Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪,

রাত পোহালেই ভোট

বেলাল হোসেন

জানুয়ারি ৬, ২০২৪, ১২:০৬ এএম


রাত পোহালেই ভোট

ভোটগ্রহণে প্রস্তুত  ৪২ হাজার ১৪৮ কেন্দ্র

সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে নির্বাচন কমিশন

এক অ্যাপে মিলবে নির্বাচনি সব তথ্য

দেশের জাতীয় সংসদে আসনসংখ্যা ৩০০। গত ১৫ নভেম্বর সব আসনে নির্বাচনের জন্যই তফসিল ঘোষণা করেছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তবে এর মধ্যে সারা দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে নওগাঁ-২ আসনের এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যু হলে বিধি অনুযায়ী আসনটির ভোট স্থগিত করেছে ইসি। বাকি ২৯৯টি আসনে ভোটাররা জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পাবেন। নির্বাচন সামনে রেখে গত ৩ জানুয়ারি সারা দেশে মোতায়েন করা হয়েছে সশস্ত্রবাহিনী সদস্যদের। তারা মাঠে থাকবেন ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত। এর আগে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহীদের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সুযোগ ছিল। এরপর যাচাই-বাছাই হয়। সেখানে বাতিল প্রার্থীরা ইসিতে আবেদনের সুযোগ পান। সেখানেও তারা নিজেদের পক্ষে ফল পাননি, তারা দ্বারস্থ হন উচ্চ আদালতের। এর মধ্যে গত ১৭ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষে দিনের পর ১৮ ডিসেম্বর বৈধ সব প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করে ইসি। শুরু হয় প্রার্থীদের প্রচার। ১৮ দিন তারা নির্বাচনি প্রচারে অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছেন।

এদিকে ১৮ দিনের নির্বাচনি প্রচারে বিভিন্ন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ-মারামারিতে তিনজন নিহত হওয়ার তথ্য মিলেছে। এর বাইরে এই সময়ে নির্বাচনি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে শতাধিক। নির্বাচনি প্রচারের মধ্যে প্রাণহানির প্রথম ঘটনা ঘটে মাদারীপুরের কালকিনিতে। গত ২৩ ডিসেম্বরের ওই ঘটনায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক সমর্থককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া গত বুধবার বিকেলে পিরোজপুর-৩ আসনের এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থককে কুপিয়ে আহত করা হয়। বুধবার রাতেই মুন্সীগঞ্জে নৌকার এক নির্বাচনি ক্যাম্পে গুলি করলে নৌকার এক সমর্থক গুলিবিদ্ধ হন। বুধবারের দুটি ঘটনাতেই গুরুতর আহত দুজন বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণ হারান।

২৯৬৪ কেন্দ্রে ব্যালট পেপার যাবে আজ : ভোটগ্রহণের আগের দিন আজ শনিবার দুই হাজার ৯৬৪ কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন-ইসি। এ ছাড়া, ভোটের দিন সকালে ৩৯ হাজার ৬১ কেন্দ্রে ব্যালট পেপার যাবে। এবার মোট কেন্দ্র রয়েছে ৪২ হাজার ২৫।

ব্যালট পেপার পরিবহন ও বিতরণে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ : জানা যায়, ভোটগ্রহণের দিন সংশ্লিষ্ট সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে ব্যালট পেপার সংগ্রহ করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার সাথে সকাল ৬টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে হস্তান্তর করবেন। ভোটগ্রহণের দিন সকালে ব্যালট পেপার পরিবহনের বিষয়ে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন।

যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা : সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে আজ শনিবার মধ্যরাত থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য ট্যাক্সিক্যাব, পিকআপ ভ্যান, মাইক্রোবাস ও ট্রাক চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে কমিশন। এ সময় কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্রবাহিনী, প্রশাসনের সদস্য ও অনুমোদিত পর্যবেক্ষক, জরুরি সেবার যানবাহন, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অভিন্ন কাজে ব্যবহূত জিনিসপত্র এবং সংবাদপত্র বহনকারী সব ধরনের যানবাহন, দূরপাল্লার যানবাহন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের এজেন্টদের ক্ষেত্রে এই বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে। সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, জাতীয় মহাসড়ক, প্রধান আন্তঃজেলা রুট, মহাসড়ক ও প্রধান মহাসড়কের সংযোগ সড়কের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে।

সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন :  ৭ জানুয়ারি নির্বাচন সামনে রেখে এরই মধ্যে সারা দেশে সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচন ঘিরে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় ৩ জানুয়ারি দেশে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা মোতায়েন থাকবেন।

নির্বাচনে মোট প্রার্থী : এবারের সংসদ নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মোট প্রার্থী এক হাজার ৯৭০ জন। এর মধ্যে নারী প্রার্থী রয়েছেন ৯০ জন, যা মোট প্রার্থীর ৫ শতাংশেরও কম। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন সংসদীয় আসন থেকে ৭৯ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রার্থী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটে লড়াই করবেন।

ভোটে অংশ নেয়া ২৮টি দল : নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৮টি এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। দলগুলো হলো— ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণফোরাম, গণফ্রন্ট, জাকের পার্টি, জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি-জেপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, তৃণমূল বিএনপি, ন্যাশনাল পিপলস পাটি-এনপিপি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল-এমএল ও গণতন্ত্রী পার্টি।

কোন দলের কত প্রার্থী : এবারের সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসনে প্রার্থী রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। হাইকোর্ট থেকে তিন জন প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার পর দলটির মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ২৬৬ জন। প্রার্থীর সংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জাতীয় পার্টি। তাদের প্রার্থী ২৬৫ জন। এ ছাড়া তৃণমূল বিএনপির ১৩৫ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ৬৬ জন, বাংলাদেশ জাতীয়বাদী আন্দোলনের (বিএনএম) ৫৬ জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সব মিলিয়ে ২৮টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী এক হাজার ৫৩৪ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা ৪৩৬ জন। মোট প্রার্থীর মধ্যে ৭৬ জন উচ্চ আদালত থেকে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।

১৭ লাখ জনবল ইসির : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বাচনে ভোট সংগ্রহ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোট ১৭ লাখ জনবল ভোটের মাঠে নিয়োজিত থাকছে। এর মধ্যে ভোট সংগ্রহে সরাসরি নিয়োজিত থাকবেন আট লাখ, স্ট্যান্ডবাই থাকবেন আরও এক লাখ সদস্য। এ ছাড়া সশস্ত্রবাহিনী (সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্টগার্ড, পুলিশ, র্যাব, আনসার মিলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবেন আট লাখ সদস্য। ভোটের মাঠে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নিতে তিন হাজার ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারকও দায়িত্বরত থাকবেন।

এক অ্যাপে মিলবে নির্বাচনি সব তথ্য : নির্বাচন কমিশন-ইসি গত ১২ নভেম্বর ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি’ নামে একটি অ্যাপ উদ্বোধন করেছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে ভোটার নম্বর, কেন্দ্রের নাম ও লোকেশন, ভোট পড়ার হার, প্রার্থীদের হলফনামাসহ নির্বাচনের বিভিন্ন তুলনামূলক চিত্র ঘরে বসেই এখন যে কেউ জেনে নিতে পারবেন। অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড ও অ্যাপল উভয় প্লেস্টোর থেকেই ডাউনলোড করা যাবে। গুগল প্লেস্টোর বলছে এ পর্যন্ত এক লাখের বেশিবার ডাউনলোড করা হয়েছে এটি। গতকাল শুক্রবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি নামের যে অ্যাপ সম্প্রতি আমরা উদ্বোধন করেছিলাম, সেখানে কেন্দ্রভিত্তিক দুই ঘণ্টা পরপর ভোট পড়ার হার জানা যাবে। ভোটকেন্দ্রের তথ্য এখনই জানতে পারছেন, যেকোনো ভোটারের ভোটকেন্দ্র কোনটি এবং লোকেশন কোথায় জানা যাচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল পাওয়া গেলেও কেন্দ্রীভূত ফলাফল পাওয়া যাবে না। কেন না, পার্বত্য অঞ্চল বা মনপুরার মতো দুর্গম অঞ্চল থেকে কোনো কারণে ফলাফল পাঠাতে না পারলে ভোটের পারসেন্টেজে গরমিল হয়ে যেতে পারে। তবে সম্ভব হলে আমরা জানাব। ২০ শতাংশ ভোটকেন্দ্র এখনো নেটওয়ার্কের বাইরে। আমরা সেখানে বিজিবি, পুলিশের ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক ব্যবহার করব।’ অ্যাপটি ফোনে ইনস্টল করার পর ভোটের ফলাফল, আইন ও বিধি, নিবন্ধিত দলের তালিকা, আসন ভিত্তিক প্রার্থীর তালিকা, ভোট পড়ার হার, দলভিত্তিক প্রাপ্ত আসন সংখ্যাসহ নানা পরিসংখ্যা বা তুলনামূলক চিত্রও পাওয়া যাবে। এ ছাড়াও মিলবে আগের নির্বাচনের তথ্যও। অ্যাপটি ব্যবহার করতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম তারিখ ও মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হয়। পরবর্তীতে কেন্দ্রের নাম, কেন্দ্রের লোকেশন, ভোটার নম্বর, প্রার্থীদের নাম ও ছবি প্রভৃতি তথ্য জানতে জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম তারিখ দিলেই নিমিষেই মেলে চাহিদা মোতাবেক তথ্য।

উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। এতে ২৮টি দল ও স্বতন্ত্রদের নিয়ে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছে এক হাজার ৯৭০ জন। এতে ৯০ জন নারী প্রার্থী ও ৭৯ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রার্থীও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারের নির্বাচনে সারা দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ। তাদের মধ্যে নতুন ভোটার রয়েছেন এক কোটি ৫৪ লাখ। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ছয় কোটি ৭৬ লাখ এবং নারী ভোটার পাঁচ কোটি ৮৯ লাখ। আর তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৮৪৯ জন।
 

Link copied!