জানুয়ারি ১, ২০২৪, ১২:২০ এএম
হতাশার খবর
- অব্যাহত অর্থপাচার তলানিতে রিজার্ভ, ডলার বাজারে হরিলুট, তারল্য সংকট আরও প্রকট
- ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা
- জনতা ব্যাংক থেকে বেক্সিমকোর বিপুল ঋণে তোলপাড়, ব্যাংকলুট নিয়ে সিপিডির তথ্যে সরগরম দেশ
সুখবর
- নয়া পদ্ধতিতে মুদ্রানীতি প্রণয়নের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্যোগ
- দেশে ডিজিটাল ব্যাংকের যাত্রা
- পেনশন স্কিম চালু
- অনিশ্চয়তার মধ্যেও আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি অব্যাহত
অর্থনীতিতে করোনা মহামারির ধাক্কার পর আসে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। আর্থিক সংকটের সব দায় এ দুই ঘটনার ওপর চাপিয়ে দিয়ে ফুরফুরে মেজাজে থাকেন নীতিনির্ধারকরা। আইএমএফের ঋণের শর্তের চাপে কুপোকাত হয়ে নতুন বাহানা হাজির করা হয় নির্বাচন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চুপচাপ থাকার ঘোষণা দিয়ে আয়েশি সময় পার করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তবে রিজার্ভ তলানিতে আছে এবং ৩৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে সংকটময় আর্থিক পরিস্থিতির স্বীকারোক্তি দিয়ে বহু ঝড়ঝাপটার সম্মুখীন হয়েছেন সাবেক এ অর্থসচিব। অর্থনীতিতে আগের বছরের সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠার পরিবর্তে আরও প্রকট হয়েছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন সমস্যা। ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে বছরের শেষ দিকে কিছুটা ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করেছেন আর্থিক খাতের অন্যতম প্রধান কর্ণধার। তবে ইসলামি ব্যাংকের সীমাহীন দুর্নীতি আর জালিয়াত চক্রকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে চরম আস্থার সংকট তৈরি করেছেন তিনি। এতে সার্বিক ব্যাংক খাতে যে তারল্য সংকট চলছে তাতে ধুঁকছে পুরো ব্যাংক খাত। নির্বাচনের পর বিদেশি ঋণ ও সহায়তা এবং রপ্তানি আয় আসতে শুরু করলে আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে মনে করছেন আর্থিক খাতের নীতিনির্ধারকরা।
তবে ঘটনাবহুল ২০২৩ সালের আর্থিক চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বছরের শেষে রিজার্ভের ধারাবাহিক পতন, দেশীয় মুদ্রা টাকার মানে রেকর্ড অবনমন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, তীব্র তারল্য সংকট এবং খেলাপি ঋণ ও মূলধন ঘাটতিতে ব্যাংক খাতে অস্থিরতাসহ নানামুখী সংকটে দেশের অর্থনীতি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তে নেয়া যাচ্ছে না বড় কোনো সংস্কারের উদ্যোগ। নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে সৃষ্ট অস্থিরতায় বৈদেশিক বিনিয়োগে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকট ঠেকাতে গৃহীত পদক্ষেপ নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে। বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক চোখ রাঙানির কবলে রপ্তানি খাত। এমন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে কঠোর অর্থনৈতিক অবরোধের হুমকি সামনে রেখেই শুরু হচ্ছে নতুন বছর।
সদ্য সমাপ্ত বছরে আর্থিক খাতের হতাশা ও আশার খবর—
ভয়াবহ ঋণ কেলেঙ্কারি : গত বছরের ধারাবাহিকতায় বছরজুড়ে ব্যাংক খাতে একের পর এক দুর্নীতির ও লুটপাটের চিত্র প্রকাশ পায়। তবে বছরের শেষার্ধে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকে বেক্সিমকো গ্রুপের অঢেল ঋণের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। যা ব্যাংক খাতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করে গ্রুপটিকে মূলধনের প্রায় ১০ গুণ ঋণ দিয়ে সে তথ্য গোপন রাখে ব্যাংকটি। বিধি অমান্য করে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠানকে সীমার অতিরিক্ত ঋণ বিতরণ করা হয়। প্রভাবশালী এ গ্রাহককে সুবিধা দিতে সরকারি ব্যাংকগুলোর সাথে করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমঝোতা চুক্তিও মানতে অপারগতা প্রকাশ করে জনতা ব্যাংক। ২৯টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকার বেশি।
বছরের শেষের দিকে ব্যাংক খাতের বিপুল লুটপাটের চিত্র তুলে ধরে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি জানায়, ২০০৮ থেকে ২০২৩- এই ১৫ বছরে দেশের ব্যাংক খাত থেকে ছোটবড় ২৪টি অনিয়মের মাধ্যমে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। ব্যাংক খাত থেকে অনিয়মের মাধ্যমে বের করে নেয়া এ অর্থ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের ১২ শতাংশের বেশি। অথচ এ অর্থে অনায়াসে বাজেট ঘাটতি মেটানো সম্ভব হতো। দেশের মূলধারার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ব্যাংক খাতের অনিয়মের এ তথ্য তুলে ধরেছে সিপিডি।
ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ লাগামহীন বৃদ্ধি : এ বছর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্ত পরিপালনে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের হিসাব প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে খেলাপি ঋণের পাশাপাশি অন্যান্য তথ্য যোগ হয়ে ব্যাংক খাতে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার তথ্য সামনে এসেছে। গত জুন শেষে প্রায় সাড়ে চার লাখ কোটি টাকায় ঠেকেছে এ মানের ঋণ। পুনর্গঠনকৃত ঋণের হিসাব ছাড়াই বিপদগ্রস্ত ঋণ দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে রয়েছে— খেলাপি, পুনঃতফসিল ও অবলোপনকৃত ঋণ। প্রকৃত হিসাব পাওয়া গেলে এ অঙ্ক পাঁচ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছানোর আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ঋণখেলাপি হয়ে পড়ে। দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়ে আর্থিক খাতের নেতিবাচক এ সূচক। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সাল শেষে ব্যাংক খাতের মোট ঋণের তিন লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা বা ২৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ ছিল ঝুঁকিপূর্ণ সম্পত্তি। ছয় মাসের ব্যবধানে এ অঙ্ক ৫৬ হাজার কোটি টাকা বেড়ে গেছে। গত জুন শেষে এটি দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকায়। এর মধ্যে রয়েছে খেলাপি ঋণ এক লাখ ৫৬ হাজার কোটি এবং পুনঃতফসিল ও অবলোপনকৃত ঋণ দুই লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। তবে ঋণের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কিছু ঋণ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়া হয়েছে। এ তথ্য প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। এ খাতের ঋণকেও বিপদগ্রস্ত ঋণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা। সাধারণত বড় অঙ্কের ঋণের ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। এ অঙ্ক যোগ হলে ব্যাংক খাতে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের পরিমাণ কমবেশি পাঁচ লাখ কোটি টাকা হবে বলে জানায় অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র।
ডলার বাজারে হরিলুট : আগের বছরের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বছরজুড়ে ডলার বাজারে রীতিমতো হরিলুট চলেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নমনীয়তার সুযোগ নিয়ে যে যার মতো করে ডলার কেনাবেচা করেছে। হুন্ডির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেশি দামে রেমিট্যান্স কিনে আমদানিকারকদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করা হয়েছে। অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠা ব্যাংকগুলোর কারণে ডলার হারিয়ে বিপাকে পড়েছে বৈদেশিক বাণিজ্যে জড়িত বড় ব্যাংকগুলো। অস্থিরতার মধ্যে রেকর্ড ১২৮ টাকা ওঠে ডলারের দাম। ফলে দেশীয় মুদ্রা টাকার অবনমন হয় ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে।
রিজার্ভের ভয়াবহ পতন : বছরজুড়েই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত ধরে রাখা নিয়ে চাপে ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ, আইএমএফের ঋণের শর্ত ছিল, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে অন্তত ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারের নেট রিজার্ভ থাকতে হবে। তবে তাতে সফল হয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ, সারা বছরই প্রতি মাসে গড়ে অন্তত এক বিলিয়ন ডলার বিক্রি করতে হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। তাতে নেট রিজার্ভ এখন ১৬ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি আছে, তবে মোট রিজার্ভ ২৬ বিলিয়ন।
অব্যাহত অর্থপাচার : টালমাটাল অর্থনীতির প্রধান সমস্যা চিহ্নিত হয় ‘অর্থপাচার’। তবে বছরজুড়ে এর লাগাম টানতে ব্যর্থতার পরিচয় দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সর্বত্র দুর্নীতি আর লুটপাটের মাধ্যমে দেশ থেকে বিপুল অর্থ সরিয়ে নেয় একটি চক্র। পাচারকারীদের হাতেনাতে ধরার পরও নাম প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। এর প্রভাবে মূল্যস্ফীতি লাগামহীন বৃদ্ধিসহ নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত হয়ে নাগরিকদের নাভিশ্বাস উঠেছে। প্রতিনিয়ত পাচারের নতুন নতুন গন্তব্য আবিষ্কার হচ্ছে। একসময় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড প্রভৃতি দেশ পাচারের গন্তব্য ছিল। কিন্তু বর্তমানে দুবাই, মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশের নাম উঠে আসছে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশেও অর্থপাচারের তথ্য ছিল গোয়েন্দা সংস্থার কাছে। সমপ্রতি অর্থপাচারের নতুন আরেক গন্তব্য খুঁজে পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ইউরোপের দেশ পর্তুগালে অর্থপাচারের ঘাঁটি গেড়েছে বাংলাদেশের আড়াই হাজার নাগরিকের একটি বিশাল চক্র। নিরাপদে অর্থ সরিয়ে নিতে তারা দেশটির নাগরিকত্বও গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে দেশটিতে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাইয়ের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। বর্তমানে অর্থপাচারের প্রধান রুট হিসেবে দেশটিকে ব্যবহার করছে দুর্নীতিবাজ চক্রটি। পাচারকার্য পরিচালনার জন্য দুবাইয়ে ১৩ হাজার প্রতিষ্ঠান খুলেছে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। সেখানে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা।
ব্যাংক নিয়ে আতঙ্ক ও তীব্র তারল্য সংকট : ‘রাঘববোয়ালরা লুটপাট করে খাচ্ছে ব্যাংকের টাকা। পাচার হচ্ছে অর্থ। ধেয়ে আসছে বিদেশি নিষেধাজ্ঞা ও দুর্ভিক্ষ। ব্যাংকে জমানো অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে না।’ এমন সব তথ্য ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে। এতে আমানতকারীরা আতঙ্কিত হয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে থাকেন। ফলে তীব্র তারল্য সংকটের মুখোমুখি হয় ব্যাংক খাত। বছরজুড়ে দেশের অধিকাংশ ব্যাংকে তারল্যসংকট বিরাজমান ছিল। এর মধ্যে শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের দশা একেবারে বেহাল। এসব ব্যাংকে গ্রাহকের আমানতের বিপরীতে নিরাপত্তা হিসেবে সিএলআর এবং এসএলআর রক্ষা করতে পারছে না। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক জরিমানা করায় তা পরিশোধের অবস্থাও নেই। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০ কার্যদিবস জরিমানা শোধের সময় বেঁধে দিয়ে লেনদেন বন্ধের হুমকি দেয়, যা নিয়ে সারা দেশে আতঙ্ক দেখা দেয়। অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেন। তবে ব্যাংকগুলোকে পর্যাপ্ত নগদ টাকা সহযোগিতা দিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে আস্থার সংকটের দোলাচলে রয়েছেন অনেক গ্রাহক।
বিরাজমান পরিস্থিতিতে কলমানিতে সুদের হার বেড়ে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠেছে। সর্বনিম্ন হার ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর একই সময়ে গড় সুদের হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ১৪ শতাংশ। এটি গত ১০ বছর ১০ মাসে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১২ সালে কলমানিতে গড় সুদের হার উঠেছিল ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ। অপরদিকে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে পলিসি রেটও বৃদ্ধি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কয়েক দফায় বৃদ্ধি পেয়ে বছর শেষে রেপো রেট দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এরই ধারাবাহিকতায় বৃদ্ধি পায় অন্যান্য রেটও। বর্তমানে এসএলএফ ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ, এসডিএফ ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং ব্যাংক রেট ৪ শতাংশ। সরকারের ট্রেজারি বিলের মূল্য বৃদ্ধির ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে স্মার্ট রেট।
নতুন কাঠামোতে মুদ্রানীতি : মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে নাস্তানাবুদ অবস্থায় আইএমফের প্রেসক্রিপশনে মুদ্রানীতির কাঠামো পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতদিন বাজারে মুদ্রার প্রবাহ (মানি সাপ্লাই) বাড়ানো বা কমানোকে টার্গেট করে মুদ্রানীতি তৈরি করা হলেও এবার আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ইন্টারেস্ট রেট বা সুদহারকে টার্গেট করে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ঋণের সুদহার তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্ত দেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি স্বাধীনভাবে নিতে পারেনি। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হলেও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের আলোকেই সুদহার নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু : দেশের চার শ্রেণির প্রায় ১০ কোটি মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে চালু হয়েছে সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭ আগস্ট পেনশন কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন। ফলে দেশে-বিদেশে বসবাসরত ১৮ বছরের বেশি বয়সি যেকোনো বাংলাদেশি এখন সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থার আওতায় আসতে পারছেন। তবে আপাতত সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যোগ দেয়ার সুযোগ রাখা হয়নি। একজন পেনশনধারী ব্যক্তি ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর পেনশন পাওয়া শুরু করবেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে ৬০ বছরের বেশি বয়সি মানুষের সংখ্যা ছিল এক কোটি ২০ লাখ এবং ২০৪১ সালে তাদের সংখ্যা হবে তিন কোটি ১০ লাখ। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তাকাঠামোর আওতায় আনতে এবং নিম্ন আয় ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত সমাজের ৮৫ শতাংশ মানুষকে সুরক্ষা দেয়ার সুযোগ তৈরি করতে সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা (স্কিম) চালু করা হয়েছে।
ডিজিটাল ব্যাংকের যাত্রা শুরু : দেশে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২২ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় আট প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের প্রাথমিক অনুমোদন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানকে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তিনটি বাণিজ্যিক ব্যাংককে ডিজিটাল উইং চালুর অনুমতি দেয়া হয়েছে। বাকি তিন প্রতিষ্ঠানকে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল গঠনের ক্ষেত্রে অনুমতি পাওয়া দুই প্রতিষ্ঠানের সেবা পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি অব্যাহত : অনিশ্চয়তার মধ্যেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি অব্যাহত থাকার ঘোষণা আসে গত ১২ ডিসেম্বর। বাংলাদেশের আবেদনের প্রেক্ষিতে আরোপিত শর্ত পরিপালনে ঘাটতি থাকার পরও চলমান সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখার শর্তে দ্বিতীয় কিস্তি অনুমোদন করে আইএমএফ বোর্ড। এতে অন্য দাতাগোষ্ঠীর সহায়তার দার উন্মুক্ত থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপড়েনের কারণে সংস্থাটির ঋণ কর্মসূচি হুমকির মুখে পড়ে।