ডিসেম্বর ২৬, ২০২৩, ১২:০১ এএম
হরতাল অবরোধ অসহযোগ আন্দোলন ঢিলেঢালা
- নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসতে আহ্বানের গুঞ্জন
- অফিস-আদালতে ‘তালা মারার’ চিন্তা
- পাঁচ-সাত দিনের বড় আন্দোলনের পরিকল্পনা
- জামায়াতকে নিয়েই চূড়ান্ত আন্দোলনের সম্ভাবনা
- দিল্লি-ওয়াশিংটনে কী হচ্ছে সেই বার্তার জন্য অপেক্ষা
ভোটের বাকি আর মাত্র ১২ দিন! কী করবে বিএনপি? ঘরে-বাইরে এমন প্রশ্ন থাকলেও দলটির হাইকমান্ড, মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মী ও জোটসঙ্গীরাও অন্ধকারে রয়েছে। দলটির নির্ভরযোগ্য নেতারা বলছেন, বিএনপি কী করবে, কী কর্মসূচি দেবে— দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভাবনা সবারই অজানা। গত ২০ ডিসেম্বর যে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়া হয় তাও আগ থেকে কেউ জানত না। কিভাবে পালন হবে, কোন প্রক্রিয়ায় অসহযোগ আন্দোলন সফল হবে, এ নিয়ে দলে বা জোটে কোনো আলোচনা বা ফর্মেট আগে থেকে দাঁড় করা হয়নি। গত ২৮ অক্টোবর সমাবেশে হামলা ও এক দফা কর্মসূচিতে প্রথম দফায় হরতাল-অবরোধে কিছুটা সাড়া মিললেও পরের কর্মসূচি ও অসহযোগ আন্দোলন অনেকটাই ঢিলেঢালাভাবে চলছে।
তবে দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের বিদায়টা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্য হাইকমান্ড থেকে ইঙ্গিত এসেছে।ভোটপূর্ব শেষ সাত দিন বা পাঁচ দিন এ কর্মসূচি পালন করা হবে। তার ধরন কী হবে, তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখা হয়েছে; সময়মতো ঘোষণা করা হবে। এ নিয়ে ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিগুলোতে জামায়াতকেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। গোপনীয়তা রক্ষা করে চলছে প্রতিদিন সিরিজ বৈঠক।
ঢাকার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা জানিয়েছেন, অসহযোগ আন্দোলনের পর বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা সব ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গুরুত্বপূর্ণ সরকারকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতে ‘তালা মারার’ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পরে হাইকমান্ডের নির্দেশে সেটি আর বাস্তবায়ন হয়নি। তবে পরবর্তীতে নির্দেশনা আসতে পারে। শান্তিপূর্ণভাবে আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে অজানা কারণে সেটি এখনই বাস্তবায়ন হচ্ছে না। দু’-একটি বৈঠকে একটি বিশেষ মাধ্যম থেকে আসা গণকারফিউ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ কর্মসূচির বিষয়ে বাম রাজনীতির বড় অংশ থেকে বাধা দেয়া হয়েছে। আবার দু’-একটি দল পরিকল্পনা নিয়ে বাস্তবায়নে উৎসাহও দিয়েছে।
এ বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের জোটে থাকা এক নেতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে আমার সংবাদকে জানান, গণকারফিউ বিষয়ে প্রস্তাব আসার সঙ্গে সঙ্গে তারা এই কর্মসূচি ঘোষণা দিতে ‘না’ করেছেন। তা বাস্তবায়ন ও জনগণকে সম্পৃক্ত করা দুঃসাধ্য বলেই মনে করছেন। তিনি এও বলেন, সমপ্রতি যে অসহযোগ কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হয়, সেটির বিষয়ে তারা অবগত ছিলেন না। ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর তারা এ নিয়ে আর বিরোধিতাও করছে না।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, সরকার পতনে বিএনপি-জামায়াতের এক মঞ্চের বিষয়ে গভীরভাবে আলোচনা হচ্ছে। কিছু বাধা আসার পরও এখনো জামায়াতকে নিয়েই এক মঞ্চের কর্মসূচি পালনে বড় সম্ভাবনা রয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের আদলে প্রেস ক্লাবকেন্দ্রিক দলগুলো দিয়ে বিএনপির মৌলিক প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না। বাধা-মতানৈক্য থাকলেও যা করলে সরকারের পতন হতে পারে, বিএনপি সেটিই করবে। এ বিষয়ে ঢাকাকেন্দ্রিক কর্মসূচিকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে বিএনপি-জামায়াতের একটি অংশকে ঢাকা প্রবেশের জন্য নির্দেশ দেয়া হতে পারে। তবে একচেটিয়া সবাইকে নয়। ছাত্র কিংবা যুব অংশের একটিকে নিজ নিজ এলাকায় থাকতে বলা হবে। ঢাকার সঙ্গে যেন সারা দেশেই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে ঢাকা থেকে সারা দেশকে বিচ্ছিন্ন। এ ক্ষেত্রে বিএনপি যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে কিছু হয় কি-না সেটিও দেখবে।
বিএনপির এক নির্বাহী কমিটির সদস্য বলেন, আপনারা জানেন, বড়দিনের ছুটি কাটাতে সস্ত্রীক ভারতের নয়াদিল্লিতে রয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত মা?র্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি গত ২২ ডি?সেম্বর ঢাকা ছাড়েন। আমরা মনে করছি, দিল্লি-ওয়াশিংটনের একটি সমঝোতা হতে পারে। সেই গতিবিধি দেখেও আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যাব। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যন অবশ্যই কার্যকর সিদ্ধান্ত দেবেন। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, এই সরকারের বিদায় আর সহজ হবে না। আমাদের যেকোনো বিষয়ে প্রস্তুত থাকতে বার্তা দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘একতরফা নির্বাচনে রাজনৈতিক যে সংকট তৈরি হয়েছে এটিকে রাজপথেই মোকাবিলা করতে হবে। অন্য কোনো পথে এর সমাধান নেই। আমি মনে করি, অবশ্যই এর সমাধান আসবে, আসতেই হবে। বিএনপির নেতাকর্মীদের মনোবল দৃঢ়, ফয়সালা হবেই হবে। এখন শুধু নির্দেশনা ও ঘোষণার অপেক্ষায়।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘ভোট বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে আমাদের লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ কর্মসূচি চলছে। এরপর ভোটের দিনটি সামনে রেখে কর্মসূচি দেয়া হবে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলতে থাকবে। দেশের জনগণ অনশ্যই আমাদের কর্মসূচিতে সাড়া দেবেন।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা অসহযোগ আন্দোলনে রাজপথে রয়েছি। সরকারের পতনের দাবিতে এবং দেশের গণতন্ত্র আর ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে চলমান আন্দোলন আরো জোরদার করা হবে। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে ভিন্ন ফরম্যাটের কর্মসূচি নিয়ে ভাবা হচ্ছে। কী কর্মসূচি হবে, সেটি এখনই বলা অসম্ভব।’