জানুয়ারি ২৩, ২০২৪, ১২:০৩ এএম
- চার জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ
- ৯.৮ ডিগ্রিতেও বন্ধ হয়নি যশোরে
- শীতে প্রাথমিক স্কুলে ক্লাস শুরু সকাল ১০টায়
সারা দেশে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। জেলাগুলো ১০ ডিগ্রি নিচে তাপমাত্রা গেলেই বিদ্যালয় বন্ধ করছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক অধিদপ্তরের নির্দেশনা মেনে অধিকাংশ জেলা অগ্রিম আবহাওয়া বার্তা দেখে স্কুল বন্ধের নোটিস দিতে পারছে। যদিও বিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্তে প্রথম দিকে এলোমেলো দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসে জানতে পারে আজ ক্লাস হবে না। স্কুলের সঙ্গে জেলা শিক্ষা অফিসের সমন্বয় ঘাটতি ছিল। এখনো কয়েকটি জেলায় সেই সমন্বয় তৈরি হয়নি। জানা যায়, নীলফামারীতে তাপমাত্রা ছিল ৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সৈয়দপুর ও ডিমলা আবহাওয়া অফিসে এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাওয়ায় জেলার সব মাধ্যমিক বিদ্যালয় দুই দিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলার ৭৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও বন্ধ থাকবে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হাফিজুর রহমানের স্বাক্ষরিত এক আদেশ জারি করা হয়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক ও আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২২ ও ২৩ জানুয়ারি নীলফামারী তাপমাত্রা ৮.৮ ডিগ্রির নিচে থাকায় এ দুদিন জেলার সব মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হলো। অন্যদিকে নীলফামারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এম এ শাহাজাহান সিদ্দিকী জানান, জেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ থাকবে সোমবার। তবে মঙ্গলবার আবহাওয়া দেখে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। একই কথা জানান সৈয়দপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জাকির হোসেন সরকার।
নাটোরের তাপমাত্রা ছিল ৯. ৫০ ডিগ্রি। ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসায় সোমবার নাটোর জেলার সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম নবী। তিনি বলেন, নাটোর জেলায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে আসায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস একযোগে সোমবারের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা শিক্ষা অফিসার মো. শাহাদুজ্জামানও রাতে অপর এক পত্রে নাটোরের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসায় জেলার সব মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা বন্ধ রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
নাটোর জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা বলেন, নাটোরে আবহাওয়া অফিস নেই। তাই পার্শ্ববর্তী ঈশ্বরদী রাজশাহী ও নওগাঁর আবহাওয়া অফিস থেকে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে দেয়া তথ্য অনুযায়ী রোববারের তাপমাত্রা ছিল ৯.৫০ ডিগ্রি ছিল। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসায় সোমবার এক দিনের জন্য ক্লাস স্থগিত করা হয়। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামায় পাবনার সব মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুল বন্ধ করা হয়েছে।
সোমবার পাবনায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। জেলা শিক্ষা অফিসার রোস্তম আলী হেলালি জানান, মাউশির নির্দেশনা অনুযায়ী তীব্র শীতের কারণে এবং তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে যাওয়া জেলার ৫২৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাবনার ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক নাজমুল ইসলাম জানান, সোমবার সকাল ৯টায় এখানে ৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। রোববার ছিল ৯.৫ ডিগ্রি।
বগুড়ায় গতকাল সকালে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হওয়ায় সব মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আগে ঘোষণা না দেয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এসে অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর ফিরে যান। তবে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন, মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। আবার সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন, একাডেমিক কার্যাক্রম বন্ধ থাকবে। দুটি প্রতিষ্ঠানের আলাদা সিদ্ধান্তে অভিভাবকরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
৯.০৮ ডিগ্রি যশোরে, বন্ধ হয়নি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
যশোরে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমেছে। এরপরও জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। যশোর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, সোমবার যশোরে বাতাসের আর্দ্রতা রয়েছে ৯৫ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.০৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র শীতের মধ্যেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় অভিভাবকরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। গতকাল সকালে যশোর জিলা স্কুল, কালেক্টরেট স্কুল, যশোর ইনস্টিটিউট স্কুলসহ বেশ কয়েকটি স্কুল ঘুরে দেখা গেছে, সেখানকার প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা রয়েছে।
উপজেলা পর্যায়েও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানেও এখন পর্যন্ত কোনো স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি। সকালে তীব্র শীত উপেক্ষা করে শিশুদের স্কুলে নিয়ে আসেন অভিভাবকরা। রবিউল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, হাড়কাঁপানো শীতেও স্কুল খোলা রয়েছে। সকালে সন্তানকে স্কুলে নিয়ে এসেছিলাম। এখন নিতে এলাম। এত ঠাণ্ডায় খুবই কষ্ট হচ্ছে। খোলা থাকলে, ক্লাস মিস দিলে সমস্যা। তাই বাধ্য হয়েই আনা। অভিভাবক বিপ্লব রায় বলেন, ঠাণ্ডার মধ্যে সন্তান স্কুলে চলে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। এ জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও বিপাকে পড়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নিলে ভোগান্তি কম হতো।
মোতাহার হোসেন নামে এক স্কুলশিক্ষক বলেন, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির কম হলেও পাঠদান বন্ধের কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি। এ জন্য পাঠদান চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে যশোর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুল হোসেন জানান, খুব সকালে তাপমাত্রা ১০-এর নিচে নেমেছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমাদের স্কুলের সময় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এ সময় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির বেশি রয়েছে। তারপরও আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে যদি কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়, তাহলে স্কুলগুলোকে জানিয়ে দেয়া হবে।
শীতে প্রাথমিক স্কুলে ক্লাস শুরু সকাল ১০টায়:
চলমান শৈত্যপ্রবাহের কারণে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হবে সকাল ১০টায়। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এ নির্দেশনা বহাল থাকবে বলে জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া যেসব জেলায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামবে, সেসব জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার নির্দেশনাও বহাল থাকবে।
গতকাল সোমবার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ কবির উদ্দীন স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সারা দেশে চলমান শৈত্যপ্রবাহের কারণে শিক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা বিবেচনায় সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সকাল ১০টায় শুরু হবে। এ ছাড়া যেসব জেলায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামবে সেসব জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা বহাল থাকবে।