জানুয়ারি ১৬, ২০২৪, ১১:৫৪ পিএম
- আন্দোলন থেকে পিছু হটেনি বিএনপি-জামায়াত কূটনৈতিক সমর্থন আদায় করে যে কোনো সময় চূড়ান্ত নির্দেশনা
- একতরফা নির্বাচনে আ.লীগ ও একটি দেশের সরাসরি ভূমিকা কী ছিল, তা জাতির সামনে উপস্থাপনে বিএনপি সফল
- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সরকারকে সমর্থন দেয়নি
- নামকাওয়াস্তে ব্যানারসর্বস্ব দলের ওপর ভরসা না করা রাজনৈতিক শক্তিশালী দলকে গুরুত্ব দিতে তৃণমূলের আহ্বান
ঘরে আন্দোলনের ফসল ওঠেনি বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে। তবুও বিএনপি-জামায়াতের হাইকমান্ডের ওপর দৃঢ় আস্থা রেখেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে হাল ছাড়েনি বিএনপি-জামায়াত জোট। অতীতে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে হাইকমান্ডের ওপর মাঠ পর্যায় থেকে ক্ষোভের আবহ দেখা গেলেও এবার দ্বাদশ সংসদে ভিন্ন অবস্থান দেখা গেছে। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক ও বিভিন্ন মহল থেকে লোভনীয় প্রস্তাব এলেও কেউ ফাঁদে পা দেয়নি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে কথা হয় মুন্সীগঞ্জ থেকে আসা যুবদল নেতা এনায়েত শাওনের সঙ্গে।
তিনি বলেন, গত তিন মাস ধরে তিনি এলাকায় যেতে পারেন না। বাড়িতে একাধিকবার পুলিশ হানা দিয়েছে। আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপির বড় রোডম্যাপ ছিল। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অনলাইনে তাদের সঙ্গে সরাসরি মিটিং করেছেন। আন্দোলন এবং সরকার পতনের অবস্থান থেকে বিএনপি সরে যায়নি। সরকার বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে গুম-খুনের পরিকল্পনা করেছিল। এছাড়া হাইকমান্ড থেকে বার্তা দেয়া হয়েছে শেষবেলায় এসে ক্ষমতাসীন দল গুপ্তহত্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। তাই নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা ও আন্দোলনের মুখ্য সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। এই নেতা আরও বলেন, বিএনপি এবার শুধু একটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি, একটি দেশের সঙ্গেও লড়াই করেছে। আওয়ামী লীগকে সামনে রেখে একটি দেশ কীভাবে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করেছে, তা শুধু বিএনপি নেতাকর্মীরা নন— দেশের সাধারণ মানুষের কাছেও স্পষ্ট।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান আমার সংবাদকে বলেন, বিএনপি আন্দোলনে যাওয়ার পূর্ণ পরিকল্পনা ছিল। এই সরকার যখন সংলাপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের চিঠিকেও উপেক্ষা করল, তখন বিএনপিকে রাজনৈতিক কিছু কৌশলে যেতে হয়েছে। আর এতে বিএনপি সফলও হয়েছে। ক্ষমতাসীন সরকারকে কূটনৈতিক সব নিয়ম ভঙ্গ করে কারা সহযোগিতা করেছে, এগুলো স্পষ্ট হয়ে গেছে। দেশের অন্তত ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি, তা প্রকাশিত হয়ে গেছে। যাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে— এমন শক্তিশালী কোনো দেশ আর বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে নেই। পশ্চিমারা এখনো তাদের অবস্থান বদলায়নি। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক বড় সংস্থাগুলো সরকারকে সমর্থন দেয়নি। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান থেকে সরে যায়নি। এগুলো বিএনপির জন্য পজিটিভ। সামনে কূটনৈতিক তৎপরতা ও আন্দোলন সফলে বিএনপির জন্য পূর্বের চেয়ে বেশি সহজ হবে।
একটি জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আমার সংবাদকে বলেন, ভারত-চীনসহ কিছু দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতায় বিএনপির ব্যর্থতা ছিল, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের বাদ দিয়ে আগামীতে বিশ্বাসী ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের বাছাই করা খুবই জরুরি। এছাড়া নামকাওয়াস্তে ব্যানারসর্বস্ব দলের ওপর ভরসা করাও কিছু ভুল ছিল। যাদের নেতাকর্মী নেই, সারা দেশে সাংগঠনিক অবস্থান নেই, তাদের ওপর নির্ভর করাও ঠিক নয়। এখন সবকিছু ভুলে গিয়ে আন্দোলন করার মতো যাদের শক্তি রয়েছে, সারা দেশে নেতাকর্মী রয়েছে, তাদের অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। এই নেতা বলেন, জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে এখন আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। যারা জামায়াতের বিরোধিতা করে, তাদের শক্তি কী, তারা কোনো দেশের পন্থি কি না, কারো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে কি না— এখন এসব দলের নীতিনির্ধারকদের খুঁজে বের করা আবশ্যক।
জামায়াতের নির্বাহী কমিটির এক সদস্য আমার সংবাদকে বলেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির কোনো দূরত্ব নেই। বিএনপি যদি জামায়াতকে দূরে সরিয়ে রাখে, সেটি তাদের একান্ত রাজনৈতিক বিষয়। দেশের স্বার্থে, রাজনৈতিক ভবিষ্যতের স্বার্থে বিএনপি যদি জামায়াতকে পাশে চায়, এক সঙ্গে এক মঞ্চে কর্মসূচির আহ্বান করে, তাহলে জামায়াতের নীতিনির্ধারণী ফোরাম অবশ্যই সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেবে বলে জানান তিনি। এবার আন্দোলনে বিএনপি সঠিক পথেই ছিল। জামায়াতও বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে সঠিক পথে রয়েছে বলে এই নেতার ভাষ্য। তৃণমূল নেতারা এখন একটি নির্দেশনা ও কূটনৈতিক মিশনের সফলতার দিকেই চেয়ে আছে বলেও তিনি যোগ করেন।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আমার সংবাদকে বলেন, এবার তৃণমূল থেকে সারা বিশ্ব এই স্বৈরশাসকের চূড়ান্ত রূপ দেখেছে। এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনে বিএনপিসহ জোট নেতারা ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। এবার দাবি আদায় করেই আমরা ঘরে ফিরব। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তেমন নির্দেশনাই দেবেন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান আমার সংবাদকে বলেন, এই সরকারকে নিয়ে আমরা যে বার্তা দিতে চেয়েছি, তাতে আমরা সফল হয়েছি। দেশের মানুষ এখন জানতে পেরেছে আওয়ামী লীগের রূপ কী। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত আছে। আমরা সমমনা জোটগুলোর সঙ্গে আলোচনা-পর্যালোচনা করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।