Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪,

জনপ্রশাসন

অতিউৎসাহী মনোভাবে কর্মকর্তারা দণ্ডিত!

বেলাল হোসেন

ডিসেম্বর ২৬, ২০২৩, ১২:০৬ এএম


অতিউৎসাহী মনোভাবে কর্মকর্তারা দণ্ডিত!

প্রত্যেকটা বছরই আমাদের কাছে কিছু বিষয় নিয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকে। বিদায়ী ২০২৩ সালও এর ব্যতিক্রম নয়। চলতি বছর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু ঘটনা প্রশাসনকে ছাপিয়ে সারা দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়। এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে বিশেষ করে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সরকারকে পড়তে হয় বিব্রতকর অবস্থায়। উচ্চপর্যায়ের কোনো কোনো কর্মকর্তা অর্পিত দায়িত্বের বাইরে গিয়ে বেফাঁস মন্তব্য, নিজের খায়েশ পূরণে অতিরঞ্জিত কাজ করতে গিয়ে ওএসডি হয়েছেন, কেউ হারিয়েছেন নিজের চাকরি। এর তালিকায় ছিলেন সিনিয়র সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব, উপসচিব ও এসিল্যান্ড। 

নির্বাচনি প্রচারে অংশ নেয়ায় সিনিয়র সচিব খাজা মিয়া ওএসডি : চাকরিতে থাকাকালীন অবস্থায় নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেয়ায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব খাজা মিয়াকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। গত জুলাইয়ে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। অথচ, তার চাকরির মেয়াদ আছে আরও এক বছর। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মকর্তার অবসর গ্রহণের তিন বছর পার হওয়ার আগে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। খাজা মিয়ার বিরুদ্ধে সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদও প্রকাশিত হয়। এসব প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে নিজ এলাকা নড়াইল-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়ার ঘোষণা দিয়ে খাজা মিয়া নির্বাচনি প্রচারণাও শুরু করেন। 

সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯-এর ২৫(১) ধারায় (রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ) বলা হয়েছে, ‘সরকারি কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের বা রাজনৈতিক দলের কোনো অঙ্গ সংগঠনের সদস্য হতে অথবা অন্য কোনোভাবে যুক্ত হতে পারবেন না অথবা বাংলাদেশ বা বিদেশে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে বা কোনো প্রকারের সহায়তা করতে পারবেন না।’ অন্যদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২-এর ১২ (১) (চ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের বা প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগের কোনো চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছেন বা অবসর গমন করেছেন এবং উক্ত পদত্যাগ বা অবসর গমনের পর তিন বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকে। অর্থাৎ অবসর বা পদত্যাগের পর তিন বছর শেষ না হলে কোনো সরকারি চাকরিজীবী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।’

বিদ্যুৎ খাত নিয়ে নেতিবাচক প্রতিবেদন, বরখাস্ত হলেন অতিরিক্ত সচিব ও উপসচিব : বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নকে লুটেরা মডেল অভিহিত করে খাতটি ভারত ও চীনের ব্যবসায়ীদের জন্য অবাধ ক্ষেত্র উল্লেখ করায় গত জুলাইয়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত হন ওএসডি হওয়া অতিরিক্ত সচিব এসএম হামিদুল হক ও উপসচিব মোহাম্মদ মাহিদুর রহমান। ওএসডি অবস্থায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তাদের বরখাস্ত সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ এনে বিভাগীয় মামলা করা হয়। জানা গেছে, আইএমইডির এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বৃদ্ধির সমালোচনা করা হয়। বিদ্যুৎ খাত-সংক্রান্ত মূল্যায়ন প্রতিবেদনের অংশবিশেষ আইএমইডির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এতেই ঘটে বিপত্তি। বিদ্যুৎ খাত নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন নিয়ে সরকারের শীর্ষ মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। যে কারণে এ সংক্রান্ত কাজে যুক্ত আইএমইডির সেক্টর-১-এর মহাপরিচালক ও পরিচালককে ওএসডির পর বরখাস্ত ও বিভাগীয় মামলা হয়েছে। সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর প্রকল্প মূল্যায়নে আইএমইডিতে মোট আটটি সেক্টর রয়েছে। এর মধ্যে সেক্টর-১ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিষয়গুলো দেখভাল করে। বিদ্যুৎ খাত-সংক্রান্ত প্রতিবেদনের জন্য মূল দায়িত্ব ছিল পরিচালক মাহিদুর রহমানের এবং ওই সেক্টর প্রধান ছিলেন এসএম হামিদুল হক। প্রশাসন ক্যাডারের ১৩ ব্যাচের কর্মকর্তা হামিদুল হক অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার ২৪ দিন আগে ওএসডি হন।

মন্ত্রীর সমালোচনা; নদী কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুরকে সরিয়ে দেয়া হয় : মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে সরকার। গত অক্টোবরে তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরীর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবশিষ্ট মেয়াদ জনস্বার্থে বাতিল করা হলো। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মনজুর আহমেদকে তিন বছরের জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন, ২০১৩’-এর ধারা ৫(২) এবং একই আইনের ধারা ৫(৩) অনুযায়ী তিনি এ নিয়োগ পান। যোগদানের তারিখ থেকে এ নিয়োগ কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়। মনজুর আহমেদ জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনে যোগ দেন ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি। সে হিসাবে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় দেড় বছর আগে তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করল সরকার।
মনজুর আহমেদ চৌধুরী দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে নদী দখল নিয়ে বক্তব্যের কারণে বিভিন্ন সময় আলোচনায় এসেছিলেন। গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি সরাসরি নাম না উল্লেখ করে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সমালোচনা করেন। ওই দিন তিনি বলেন, মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে যারা বালু উত্তোলন করছেন, তাদের সঙ্গে চাঁদপুরের একজন নারী মন্ত্রীর সম্পর্ক আছে। সেদিন তিনি বলেছিলেন, হায়েনারা দল বেঁধে মেঘনায় হামলে পড়েছে। মেঘনা থেকে আবার বালু তোলার চেষ্টা চলছে। এখানে শত শত ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হবে। এতে নদীর ক্ষতি হবে, মাছের ক্ষতি হবে, পরিবেশের ক্ষতি হবে। এদের থেকে নদীকে রক্ষা করা যাচ্ছে না।

নারীর সঙ্গে ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় যুগ্ম সচিবকে ওএসডি : এক নারীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় বরগুনার সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. হাবিবুর রহমানকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। গত অক্টোবরে তাকে ওএসডি করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ অক্টোবর এক নারীর সঙ্গে হাবিবুর রহমানের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দুটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে একটি ছয় মিনিট ১৭ সেকেন্ডের এবং অপরটি এক মিনিট ১০ সেকেন্ডের। ভিডিও দুটি ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে সচিবালয়সহ সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়।

হাবিবুর রহমান বিসিএস ২২তম ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর বরগুনার জেলা প্রশাসক পদে যোগ দেন। আড়াই বছর দায়িত্ব পালনের পর ২০২৩ সালের ৯ জুলাই তাকে উপসচিব পদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে পদায়ন করা হয়। গত ৪ সেপ্টেম্বর তিনি যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতিও পান।

রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়ায় জামালপুরের ডিসি প্রত্যাহার : আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে ভোট চেয়ে গত সেপ্টেম্বরে সমালোচিত হন জামালপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. ইমরান আহমেদ। ১১ সেপ্টেম্বর জামালপুরের মাদারগঞ্জ পৌরসভার নতুন ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ইমরান আহমেদ বলেছিলেন, এ সরকার যে উন্নয়ন করেছে সেই ধারা অব্যাহত রাখার জন্য আবারও নির্বাচিত করে ক্ষমতায় আনতে হবে। এটা হবে আমাদের প্রত্যেকের অঙ্গীকার। তার বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সরকারি কর্মচারী হয়েও এ ধরনের বক্তব্য দেয়ায় তার সমালোচনা করেন নেটিজেনরা। এরপর ১৩ সেপ্টেম্বর ইমরানের বক্তব্যের কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ১৪ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমির উপ-পরিচালক (উপসচিব) শফিউর রহমানকে জামালপুরের জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। ইমরান আহমেদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন শফিউর রহমান। জামালপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. ইমরান আহমেদকে প্রত্যাহার করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে বদলি করে সরকার। একইসঙ্গে নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়। ইসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জেলা প্রশাসকরা সাধারণত রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। নির্বাচনের সময় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করে থাকেন। এ অবস্থায় সরকার, গণতন্ত্র, নির্বাচন ব্যবস্থা এবং নির্বাচন কমিশনের ওপর জনমানুষের আস্থা অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে মো. ইমরান আহমেদকে ওই ঘটনার সত্যতা যাচাই সাপেক্ষে জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো ধরনের নির্বাচনি দায়িত্ব প্রদান করা থেকে বিরত রাখা সমীচীন হবে।’

অস্ট্রেলিয়া থেকে না ফেরায় চাকরি হারালেন উপসচিব : অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে না ফেরায় চাকরি হারালেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নির্মল কুমার হালদার। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সার্টিফিকেট সংগ্রহ, গবেষণাপত্র প্রকাশনা ইত্যাদি কাজের জন্য গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ছুটি নিয়ে সপরিবারে অস্ট্রেলিয়া যান তিনি। এরপর কাজ শেষ করে দেশে না ফেরায় চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় তাকে। গত সেপ্টেম্বরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ড. নির্মল কুমার হালদার গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়া গমনের পর ২৫ এপ্রিল তার ছুটি শেষ হওয়া সত্ত্বেও তিনি অদ্যাবধি দেশে ফেরত আসেননি। অস্ট্রেলিয়ায় থেকে একই বছরের ২১ এপ্রিল চার মাস ছুটি বর্ধিতকরণের আবেদন করেন। যুক্তিসঙ্গত কারণ না থাকায় ছুটির আবেদন মঞ্জুর না করে তাকে দেশে ফেরত আসার জন্য অনুরোধ করা হয়। তিনি সেই আদেশ লঙ্ঘন করে বিদেশে অবস্থান করায় তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) ও ৩(গ) বিধি মোতাবেক যথাক্রমে ‘অসদাচরণ’ ও ‘পলায়ন’ এর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা দায়ের করে তাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ প্রদান করা হয়। অভিযুক্ত কর্মকর্তা জবাব দাখিল করলেও ব্যক্তিগত শুনানির জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেননি। জবাবে তিনি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে তার পক্ষে আর চাকরি করা সম্ভব নয় বিধায় তিনি সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা প্রদানের আগ্রহ প্রকাশ করেন। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৭(২)(ঘ) মোতাবেক অভিযোগটি তদন্ত করার জন্য তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা চলতি বছরের ২২ মার্চ তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) ও ৩(গ) বিধি মোতাবেক যথাক্রমে ‘অসদাচরণ’ ও ‘পলায়ন’-এর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে মর্মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যালোচনা করে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৭(৮)বিধি মোতাবেক অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে গুরুদণ্ড প্রদানের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং একই বিধিমালার ৭(৯) বিধি মোতাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তাকে দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়।

লিখিতভাবে দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর দাখিলকৃত জবাব ও তদন্ত প্রতিবেদনসহ সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে তাকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৪(৩)(ঘ) বিধি অনুযায়ী গুরুদ্ল হিসাবে ‘চাকরি হতে বরখাস্ত’ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং প্রস্তাবিত গুরুদ্ল প্রদানের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের পরামর্শ চাওয়া হলে কমিশন ড. নির্মল কুমার হালদারকে প্রস্তাবিত গুরুদণ্ড প্রদানের সিদ্ধান্তের সাথে সহমত পোষণ করে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করলে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত নামীয় গুরুদণ্ড প্রদান করা হলো।

ঘুসের রেট নির্ধারণকারী এসিল্যান্ড সাময়িক বরখাস্ত : ঘুসের রেট নির্ধারণ করে দেয়া পিরোজপুরের নাজিপুর উপজেলার এসিল্যান্ড মাসুদুর রহমানকে গত সেপ্টেম্বরে সাময়িক বরখাস্ত করে সরকার। তদন্তে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নেয়। রাষ্ট্রপতির আদেশে প্রজ্ঞাপনে সই করেন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আব্দুস সবুর মণ্ডল। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে তার সহকর্মীদের নামজারি মামলায় অবৈধ অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রদানের অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। পিরোজপুর জেলা প্রশাসক কর্তৃক গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি অডিও ক্লিপের কথোপকথনের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন এবং তদন্তে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছেন। মাসুদুর রহমানের এরূপ আচরণকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) বিধি মোতাবেক অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করেছেন বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার। 

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, মাসুদুর রহমানকে তার দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা আবশ্যক। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ধারা ৩৯(১) অনুযায়ী সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন মাসুদুর রহমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (সহকারী সচিব) হিসেবে সংযুক্ত থাকবেন এবং বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো।
 

Link copied!