Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

বিদায়ী বছরে বড় উন্নয়ন

পদ্মায় রেল কর্ণফুলী টানেলসহ মেগা প্রকল্পগুলো দৃশ্যমান

আব্দুল কাইয়ুম

আব্দুল কাইয়ুম

জানুয়ারি ১, ২০২৪, ১১:৩৫ এএম


পদ্মায় রেল কর্ণফুলী টানেলসহ মেগা প্রকল্পগুলো দৃশ্যমান

বিদায়ী বছরে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত বিশ্ব মানের পরিষেবার তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ করে বিমান বাংলাদেশ। যাত্রীদের উন্নতমানের সেবার জন্যই সরকার এ উদ্যোগ নেয়। একই বছরে পদ্মার ওপারের মানুষের কষ্ট লাগব করতে চালু হয় রেললাইন। পর্যটক এলাকা কক্সবাজারকে আরও সমৃদ্ধ করতে চালু করা হয় ট্রেন। বিশ্বের ৩৩তম ও দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ নিজেদের নাম লিখেছেন পারমাণু ক্লাবে। এটি বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বাংলাদেশ নির্মাণ করে টানেল। তা ছাড়া ঢাকার যানজট কমাতে ও যোগাযোগে গতি বাড়াতে নির্মাণ করা হয় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে বা ৩০০ ফুট প্রকল্প দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় এক্সপ্রেসওয়ে। যা সেনাবাহিনী ও রাজউক যৌথভাবে বাস্তবায়ন করে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের শেষ বছরে এসে সরকার এসব মেঘা প্রকল্প চালু করে। 

বিশ্বমানের পরিষেবায় বিমানবন্দর : আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন ও অত্যাধুনিক সুসজ্জিত ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জান্তিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল গত বছরের ৭ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয়। নতুন টার্মিনালটি বিশ্ব মানের সব সুযোগ-সুবিধা ও যাত্রী পরিষেবা দিয়ে দেশের চিত্র পাল্টে দেবে বলে আশা প্রকাশ করছে কর্তৃপক্ষ। প্রখ্যাত ডিজাইনার স্থপতি রোহানি বাহারিন টার্মিনাল ভবনের নকশা তৈরি করেন। বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে তৃতীয় টার্মিনালে এই প্রথম মুভিং ওয়াক স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়াও উড়োজাহাজ থেকে নেমে কিছু পথ হেঁটে কিছু পথ মুভিং ওয়াক ব্যবহার করে ইমিগ্রেশনে যেতে পারবেন। তবে এ প্রযুক্তি ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন বয়স্ক ও অসুস্থ যাত্রী এবং শিশুরা। চলতি বছর ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ চালু হবে। আপাতত চালু হবে ১২টি। টার্মিনালটি পুরোদমে চালুর পর শাহজালাল বিমানবন্দরের বার্ষিক যাত্রী হ্যান্ডলিং ক্ষমতা দাঁড়াবে দুই কোটি, যা বর্তমানে মাত্র ৮০ লাখ। ৩৭টি নতুন এয়ারক্রাফট পার্কিং এরিয়া এবং অ্যাপ্রোন এলাকায় সংযোগকারী দুটি ট্যাক্সিওয়ের নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে তৃতীয় টার্মিনালের ফ্লোর স্পেস দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। সেখানে রয়েছে ১৭৭টি চেক ইন কাউন্টার, ৬৪টি বহির্গমন ইমিগ্রেশন ডেস্ক এবং ৬৪টি আগমন ইমিগ্রেশন ডেস্ক। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয়ের মধ্যে সরকার দিয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) প্রকল্পের বাকি অংশ অর্থায়ন করবে। চলতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে এই টার্মিনাল ব্যবহারের সুযোগ পাবেন যাত্রীরা।

পদ্মার উপর ট্রেন : পদ্মায় লঞ্চের চিরাচরিত হুইসলের সঙ্গে আগেই যুক্ত হয়েছিল বাসের হর্নের শব্দ। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ট্রেনের হুইসেলও। সেই সাথে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প চালু হয় গত বছরের ৭ অক্টোবর। এই রেল সংযোগ প্রকল্পের অধীনে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। এই পুরো পথে থাকবে মোট ২০টি স্টেশন। এর মধ্যে ১৪টি স্টেশননতুন করে করা হচ্ছে। বাকি ছয়টি স্টেশন আগে থেকেই ছিল। সেগুলোর আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। এই রেলপথের মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে। পাশাপাশি বিদ্যমান ভাঙ্গা-পাচুরিয়া রাজবাড়ী সেকশনটি পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হবে। রেলওয়ে সূত্র বলছে, শুধু ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালালে রেলকে লোকসান গুনতে হবে। তাই এই রেলপথ ব্যবহার করে অন্তত রাজবাড়ীর সঙ্গে ঢাকাকে যুক্ত করা হবে। বর্তমানে খুলনা, দর্শনা, বেনাপোল ও রাজশাহীর সঙ্গে ঢাকার সরাসরি রেল যোগাযোগ রয়েছে। পদ্মা সেতু ব্যবহার করে এসব অঞ্চলে নতুন ট্রেন গেলে বিদ্যমান পথে মাঝের স্টেশনগুলোর যাত্রীরা রেলের সেবা থেকে বঞ্চিত হতে পারে। এমন একটি আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মীয়মাণ পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ১৮ হাজার ২১০ কোটি ১১ লাখ টাকা দিচ্ছে সরকার। বাকি ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।

সমুদ্রের দেশে ট্রেন : বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে গত বছরের ১১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চালু হয়। তবে যাত্রী নিয়ে বাণিজ্যিক ট্রেন কক্সবাজার থেকে চলে ১ ডিসেম্বর ও ঢাকা থেকে ২ ডিসেম্বর। এর মাধ্যমে রেল পথে যক্ত হলো আরো ১০০ কিলোমিটার নতুন পথ। ১৮৯০ সালে কক্সবাজারকে ট্রেন নেটওয়ার্কে যুক্ত করার ভাবনা ছিল ব্রিটিশদের। ১৩৩ বছর পর সেই ভাবনার বাস্তবায়ন হয়। বিনিয়োগ সংকট, ভূমি অধিগ্রহণ, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মতো বড় বড় বাধা পেরিয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে কক্সবাজার রেলপথ। রেলওয়ে সূত্র বলছে, ধীরে ধীরে ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে আট জোড়া করা হবে। যাত্রীপ্রতি কিলোমিটার হিসেবে ট্রেনের যা ভাড়া আছে সেটি বিবেচনা করেই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা-কক্সবাজার পথে ট্রেনের সর্বনিম্ন ভাড়া ১২৫ টাকা। আর সর্বোচ্চ ১৭২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব ৩২০ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেলপথের দৈর্ঘ্য ৪০ কিলোমিটার। এর সঙ্গে কক্সবাজার যোগ হলে ঢাকা থেকে পুরো পথের মোট দূরত্ব দাঁড়াবে ৪৬০ কিলোমিটার। তবে ভাড়া নির্ধারণের সময় এ পথের দূরত্ব ৫৩৫ কিলোমিটার ধরা হয়েছে। এই রেললাইনের মাধ্যমে ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে বাংলাদেশের। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) রেললাইনের নির্মাণ প্রকল্পের মূল অনুমোদন পায় ২০১০ সালের ৬ জুলাই। ২০১৭ সালে প্রকল্প নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি শুরু হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দিচ্ছে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। বাকি চার হাজার ৯১৯ কোটি সাত লাখ টাকা সরকার দেয়।

পারমাণবিক ক্লাবে দেশ : বিশ্বের ৩৩তম ও দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে গত ৫ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরেনিয়াম গ্রহণ করে বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশের ক্লাবে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে (গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি) স্বপ্নের প্রকল্পটির রুশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রোসাটম তেজস্ক্রিয় জ্বালানি হস্তান্তর করে। রোসাটম দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে। এর এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিটটি আগামী বছর এবং অপর ইউনিটটি ২০২৫ সালে চালু হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো যৌথ প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে রাশিয়া সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলেও জানান ভ্লাদিমির পুতিন। রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ও দ্বিতীয় ইউনিটটি ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে চালু করা যাবে। প্রকল্পটিতে সাত হাজার পেশাদারসহ ৩০ হাজার কর্মী কাজ করছে। প্রকল্পটি ৬০-৮০ বছর ধরে সচল থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই আরএনপিপি পারমাণবিক ক্লাবে প্রবেশের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবে। ২০২১ সালের অক্টোবরে ইউনিটের কাঠামোর মধ্যে চুল্লি স্থাপনের মাধ্যমে রূপপুর ইউনিট-১ প্রায় সম্পন্ন হয়। এটি আইএইএর মান অনুযায়ী স্থাপন করা হয়েছে।

নদীর তলদেশে টানেল :  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম যান চলাচলের সুড়ঙ্গপথের অধিকারী হয় বাংলাদেশ। গত বছরের ২৮ অক্টোবর দুই তীর এক পথে মিলিত হয়। কর্ণফুলীর তলদেশে ৩.৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গপথের মাধ্যমে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার সঙ্গে আনোয়ারাকে যুক্ত করা হয়েছে। এই টানেলে সর্বোচ্চ গতি ৬০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছতে সময় লাগে মাত্র সাড়ে তিন মিনিট। টানেলটি কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছে পশ্চিম প্রান্তে পতেঙ্গা নেভাল একাডেমি থেকে শুরু হয়ে পূর্ব প্রান্তে চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা (সিইউএফএল) এবং কর্ণফুলী সার কারখানার (কাফকো) মাঝখান দিয়ে আনোয়ারা প্রান্তে পৌঁছেছে। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২.৪৫ কিলোমিটার। টিউবসহ মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার। টানেলের এই অংশটি নদীর তলদেশে। টিউবের ভেতরের ব্যাস ১০.৮০ মিটার। টানেলের বাইরে থেকে ব্যাস ১১.৮০ মিটার। পানির উপরিতল থেকে টানেলের সর্বোচ্চ গভীরতা ৪২.৮০ মিটার। নদীর তলদেশ থেকে টানেলের সর্বোচ্চ গভীরতা ৩১ মিটার। টানেলে সর্বোচ্চ ঢাল ৪ শতাংশ। এক সমীক্ষার প্রতিবেদন বলা হয়েছে, টানেল চালুর বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারে। সে হিসাবে দিনে চলতে পারে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যান চলবে। এর অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬ ও ২০৬৭ সালে এক লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে। ১০ হাজার ৩৭৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এই খরচের মধ্যে চীন দিচ্ছে ছয় হাজার ৭০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সড়ক কর্তৃপক্ষ দিচ্ছে চার হাজার ৬১৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

প্রতীক্ষিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে : বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ২০২৩ সালের দুই সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করে। দ্রুতগতির এই উড়ালসড়কের দৈর্ঘ্য ১৯.৭৩ কিলোমিটার। শহরের যানজট নিরসনের জন্য প্রকল্প হাতে নেয়ার এক দশকেরও বেশি সময় পরে এর উদ্বোধন হয়। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে কুড়িল এলাকায় একটি কন্ট্রোল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। পিপিপি প্রকল্পের তিনটি প্রাইভেট অংশীদারের মধ্যে একটি চীনা ফার্ম ‘চায়না শানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কর্পোরেশন’ এই কন্ট্রোল সেন্টারটি পরিচালনা করবে। পুরো উড়ালসড়কে ৩১টি স্থান দিয়ে যানবাহন ওঠানামা (র্যাম্প) করার ব্যবস্থা থাকছে। কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশে ওঠানামার জন্য মোট ১৫টি র?্যাম্প থাকবে। এর মধ্যে ১৩টি র?্যাম্প যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ তিন চাকার যান ও বাইসাইকেল চলাচল করতে পারবে না। অন্যান্য যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। 
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দৃষ্টিনন্দন পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে : রাজধানীর সঙ্গে ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংযোগ স্থাপন করবে পূর্বাচলের ১২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৪ লেনের এক্সপ্রেসওয়ে। যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় এক্সপ্রেসওয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাবাহিনী ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) মাধ্যমে বাস্তবায়িত ‘পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে’ (৩০০ ফুট) প্রকল্প গত ১৪ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয়। 

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, এই প্রকল্পটিতে কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত ৫ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ আট লেনবিশিষ্ট এক্সপ্রেসওয়ে ও ছয় লেনবিশিষ্ট সার্ভিস রোড এবং বালু নদী থেকে কাঞ্চন পর্যন্ত ৬ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ছয় লেনবিশিষ্ট এক্সপ্রেসওয়ে ও ছয় লেনবিশিষ্ট সার্ভিস রোড রয়েছে। কুড়িল থেকে কাঞ্চন পর্যন্ত ১২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার সড়ক ও খালের উভয় পাশের তিন মিটার প্রশস্ত ওয়াকওয়ে নির্মাণকাজও সম্পন্ন করা হবে। রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রশস্ত এক্সপ্রেসওয়ের দুপাশে ১০০ ফুট চওড়া খাল খননের মাধ্যমে বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা গতিশীল হবে। এ ছাড়া এই প্রকল্পে কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত খালের উভয় পাশের উত্তর দক্ষিণ বরাবর ১৩টি ব্রিজ ওভার ক্যানেল নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি এই সড়কে ৯টি লাইনে ও গ্রিন জোনে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার  গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডকে এটির বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়।

উন্নয়নে মেট্রোরেল : মেট্রোরেল প্রকল্পের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন হয়েছে। এরপর গত ৪ নভেম্বর উদ্বাধন হয় আগারগাঁও-মতিঝিল অংশ। যদিও এখনো কিছু স্টেশনের কাজ বাকি আছে তবুও মেট্রোরেল চলছে পুরোদমে। কিন্তু পুরো প্রকল্প শেষ হতে অপেক্ষা করতে হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২০২৩ সালের শেষ দিন মেট্রোরেলের কারওয়ান বাজার ও শাহবাগ স্টেশন চালু হয়। এর মধ্য দিয়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সব স্টেশন চালু হলো। এখন ১৬ স্টেশনেই নিয়মিত থামবে মেট্রোরেল। 

মেট্রোরেলের স্টেশনগুলো হলো— উত্তরা-উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয়, মতিঝিল ও কমলাপুর। অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ৯৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ৬৯ শতাংশ। এ ছাড়া ভৌত অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সংশোধিত ব্যয়সহ মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ হবে।
 

Link copied!