গে নেয়া হয়নি। বিশেষ করে এক মঞ্চে ঐক্য গঠনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও গণতন্ত্র মঞ্চের বিরোধিতা ছিল বড় কারণ। গত ২৮ নভেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত ৭২টি মামলায় এক হাজার ১৪১ নেতাকর্মীকে সাজা দেয়া হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। গ্রেপ্তার হন ২৪ হাজার ৮১৬ জন। প্রায় দুই কোটি নেতাকর্মী আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে বন-জঙ্গলে রাতযাপন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্যাতনের শিকার হয়েও ভারতের কোনো সহযোগিতা পায়নি। বরং ভারত ক্ষমতাসীন দলকে পূর্ণ সহযোগিতা করছে বলেই তাদের ধারণা। বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বিদেশে বসে জামায়াত-বিএনপির ঐক্যের বিরোধিতা করছেন। দলের এই দুঃসময়ে তিনি পলাতক রয়েছেন। দলে দীর্ঘ সময় যারা বিভিন্ন দেশের পন্থি হয়ে কাজ করছেন, তাদেরও হাইকমান্ড চিহ্নিত করেছেন। ধাপে ধাপে দলের মৌলিক নেতৃত্ব থেকে তাদের দূরে রাখা হবে। সরকারের পতন নিশ্চিতে দলীয় নেতাকর্মী ও সাংগঠনিক মজবুত ভিত্তির রাজনৈতিক দল ছাড়া এ মুহূর্তে আর কোনো উপায় নেই। জামায়াতই এখন বিএনপির ভরসা। রাজধানীর পল্টন-প্রেস ক্লাবে পুলিশি নিরাপত্তায় যে কয়েকটি দল মিছিল করছে, তাদের সারা দেশে কোনো ভিত্তি নেই। এজন্য জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েই আগামীতে সরকার পতনের চূড়ান্ত করণীয় ঠিক করা হয়েছে।
সম্প্রতি বিএনপির ভার্চুয়ালি সভাগুলোর মধ্যে নেতাকর্মীরা জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে জোর দাবি জানোর পর এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মাঠ পর্যায়ে যেসব নেতা কাজ করছেন, তাদের অধিকাংশের সঙ্গেই তারেক রহমানের যোগাযোগ অব্যাহত আছে। সব বিভেদ ভুলে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনকে সঙ্গে নিতে ত্যাগী নেতাদের পরামর্শ ছিল অন্যতম। নাম প্রকাশে বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা আমার সংবাদকে বলেন, জামায়াতের সঙ্গে ঐক্যের বিষয়টি এখন চূড়ান্ত। আমাদের কয়েকটি বৈঠকও হয়েছে। ইসলামী আন্দোলনও একমত হয়েছে; তারাও থাকবে। এছাড়া জিএম কাদের গতকাল বিকালে ঘোষণা দেয়ার একটা বড় সম্ভাবনা ছিল তিনি নির্বাচনে যাবেন না। কিন্তু অজানা কারণে তা আর সম্ভব হয়নি। তবে তিনি যখনই প্রকাশ্যে আসেন, তখনই ঘোষণা দিতে পারেন নির্বাচনে যাবেন না।
সমমনা পেশাজীজী গণতান্ত্রিক জোটের প্রধান সমন্বয়ক মুহাম্মদ সাইদুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, আমাদের অহংকার তারেক রহমান কালবিলম্ব না করে শিগগিরই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত সব দল, মত ও পক্ষকে একতাবদ্ধ করে এক মহাঐক্যের ডাক দেবেন। যে ডাকে দল-মত নির্বিশেষে সবাই এক মঞ্চে এসে মুক্তিকামী জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করে এই গণবিরোধী সরকারের বিদায় নিশ্চিত করবে। পুরো জাতি এখন এক মঞ্চের কর্মসূচির ডাকের অপেক্ষায়।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকার পতনের দাবিতে সব দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলকেই আন্দোলন করা উচিত। জামায়াত তো ইতোমধ্যে রাজপথেই আছে। তারা এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। তাদের নিয়ে এক মঞ্চের কর্মসূচির বিষয়ে এখনই তিনি মন্তব্য করতে নারাজ। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ আগাম মন্তব্য করে বলেছেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, জামায়াতে ইসলামী নামে যে দলটি দেশের স্বাধীনতা চায়নি এবং সেটি না চাওয়ার জন্য এখনও ক্ষমা চায়নি, সেই দল এখনও রাজনীতি করে এবং তাদের সঙ্গে জোট গঠন করছে বিএনপি। ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ (বীর বিক্রম) আমার সংবাদকে বলেছেন, দেশ রক্ষায় বিএনপি-জামায়াত সবাইকে এখন ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সবাই আন্দোলনে রয়েছে। প্রয়োজনে একসঙ্গেও আন্দোলন হতে পারে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম আমার সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশে জোটগত ও এক মঞ্চে আন্দোলনের ইতিহাস রয়েছে। জামায়াত অতীতেও এক মঞ্চের আন্দোলনে ছিল। যার সফল ইতিহাস রয়েছেন। এখন এক মঞ্চে আন্দোলন কবে হবে— সেটি আমার পক্ষে এখনই বলা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে কিছু আলোচনা হচ্ছে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন। একটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলমীর ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, স্বাধীনতার ৫২ বছর অতিক্রান্ত হলেও বিভেদ ও প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণে আজও আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি। জাতীয় বিভক্তি এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও আমরা একে অন্যকে ‘দালাল’ হিসেবে আখ্যায়িত করি, যা দুঃখজনক। ঐক্যবদ্ধ হতে পারলে আমরা এতদিনে সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারতাম। এই দেশ ও জাতির জন্য এখন ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।