Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪,

নিরাপত্তা সঞ্চিতি

১০ প্রতিষ্ঠানের ঘাটতি ২০২২ কোটি

রেদওয়ানুল হক

জানুয়ারি ১০, ২০২৪, ০২:৩৬ পিএম


১০ প্রতিষ্ঠানের ঘাটতি ২০২২ কোটি
  • সবচেয়ে বেশি ঘাটতি ফাস ফাইন্যান্সের
  • সেপ্টেম্বর শেষে মোট ঋণের ৩০ শতাংশই খেলাপি
  • কঠোর হওয়ার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের

আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠতে ব্যর্থ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ধারাবাহিক অবনতি হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক বহির্ভূত ১০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। আলোচিত সময়ে পুরো খাতের ৩০ শতাংশ ঋণখেলাপি মানে শ্রেণিকৃত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বড় সংকটে পড়েছে দেশের অধিকাংশ ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ধীরগতিতে ঋণ বিতরণ হলেও তা আর ফেরত আসছে না। নির্ধারিত সময় পর এগুলো খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ আমানতকারী ও বিনিয়োগকারীরা। আর ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো মন্দ ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ  হচ্ছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বিদায়ী বছরের সেপ্টেম্বরে প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে ১০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে— আভিভা ফাইন্যান্স, বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টে, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, হজ্জ ফাইন্যান্স, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স (আইআইডিএফসি), মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স এবং প্রিমিয়ার লিজিং।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন এবং আর্থিক খাতের ব্যবসার ভিত্তি মজবুত না হওয়ায় এ সংকটের উৎপত্তি। প্রভিশন ঘাটতি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অশনি সংকেত। এটা প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বল আর্থিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরে। প্রভিশন ঘাটতি বলতে বোঝায় এসব প্রতিষ্ঠান থাকা নগদ অর্থের চেয়ে আর্থিক দায়বদ্ধতার পরিমাণ বেশি। খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে, আর সে অনুযায়ী আয় না বাড়লে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়।

নিয়ম অনুযায়ী, নিয়মিত বা অশ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে পরিচালন মুনাফার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন হিসেবে রাখতে হয়। এছাড়া নিম্নমানের শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ এবং সন্দেহজনক শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ প্রভিশন হিসেবে রাখতে হয়। তবে মন্দ বা লোকসান ক্যাটাগরির খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন হিসেবে আলাদা করে রাখতে হয় ১০০ শতাংশ অর্থ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট। আর্থিক পরিস্থিতিতে বেশ নাজুক প্রতিষ্ঠানটি অন্যদের তুলনায় আমানত সংগ্রহ এবং ঋণ আদায়েও পিছিয়ে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা। খেলাপিসহ অন্য ঋণের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির প্রভিশনের প্রয়োজন ছিল প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে রাখতে সক্ষম হয়েছে মাত্র ৩৫৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে প্রতিষ্ঠানটি ৬৪৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকার প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে।
আলোচ্য সময়ে প্রভিশন ঘাটতিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আভিভা ফাইন্যান্স। সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে প্রতিষ্ঠানটির প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৪৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির এখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৯০২ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণের ৭১ দশমিক ৭২ শতাংশ।

এরপরই রয়েছে জিএসপি ফাইন্যান্স। সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে এ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রভিশন ঘাটতি ৩১৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এছাড়া প্রিমিয়ার লিজিংয়ের প্রভিশন ঘাটতি ১৪৭ কোটি, ফার্স্ট ফাইন্যান্সের ১৩৪ কোটি, বে লিজিংয়ের ৯৩ কোটি, হজ্জ ফাইন্যান্সে ৬৮ কোটি, আইআইডিএফসি ৪৬ কোটি, ফিনিক্স ফাইন্যান্সের ২১ কোটি এবং মেরিডিয়ান ফাইন্যান্সের প্রভিশন ঘাটতি সাত কোটি ৬৭ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ১০টি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি দুই হাজার ২২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংক খাতে নজরদারি করতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে ঠিকভাবে নজর দিতে পারছে না। এ সুযোগে অনেকেই এসব প্রতিষ্ঠানকে লুট করছে। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নজরদারি বা পরিদর্শন বাড়াতে হবে। যেসব গ্রাহক ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছে না তাদের সুযোগ না দিয়ে আইনের আওতায় আনতে হবে। এককথায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও কঠোর হতে হবে। 

তথ্য অনুযায়ী, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় খেলাপি ঋণ বেড়েছে এক হাজার ৭০৭ কোটি টাকা বা ২ শতাংশ। ফলে সেপ্টেম্বর শেষে মোট খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৬৫৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ২৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। জুন শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ছিল ১৯ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা, যা ওই সময়ে বিতরণ করা মোট ঋণের ২৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় খেলাপির পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা, যা ছিল ওই সময়ের মোট ঋণের ২৫ শতাংশ।


 

Link copied!