সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া
জানুয়ারি ২৬, ২০২৪, ১১:২১ পিএম
সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া
জানুয়ারি ২৬, ২০২৪, ১১:২১ পিএম
বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কোনোভাবেই স্বস্তি
ফিরবে না
—অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার এসেছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা মোতালেব হোসেন। মাছ বাজার ঘুরে সবজির বাজারে ঢুকেছেন। শীতকালীন নানান সবজির পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। সবজি কিনতে গিয়েই মোতালেব হোসেন মেজাজ হারালেন। দোকানির সাথে শুরু হলো তার বাগ্বিতণ্ডা। আমার সংবাদের এ প্রতিবেদক জানতে চান তাদের বাগ্বিতণ্ডার কারণ। প্রথমে জানতে চাই মোতালেব হোসেনের কাছে, তিনি কি কারণে মেজাজ হারালেন।
তিনি জানান, শীতকালীন সব সবজির দাম বেশি। আমি দোকানিকে বললাম আপনারা সিন্ডিকেট করে সব সবজির দাম বাড়িয়েছেন। এতেই দোকানদার আমাকে আজেবাজে কথা বলতে শুরু করলেন। আমার সংবাদের কথা হয় দোকানির সাথেও। তিনি জানান, তার সাথে বাগ্বিতণ্ডার কারণ। তিনি বলেন, শীতকালীন সবজির এখন মৌসুম চলছে। কিন্তু আমাদের কী করার আছে। আমাদের কিনতেও হয় বেশি দিয়ে বিক্রিও করতে হয় নিজের লাভের কথা চিন্তা করে। তিনি এসে আমাদের সিন্ডিকেট বলতে পারেন না। আমরা পাইকারি কিনে খুচরা বিক্রি করি। আমরা সিন্ডিকেট করব কিভাবে।
কারওয়ান বাজারে মুদি মালামাল কিনতে এসেছে রোকসানা ইসলাম। তার সাথে কথা হয় আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, আমি প্রায় ২০ বছর এখানে বাজার করি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এমন ঊর্ধ্বগতি আগে কখনো দেখিনি। কোনো পণ্য ২০ থেকে ৩০ টাকা দাম বাড়লে কমে পাঁচ থেকে ১০ টাকা। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই বলেই এমন হচ্ছে। প্রয়োজনের চেয়ে পরিমাণে কম কিনে কোনোভাবে জীবন ধারণ করাই যেন এখন দায়। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা, এক ডজন ডিম ১৩৫ টাকা, আলু ৪৫ টাকা, টমেটো ৭৫ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা পিস, সয়াবিন তেল লিটার ১৮৫ টাকা, পেঁয়াজ ৮৫ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে। এসব পণ্যের দাম গত সাপ্তাহেও পণ্য ভেদে ১০ থেকে ১৫ টাকা কম ছিল।
মাছ মাংসের বাজারে দেখা যায়, রুই মাছ এক কেজি পরিমাণ বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৮০ টাকায়। সাপ্তাহ ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম বাজার ভেদে পাঁচ থেকে ১৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা ধরে। গরুর মাংসের দাম নিয়ে নতুন করে আবারো নৈরাজ্য সৃষ্টি হতে দেখা গেছে। এক মাস আগে মাংস বিক্রেতা ও খামারিরা বসে গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন ৬৫০ টাকা। বছরের শুরুতেও এমন দামে বিক্রি হলেও জাতীয় নির্বাচনের পর আবারো লাগামহীন গরুর মাংসের দাম। বাজার ঘুরে দেখা যায়, কোথাও বিক্রি হচ্ছে না ৬৫০ টাকা কেজি গরুর মাংস। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি ধরে।
এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের কয়েক দফা বৈঠক হলেও বাজার পর্যায়ে এখনো তেমন সুফল মিলছে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, সর্বশেষ গত ডিসেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। চলতি মাসে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। মানুষকে অতিরিক্ত দামে খাদ্য ক্রয় করতে হচ্ছে। উচ্চমূল্যস্ফীতি মানুষের জীবন ধারণে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বাজার অব্যবস্থাপনা ও ঊর্ধ্বমুখী প্রভাব নিয়ে আমার সংবাদের এ প্রতিবেদক কথা বলেন বাংলাদেশ অর্থনীতির সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলামের সাথে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে যেসব পণ্যের দাম একবার বাড়ে তা বিশ্ববাজারে কমলেও আমাদের এখানে কমার কোনো প্রবণতা দেখা যায় না। দেশের বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সিন্ডিকেট অতিমুনাফা বাজার থেকে তুলে নেয়। পণ্যের দামও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে এখানে বাজার অর্থনীতি তেমন একটা কাজ করে না। আমাদের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজে ঘাটতি আছে। মানুষের আয়ের সাথে ব্যয়ের বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। অনেকে সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন। সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।